লেখক, রফিকুল ইসলাম ভুলুঃ
অনেক দিন পর নদীর ধারে বসে, বাহিরের আবহাওয়া দেখে হঠাত মনে পড়ে গেলো পুরোনো দিনের স্মৃতি । গ্রাম বাংলার নৌকা ভ্রমণের সেই দিন গুলোর কথা । কেউ বলে ছইয়া নৌকা আবার কেউ বলে কেড়াইয়া নৌকা ।
নদীতে হালকা বাতাসে ভাঙা-ভাঙা ঢেউয়ের প্রলেপ । ঢেউয়ের মাঝে নৌকা দোলার সঙ্গে, শরীর ও মনের দোলায় শিহরণ জাগে আবেগ ভরা মনে এবং প্রকৃতির মনোরম দৃশ্যে আনন্দ বয়ে যায় হৃদয় মাঝে ।
খোলা আকাশে ধূসর রঙে নীলের মিশ্রন আর মেঘলা আবহাওয়ার ভাব । পরোক্ষনেই নেমে এলো মুশল ধারে বৃষ্টি । সে-কি এক অপরূপ দৃশ্য । মাঝি মাতলা পড়ে ভিজে ভিজে নৌকা বাইছে । টুপ-টুপিয়ে বৃষ্টি ঝরছে আর বৃষ্টির ঐ মিষ্টি সুরে মাঝি গুন গুনিয়ে গান গাইছে ।
এরই মাঝে মেঘের ফাঁকে ফাঁকে সূর্যের আলো উঁকি দিয়ে, রঙ ধনুকে সাজিয়ে দিলো ঐ দূর আকাশে । হালকা রৌদ্র, হালকা বাতাস । মাঝির গায়ের কাপড় শুকাচ্ছে । চারিদিকে সবুজের আবরণ । দূর গ্রামের মাইক থেকে ভেসে আসছে এলোমেলো বাতাসে, ভাঙা ভাঙা গানের আওয়াজ ।
”পদ্মার ঢেউ———–রে”———— ।
সময় গড়িয়ে ক্ষুধা নিবারণে খাবার পরিবেশন । বৌ ভাত অর্থাত গ্রামীন ভাষায় বলে বৌয়া । না ভাত, না পোলাও, না খিচুরি, না বিরিয়ানি । তবে খুব মজার খাবার । তরকারী ছাড়াই খাওয়া চলে । কালো ধানের, লাল রঙের আউশের চাল, তৈল, পিয়াজ, রসুন, শুকনো মরিচ আর হালকা হলুদের গুড়া এবং সামান্য লবন মিশিয়ে পাকানো । অর্থাত চলন্ত পথে সে এক মজাদার খাবার । সাথে আবার ডিম ভাজাও ।
চলতে চলতে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত । মাঝি নৌকা বাইছে । বৈঠার আঘাতে পানির ছলাৎ ছল শব্দ কানে শুনতে ভালোই লাগছিলো । নৌকার অগ্রভাগে একটি বাতি জ্বালিয়ে চলছে মাঝি । অন্যদিকে অন্ধকার রাতে আকাশের তারা গুলো মিট মিটিয়ে জ্বলছে । ক্লান্ত দেহ, হিমেল হাওয়া ।নৌকায় বিছানো শিতল পাটিতে নিজেরাই অজান্তে ঘুমিয়ে পড়া ।
হঠাত করে মনে হলো যেনো, একটি স্বগীয় ঘুম থেকে জেগে উঠা । কিযে আত্ম-তৃপ্তি আর কিযে আনন্দ যা বর্ননাতীত । আর কি ফিরে পাবো সেই দিনগুলো, যা হারিয়ে গেছে জীবন থেকে ? যাহা শুধু স্মৃতি চারণে জেগে উঠা ।
মানুষের চক্ষু ক্যামেরা দিয়ে মনের পর্দায় যাহা কিছু ধারণ করা হয়ে থাকে, যুগের পর যুগ, এমনকি শতো বছর পরেও যেনো অবিকল দৃশ্য বহমান । জীবন চলার পথে, সুখ-দুঃখের সকল ঘটনা মস্তিষ্কে ধারণকৃত কার্যক্রমের উপলব্ধি স্মরণে আসা, সে এক রহস্যে ঘেরা অদৃশ্য বাস্তবতা । যেমন স্বপ্ন একটি অদৃশ্য বাস্তবতা ।