উত্তম চক্রবর্তী,মণিরামপুরঃ
ভ্রাম্যমাণ চা-বিক্রেতা অমাল। সকাল থেকে সন্ধ্যা কিংবা রাত-যখনই ফোন দেবেন আপনার কাছে পৌঁছে যাবে অমালের চা। তাও পায়ে হেঁটে। দুটি হাতে ফ্ল্যাক্স। কাছে থাকা ব্যাগে থাকে ওয়ান টাইম কাপ, চিনি। ফোন পেয়ে মণিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জ বাজারের অলিগলিতে এভাবেই চা নিয়ে হাজির হচ্ছেন ভ্রাম্যমাণ চা-বিক্রেতা অমাল। এতে একদিকে সময়ও বেচে যায় আবার চা-পানের নেশাটাও কাটানো যায়। রাজগঞ্জের ঝাঁপা গ্রামে স্ত্রী আর এক সন্তানকে নিয়ে অমালের সংসার। গত করোনার সময় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয় তার চায়ের দোকান। বেচাবিক্রি একদমই কমে যায়। এতে করে সংসার সামলানো ও ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ মেটানো সম্ভব হচ্ছিল না। তখন উপার্জনের ভাবনা থেকেই এক ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগ নেন অমাল। কিছু গচ্ছিত আর ধার করা টাকা দিয়ে বাড়ি থেকে হেঁটে হেঁটে দুটি ফ্ল্যাক্স সংগ্রহ করে নেমে পড়েন চা বিক্রির কাজে। চা বিক্রিতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগে এরইমধ্যে মানুষের নজর কেড়েছেন অমাল। নির্দিষ্ট কোনো দোকান না থাকায় ফেরি করে চা বিক্রি করেন তিনি। তবে ফেরি করে চা বিক্রির ধরন অনেকটাই ভিন্ন। তার চায়ের চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক। চা বিক্রেতা অমাল বলেন, যারা আমার তৈরি চা পান করেন তাদের বেশিরভাগই দোকানি ও ব্যবসায়ী। সময়ের অভাবে তারা তাদের প্রতিষ্ঠান ফেলে চা পান করতে কোথাও যেতে পারেন না। তাই ফোন করে বললে চা নিয়ে হাজির হয়ে যাই। প্রতিদিন চা বিক্রি করে দিনে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা আয় হয়। ওই টাকায় সংসারের খরচসহ ছেলের পড়ালেখার খরচ চালান তিনি। অমালের স্বপ্ন চা বিক্রির টাকায় সন্তানের অনেক বড় বানাবেন। তাঁর ছেলে স্থানীয় ঝাঁপা পূর্ব পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। রাজগঞ্জ বাজারের তেল ব্যবসায়ী বাসুদেব। তিনি বলেন, দোকান ফেলে চা পান করতে যাওয়ার সময় হয় না। তাই ফোন করলে অমাল দাদা চা দিতে চলে আসেন। এতে আমার সময় বেচে যায়। তাছাড়া তার চায়ের মানও অনেক ভালো। বাজারের মুদি ব্যবসায়ী শুকুমার বলেন, এটা একটা ভিন্নধর্মী উদ্যোগ। যখনই চায়ের প্রয়োজন পড়ে আমরা অমালকে ফোন দিই। সে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে চা পরিবেশন করে। বাজারের মাতৃ ষ্টীর ফার্নিচার ব্যবসায়ী সুমন দাস বলেন, অমাল দাদার চা বিক্রির ব্যতিক্রমী উদ্যোগ আসলেই প্রশংসার দাবিদার।