সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৫৮ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
কালিগঞ্জে গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী মায়ের পুষ্টির উপর দুই দিনব্যাপী প্রশিক্ষন অনুষ্ঠিত গাজীপুর জেলা পেশাজীবী সাংবাদিক পরিষদের আত্মপ্রকাশ প্রকাশিত হচ্ছে ভারত বাংলার যৌথ কাব্যগ্রন্থ বন্দি শালার পাখি জামায়াতের আমীরের আগমন উপলক্ষে গাইবান্ধায় সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় কবিতাঃ অর্থহীন প্রেম রাউজান খলিলাবাদ মদিনাতুল উলুম মাদ্রাসা র ৪৫ তম বার্ষিক মাহফিল সম্পন্ন সেনাবাহিনী শেখ হাসিনাকে দুটি চয়েস দিয়েছিল : মিজা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাহিরপুর ভলিবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত ছয় মাস বন্ধ থাকার পর ধানুয়া কামালপুর স্থল বন্দর দিয়ে পাথর আমদানি শুরু সাতক্ষীরা পৌর নারী সুরক্ষা ফোরামের ত্রৈ-মাসিক সভা অনুষ্ঠিত

ঝালকাঠিতে নিজের কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে গড়ে তুলেছেন ‘সেলুন লাইব্রেরি’

মাসুমা জাহান,বরিশাল ব্যুরোঃ
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২২
  • ১৫৫ বার পঠিত

 

মাসুমা জাহান,বরিশাল ব্যুরোঃ

ঝালকাঠি জেলা শহর থেকে বিচ্ছিন্ন পোনাবালিয়া ইউনিয়ন। সুগন্ধা নদী বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে সদর উপজেলার পোনাবালিয়া ইউনিয়নটি।চারদিকে নদীবেষ্টিত ৯টি গ্রাম নিয়ে গঠিত ঝালকাঠি সদর উপজেলার ৭নং পোনাবালিয়া ইউনিয়ন।স্থানীয় লিটন চন্দ্র শীল পোনাবালিয়া বাজারে পরিচালনা করছেন ‘নগর বাউল হেয়ার কাটিং’ নামে একটি সেলুন।যেখানে দৈহিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি জ্ঞানের বিকাশ এবং বর্ধনেরও ব্যবস্থা রয়েছে।

বিভিন্ন খ্যাতনামা লেখকদের বই সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে ওই সেলুনটিতে।একদিকে সেলুন অন্যদিকে গ্রন্থারের আলো ছড়াচ্ছে।এটি অন্যসব সেলুনের মতো নয় বিধায় সবারই নজর কাড়ে।সেলুনে চুল,দাড়ি কাটাতে গেলেই দেখা যাচ্ছে সামনে থরে থরে সাজিয়ে রাখা আছে বিভিন্ন খ্যাতনামা লেখকের বই। নিজের সেলুনেই তিনি গড়ে তুলেছেন একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার। নিজের কষ্টার্জিত অর্থ জমিয়ে কিনেছেন বিখ্যাত মনীষীদের বই।

রবীন্দ্রনাথ,নজরুল,শরৎচন্দ্রের কালজয়ী সব গল্প,উপন্যাসসহ এখানে রয়েছে দেশ বরেণ্য লেখকদের বই।সেলুনে নরসুন্দরের কাজ করানোর ফাঁকে ফাঁকে অপেক্ষমান লোকদের জন্য অলস সময় না কাটিয়ে জ্ঞান বিস্তারের ব্যবস্থা করেছেন নরসুন্দর লিটন চন্দ্র শীল।সেলুনেই অর্জন করা যাচ্ছে সাহিত্যচর্চা বা নানা বিষয়ে জ্ঞান।সেলুনে দৈহিক সৌন্দর্যের পরিপূর্ণতায় আসা মানুষেরা সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছেন আত্মার খোরাকও।

সেলুনটির মালিক লিটন চন্দ্র শীল জেমস ভক্ত হওয়ায় দোকানটির নাম দিয়েছে ‘নগর বাউল হেয়ার কাটিং’।এলাকায় তাকে নগর বাউল লিটন নামেই সবাই ডাকে।দোকানটি তিনি সাজিয়েছেন ভিন্ন ভাবে।সেলুনের দেয়ালে কবি,লেখক ও মনীষীদের বাণী লিখে রেখেছেন।জাতির জনক বঙ্গবন্ধু, ক্যাথলিক সন্ন্যাসিনী মাদার তেরেসা,দার্শনিক-লেখক-সংগীতজ্ঞ স্বামী বিবেকানন্দ,আধ্যাত্মিক ফকির সাধক লালন সাঁই, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, বামপন্থী বিপ্লবী নেতা মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আবু তাহেরসহ অনেকের ছবি চার দেয়ালে টাঙানো রয়েছে।

ওই এলাকার মানুষ বিষয়টি ইতিবাচক ভাবে নিয়েছেন। এলাকাবাসী লিটনের দোকানকে সেলুন লাইব্রেরি হিসেবে একনামে চেনেন।চুলকাটা ও বই পড়তে আসা চল্লিশোর্ধ বয়সী আব্দুল ওহাব হিরু বলেন,শহর থেকে গ্রামে আসি চুল কাটাতে।এর কারণ এটা একটা মিনি লাইব্রেরি।বই পড়া ছাড়াও এখানে আলাদা একটা স্বাদ পাই। দীর্ঘক্ষণ থাকলেও ধৈর্য্য হারাতে হয় না।বাচ্চাদের খেলার সামগ্রীও আছে সেলুনে।

সেলুনের নিয়মিত পাঠক মো. সালাউদ্দিন মল্লিক বলেন, পড়াশোনা বেশি না করলেও লিটন শীল একজন ব্যতিক্রমী মানুষ,জ্ঞানী লোকের মতো তার মেধা,সেলুন দিয়ে এলাকায় তিনি জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছেন।লিটন সনাতন ধর্মের হলেও এখানে তিনি ইসলামিক বইও রাখেন।আমাদের সন্তানদেরও এই সেলুনে পাঠাই।যেন ওদের মেধার বিকাশ ঘটে।

লিটনের সেলুনে আসা কুলকাঠি শহীদিয়া ইউনিয়ন একাডেমি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. মাইনুল ইসলাম জানায়,আমরা স্কুল শিক্ষার্থীরা অনেকেই বই কিনে পড়তে পারি না।লিটন দাদার সেলুনে এসে বই পড়ার চাহিদা মেটাই। এই ইউনিয়নের কোথাও পাবলিক লাইব্রেরি নেই। এ কারণে সেলুনে এসে বই পড়ি।আমি ও আমার বন্ধুরা এখান থেকে মাঝে মধ্যে বই বাসায়ও নিয়ে যাই।

বিজিবি সদস্য মেহেদী হাসান বলেন, উচ্চ শিক্ষিত না হলেও লিটনের শিক্ষার চেতনা অনেক বেশি, অন্যের জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধিতে লিটনের ভূমিকা এলাকায় প্রশংসনীয়। আমি ছুটিতে বাড়ি আসলে এখান থেকে বই বাড়িতে নিয়ে পড়ি।তবে এখানে আরও বই প্রয়োজন।অনেকের ঘরের সেলফে বই পড়ে আছে, কিন্তু পড়া হয় না।তারা যদি কিছু বই এখানে দিয়ে যায় তাহলে বই গুলো কেউ না কেউ পড়তো।পাশাপাশি সরকারি সংস্থা থেকেও কিছু বই এখানে দিলে এলাকাবাসী উপকৃত হতো।

সেলুনে লাইব্রেরির উদ্যোক্তা নরসুন্দর লিটন চন্দ্র শীল বলেন, ভার্চুয়াল দুনিয়ায় বইয়ের পাঠক কমে গেছে।তাই মানুষের বই পড়ার অভ্যাসটাকে বাড়িয়ে দিতে আমার এই উদ্যোগ। বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী ও একটি কন্যা শিশু নিয়ে আমার সংসার জগৎ। সেলুনের উপার্জন দিয়ে খেয়ে পরে এই নিম্ন আয়ের অর্থের সামান্য একটা অংশ দিয়ে পাঠকদের জন্য বই ক্রয় করি।

নরসুন্দরের ব্যবসা কেন্দ্রে লাইব্রেরি গড়ার স্বপ্ন এলো কীভাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে লিটন বলেন,এটা আমার আত্মতৃপ্তি। বইয়ের মাধ্যমে আমার ইউনিয়ন এবং আমার দেশের কৃষ্টি-কালচার ঐতিহ্য সবাই জানবে, কবি-লেখক ও মনীষীদের চিনবে,স্বাধীনতার ইতিহাস জানবে। বর্তমান প্রজন্মকে বই পড়ার ওপর কিঞ্চিৎ আগ্রহ বাড়াতে পারেলে এ থেকে আমি জাতির কাছে দায়মুক্ত হতে পারবো।

সাংবাদ পড়ুন ও শেয়ার করুন

আরো জনপ্রিয় সংবাদ

© All rights reserved © 2022 Sumoyersonlap.com

Design & Development BY Hostitbd.Com

কপি করা নিষিদ্ধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ।