বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার সম্পর্ককে ‘প্রতিবেশী কূটনীতির রোল মডেল’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সন্ধ্যায় গণভবন থেকে ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত ‘জি২০ লিডার্স সামিট ২০২৩’-এ বক্তৃতাকালে বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে তিনি এ কথা বলেন। বন্ধুত্বপূর্ণ সংলাপের মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সব সমস্যার সমাধান সম্ভব বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ বিশ্বের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমি আনন্দিত যে গত এক বছরের জি২০ প্লাটফর্মে আমাদের আন্তরিক আলোচনা, বিশেষ করে নেতাদের এ শীর্ষ সম্মেলন আমাদের মধ্যে উদ্দেশ্য ও দায়িত্ববোধের সঞ্চার করেছে।
জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি ফলপ্রসূ হবে এবং এটি বাস্তব পদক্ষেপে রূপান্তরিত হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন শেখ হাসিনা। এ সময় জি২০ প্রেসিডেন্সির সফল পরিচালনার জন্য নরেন্দ্র মোদি ও ভারতকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান তিনি।
প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের চমৎকার সুসম্পর্কের’ প্রতি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে শেখ হাসিনা বলেন, যা “প্রতিবেশী কূটনীতির রোল মডেল’’ হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রতিবেশীরা অবশ্যই বন্ধুত্বপূর্ণ সংলাপের মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান করতে পারে। আমরা আমাদের সমুদ্রসীমা ও স্থল সীমানা মীমাংসার মাধ্যমে তা প্রমাণ করেছি।
আমাদের বিশ্ব-পরিবারের সবার সুস্থতা নিশ্চিত করা সবার কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেই চেতনায় আমি বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারের ১ মিলিয়নেরও বেশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত নাগরিককে (রোহিঙ্গা) প্রত্যাবাসনে আপনাদের আন্তরিক সমর্থন চাই।
গত সেপ্টেম্বরে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত জি২০ নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনের ফলাফলকে এগিয়ে নিতে গতকালের শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, জি২০ নয়াদিল্লি নেতাদের ঘোষণা গ্লোবাল সাউথের প্রকৃত উদ্বেগ ও সমস্যাকে প্রতিফলিত করে। আমি আনন্দিত যে নেতারা নয়াদিল্লিতে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে, বিশেষ করে যেগুলো জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা, প্রযুক্তি রূপান্তর, ডিজিটাল পাবলিক অবকাঠামো ও নারী নেতৃত্বাধীন উন্নয়নের সঙ্গে সম্পর্কিত, উন্নয়নের বিভিন্ন চাহিদা পূরণে বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংকগুলোকে শক্তিশালী করতে সম্মত হয়েছেন। একটি উন্নত ভবিষ্যতের জন্য এটি অপরিহার্য।
সরকারপ্রধান বলেন, গত ১৫ বছর বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এ সময়ের মধ্যে দারিদ্র্য ২০০৬ সালে ২৫ দশমিক ১ শতাংশ থেকে ২০২২ সালে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। অন্যান্য অনেক কিছুর মধ্যে মাথাপিছু আয় তিন গুণ বেড়েছে।
এ সময় গাজায় ইসরায়েল-হামাসের যুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইউরোপের বর্তমান যুদ্ধজনিত নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার ফলে বিশ্বব্যাপী মানবিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে এবং হচ্ছে। দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে আমরা ফিলিস্তিনে পাঁচ হাজারের বেশি নিরপরাধ-নিষ্পাপ শিশুসহ কয়েক হাজার নারী-পুরুষকে নির্মমভাবে হত্যা করতে দেখছি। এসব জঘন্য হত্যাযজ্ঞ গোটা বিশ্বকে হতবাক করেছে। বিশ্বব্যাপী দুর্দশাকে আরো তীব্র এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে মন্থর করেছে।
বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, মানুষ ও মানবতাকে রক্ষায় সব ধরনের যুদ্ধ ও সংঘাতকে কঠোরভাবে ‘না’ বলুন। এ বিশ্বায়নের বিশ্বে এটা নিশ্চিতভাবেই সহজ।
সরকারপ্রধান বলেন, আমি আজকের শীর্ষ সম্মেলনে উপস্থিত সব সম্মানিত বিশ্বনেতার প্রতি গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির এক সুরে আওয়াজ তুলতে এবং এ যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য অবিলম্বে নির্বিঘ্ন মানবিক ত্রাণ পাঠাতে উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। সৎ প্রতিবেশীসুলভ সুসম্পর্ক গড়ে তোলা ও বিশ্বব্যাপী এর প্রসার একটি ভালো সূচনা হতে পারে।