এস এ আখঞ্জী,তাহিরপুরঃ-
মৎস্য, পাথর, ধান সুনামগঞ্জের প্রান, এই প্রবাদ বাকটি সুনামে সাথে ছড়িয়ে আছে সারা দেশ জুড়ে। প্রবাদ নয়, বাস্তবেই সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা শস্য ভান্ডার হিসাবে খ্যাত। রোপণ করলেই, আশানুরূপ ফলন ফলে, কারণ এখানকার মাটির উর্বরতা শক্তি বেশী, বছরের অধিকাংশ সময় পানির নিচে থাকায় পলি মাটি জমে, অন্য দিকে বিষক্রিয়া ধবংস হয়ে, জমিতে অধিক হারে ফলন ফলে। শুধু মাত্র প্রাকৃতিক দুর্যোগ, খড়া, অতি বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল কিংবা শীলা নামক দুর্যোগের প্রাদুর্ভাব থেকে রক্ষা পেলেই, পাকাঁ ধান গোলায় ওঠে। কিন্তু এবার সকল প্রতিকূলতা পাশকাটিয়ে বাম্পার ফলনে,কৃষক -কৃষাণী’র মুখে হাসি ঝিলিক ফুটে উঠেছে।
এবার কৃষকের মুখে ক্লান্তির ছোয়াঁ নেই। ধানের মৌ মৌ ঘ্রানে প্রাণবন্ত। উত্তপ্ত রৌদ্রকে উপেক্ষা করে, সোনালী ফসল ঘরে তুলতে, ধান কর্তন, মাড়াই, শুকানো কাজে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন হাওর পাড়ের কৃষক- কৃষাণীরা। কষ্টার্জিত রোপণ করা সোনালী ফসলের সাথে জরিয়ে আছে প্রতিটি কৃষক পরিবারের রঙিন স্বপ্ন।
বুধবারে বেশ কয়েকটি হাওরে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার সর্ববৃহৎ দু একটি হাওর বাদে বাকি ছোট ছোট হাওর গুলোর রোপণ করা বোরো ধান, কাটা প্রায় শেষ। আংশিক থাকলেও কয়েক দিনের মধ্যে শেষ হবে বলে জানান স্থানীয় লোকজন। যেমন পালই, গইন্নাকুড়ি ইরাল্লাকোনা ফিংরাদাড়ই সহ অনেক এলাকা। উল্লেখ যোগ্য শনি, মাটিয়ান হাওরে ২০% ধান কাটার বাকি আছে বলে জানান স্থানীয়রা।
উপজেলার গইন্নাকুড়ি হাওর পাড়ের কৃষক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালিক বলেন,
শেখ হাসিনা সরকার, কৃষকের মঙ্গলে, আধুনিক যন্ত্রপাতি হস্তান্তর করেছেন কৃষক জনতার হাতে। ফলে, একদিনেই কয়েক হাল (৩৬৬শত) জমির পাকা ধান, কাটাই-মাইরাই করা সম্ভব হয়েছে। যেমন আমি গইন্নাকুড়ি হাওরে ৪ কেয়ার বি-২৮ ধানের চারা রোপণ করেছি। এবার আশানুরূপ ফসল পেয়েছি, প্রতি কেয়ারে ১৫ মন ধরে ধান হয়েছে। গত তিন-চার দিন আগে, দাওয়া মাড়া শেষ করেছি। আমার হাওরে ধান কাটা প্রায় শেষ। জানামতে অধিকাংশ হাওরে ধান কাটা শেষ প্রান্তে ।
উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের মাটিয়ান হাওরের কৃষক আব্দুর জহুর( সর্দার) বলেন, রোদ- বৃষ্টি ভিজে, দিন -রাত পরিশ্রম করে, এ মৌসুমে ১৫ কেয়ার বোরোধান চাষাবাদ করেছি। সময় মত সার, বীজ, পানি পাওয়ায় এবার ভালো ফলন হয়েছে। সত্যি কথা বলতে , বিধাতা এবার মুখ তোলে চেয়েছেন, যার ফলে সোনালী ফসল আশানুরূপ হয়েছে। সারা বছরের খোরাকী হওয়ায় পরও, অবিশিষ্ট ধান বিক্রয় করতে পারবো।
গেল এক সপ্তাহ আগেও তীব্র খরায় কৃষকের মাথায় চিন্তার ভাঁজ ছিল। সম্প্রতি এক বৃষ্টিতে কৃষকদের রঙিন স্বপ্ন বাস্তবে রুপ নিয়েছে। আশায় বুক বেঁধেছেন তাঁরা।
কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সর্ববৃহৎ হাওর শনিতে ৪৫% মাটিয়ানে ৮৫% আলী হাওরে ৮০% বোরো ধান কাটা শেষ হয়েছে। সর্বমোট ৭০% ধান কাটা শেষ হয়েছে।
উপজেলার বালিয়াঘাট গ্রামের কৃষক আবুল কালাম খানঁ ( পারুল) বলেন, শেখ হাসিনা সরকার, কৃষক বান্ধব সরকার, যার বাস্তব প্রমান, কৃষকদের বিনামূল্যে সার, বীজ, কীটনাশক ঔষধসহ সহযোগিতা করা। ৭০% ভর্তূকি দিয়ে উন্নতি প্রযুক্তির কাটাই, মাইরাই মেশিন বিতরণ করা। এতে কৃষকের দুর্ভোগ লাগব হয়েছে। শ্রমিক সংকট আজ নেই বললেও চলে। না হয়, ১হাজার টাকা দিয়েও শ্রমিক যোগান কষ্ট সার্ধ হত। লেগে থাকত দুর্ভোগ। আমি ৪২ কেয়ার জমি চাষাবাদ করেছিলাম। গত রাত ১২টার সময় ধান কাটা শেষ করলাম। শুধু মাত্র উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি আবিস্কারের কারণে। এসব না থাকলে সন্ধ্যার আগেই, গৃহে আসতে হত। ধান রেখে চলে যেত জমিতে, সব শ্রমিক ফিরে নিজ নীড়ে। সব শেষে এবার ভাল ফলন হয়েছে। আমার উগার ভরে গিয়ে, নামাতে রাখতে হচ্ছে কিছু ধান। আল্লাহ কাছে হাজার শুকরিয়া।
তাহিরপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ হাসান উর দৌলা বলেন, এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। হাওরে ৭০% ধান কাটা শেষ হয়ে গেছে আর সপ্তাহ খানিক সময় পেলেই
আমরা শত ভাগ ধান ঘোলায় তুলতে সক্ষম হব। আশা করি প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে এবার তাহিরপুরে ধানের বাম্পার ফলনের লক্ষমাত্রা অতিক্রম করবে।উপজেলায় ১৭ হাজার ৪২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। সবটুকু ধান তুলতে পারলে ৬৬ হাজার মেট্রিক টন চাউল উৎপাদন হবে । তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা সরকার, কৃষকের জীবন মান উন্নয়নের লক্ষ্যে ৭০% ভর্তূকি দিয়ে ৬০টি ধান কাটার মেশিনসহ মাড়াই কল পৌঁছে দিচ্ছে জন দোরগোড়ায় । এসব উন্নতি প্রযুক্তির মাধ্যমে অতি অল্প সময়ের মধ্যে৷ সোনালী ফসল ঘরে তুলতে সক্ষম হয়েছে হাওর পাড়ের কৃষক। আর সপ্তাহ খানিকের মধ্যে শত ভাগ ধান কাটা শেষ হবে।