জয়ন্ত সাহা যতন, চিলমারী থেকে ফিরে– কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারীতে ব্রহ্মপুত্র নদের ঘাটে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অষ্টমীর স্নান উৎসব সম্পূর্ণ হয়েছে। মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল)ভোরে স্নান শুরু হয়ে বিকেল পর্যন্ত চলে বলে জানিয়েছেন পুণ্যার্থীরা।
কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে প্রতিবছর চৈত্রমাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে এ স্নান অনুষ্ঠিত হয়। ঐতিহ্যবাহী স্নান ও মেলা রাজারভিটা এলাকায় পুণ্যতোয়া নদীর তীরে হয়। প্রায় ৪০০ বছর ধরে চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে পুণ্যস্নান সম্পন্ন করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। চিলমারীর ব্রহ্মপুত্র নদের রাজারভিটা এলাকাটি তীর্থস্থান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রতিবছর লাখো পুণ্যার্থী ব্রহ্মপুত্রের তীরে জড়ো হন। প্রতিবেশী দেশগুলো থেকেও অনেক ভক্ত যোগদান করে।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অধিকাংশ মানুষ পরিবারের সকলকে নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চিলমারীর ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে জড়ো হতে থাকে। গত বছরের তুলনায় চিলমারীতে এবারের অষ্টমী স্নানে রেকর্ড পরিমাণ পুণ্যার্থী অংশ নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
বড় বড় কোচ, মাইক্রোবাস, ভ্যান গাড়ি, অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, নৌকা, নসিমন-করিমনসহ বিভিন্ন প্রকার যানবাহনে পুণ্যার্থীরা চিলমারী ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে জড়ো হয়েছিল।
পুণ্যস্নানে অংশ নেয়া সুধীরচন্দ্র বলেন, এবারে পুণ্যস্নান মঙ্গলবার হওয়ায় পুণ্যার্থীর সংখ্যা অন্য যে কোনো বছরের চেয়ে দুই তিন গুণ বেশি। স্নান উৎসবকে ঘিরে ঘাট এলাকার বিশাল এলাকাজুড়ে দোকানিরা মাছসহ নানা রকমের পণ্যের নিয়ে পসরা সাজিয়ে বসেছে।
এদিকে, পুণ্যার্থীদের স্নান নির্বিঘ্ন করতে স্থানীয় প্রশাসন নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোড়দার করার পাশাপাশি পুণ্যার্থীদের পোষাক পরিবর্তনের জন্য পর্যাপ্ত বুথসহ অস্থায়ী লেট্রিনের ব্যবস্থা করেছে।
পুণ্যার্থীদের অনেকেই জানান, পরশুরাম ব্রহ্মপুত্রের ত্রিধারায় গোসল করে মাকে হত্যার পাপ মোচন করেছিলেন। সেই থেকে তাকে অনুসরন করে পাপ মোচনের জন্য বছরের নিদিষ্ট দিনে এখানে স্নান করেন তারা।
চিলমারী উপজেলা প্রশাসন জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পুণ্যস্নান নির্বিঘ্ন ও সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বিশেষ করে পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজরদারি রাখা হয়েছে।
এবার স্নানের জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে চিলমারীর রমনা মডেল ইউনিয়নের রমনা ঘাট থেকে জোড়গাছ ঘাটের মধ্যবর্তী স্থানে নন্দির মোড় এলাকায়। ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ের ২ কিলোমিটারেও বেশি জায়গা জুড়ে এ উৎসব পালন করা হয়েছে।