মোঃমোখলেছুর রহমান জয়, গাজীপুর প্রতিনিধিঃ
গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক তিন আসামিকে নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১১। গতকাল রাতে বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীতে র্যাব-১১ ব্যাটালিয়ন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানভীর মাহমুদ।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত গ্রেপ্তার তিন আসামি হলেন নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার নয়াগাঁও এলাকার মোসাদ্দেক আলী (৩২), মো. জাকারিয়া (৩২) ও মুন্সিগঞ্জ জেলা সদরের চরমুক্তারপুর এলাকার জুলহাস দেওয়ান।
সংবাদ সম্মেলনে তানভীর মাহমুদ বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৬ আগস্ট বিকেলে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে থাকা বন্দীরা বিদ্রোহ করেন। এ সময় তাঁরা কারাগার ভেঙে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন এবং কারারক্ষীদের ওপর চড়াও হন। তাঁরা কারাগারের দক্ষিণ অংশের দেয়াল ভেঙে গর্ত করতে থাকলে তা প্রতিহত করা হয়। একপর্যায়ে কারা অভ্যন্তরের বৈদ্যুতিক খুঁটিকে মই হিসেবে ব্যবহার করে পশ্চিম পাশের দেয়াল টপকে ২০৩ জন বন্দী পালিয়ে যান। এ সময় কারারক্ষীদের গুলিতে ছয়জন বন্দী মারা যান। এ ঘটনার পর পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা নজরদারিসহ তদন্ত শুরু করে র্যাব। এর ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার রাতে আড়াইহাজারের পাঁচরুখী এলাকা থেকে মোসাদ্দেক আলী ও জাকারিয়াকে এবং মুন্সিগঞ্জ জেলা সদরের চরমুক্তারপুর এলাকার জুলহাস দেওয়ানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মোসাদ্দেক আলী ও জাকারিয়া নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের একটি হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। আর জুলহাস দেওয়ান মুন্সিগঞ্জে নিজের শিশুসন্তান কে হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যাসহ পাঁচটি মামলা বিচারাধীন।
র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার মোসাদ্দেক ও জাকারিয়া জানান, ২০০৮ সালে আড়াইহাজার থানার নয়াগাঁও এলাকায় বারেক চৌধুরী নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে হাঁস-মুরগি চুরির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বারেক চৌধুরীর বাড়িতে একটি সালিস হয়। সালিসে শামীম ভূঁইয়া (৪১) নামের একজন এবং তাঁরা দুজন (মোসাদ্দেক ও জাকারিয়া) চুরির সঙ্গে জড়িত বলে একই গ্রামের মো. শামীম সাক্ষ্য দেন। চুরির ঘটনায় সাক্ষী হওয়ার কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে ২০০৮ সালের ২৯ মার্চ মো. শামীমের হাত-পা বেঁধে গলা কেটে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ২০১৩ সালের ১২ জুন জেলা ও দায়রা জজ আদালত তাঁদের দুজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। তাঁরা কাশিমপুর কারাগারে বন্দী ছিলেন।
জিজ্ঞাসাবাদে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মো. জুলহাস দেওয়ান জানান, ২০১৪ সালের ১৩ অক্টোবর নিজের পাঁচ বছরের ছেলে সাহাদকে হত্যা করেছেন। তিন দিন পর ১৬ অক্টোবর কয়লাঘাট এলাকা থেকে তাঁর ছেলের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় তাঁর স্ত্রী তানিয়া বেগম বাদী হয়ে মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় হত্যা মামলা করেন। ওই মামলায় ২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর মুন্সিগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ তাঁকে (জুলহাসকে) মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে।