এস এ আখঞ্জী,তাহিরপুর প্রতিনিধিঃ-
নতুন ধানের মৌ মৌ ঘ্রানে মোহিত কৃষক -কৃষানি, ক্লান্তি ভুলে, মৃদু হেসেছে, ঝিলিক পড়েছে সর্ব কূলে, সবুজবীথি ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে হলুদের আবরণে সাড়া মাঠ বিস্তৃত ।সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার হাওরাঞ্চলে কৃষকের কষ্টার্জিত রোপণ করা বোরোধানের চারা, যৌবনে পা রেখেছে। আবার কোনো কোনো চকে পরিপূর্ণ, পাকাপোক্ত হওয়ায়, এ মৌসুমের পাকা ধান কাটা শুরু করেছে স্থানীয় কৃষকগণে।
স্থানীয়দের তথ্য মতে জানা যায় উপজেলার শনি, মাটিয়ান, পালই, ইরাল্লিয়াকোনা, গইন্যাকুড়ি হাওরের পাকাপোক্ত বোর ধান কাটছেন প্রখর রৌদ্রের মাঝে, গুনগুন সুরে গাইছেন গান ধান সংগ্রহ কাজে। এসময় স্থানীয় কৃষক মন্দিয়াতা গ্রামের আলী উস্তার বলেন, চৈত্র মাসের মধ্যে গইন্যাকুড়ি হাওরের সব ধান কাটা শেষ হবে, এর মধ্যে চারআনা ধান কাটা শেষ হয়েছে। তিনি আরও বলেন প্রাকৃতিক আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে হাওরের সব ধান গোলায় উঠবে ।
গতকয়েক দিনে আগে শিলাবৃষ্টি আঘাত হেনেছে আমাদের পালই, মাটিয়ান হাওরের কিছু কিছু জমিতে। এতে বেশি ক্ষতি না হলেও, অনেক কৃষকের কপালে বাজ পড়েছে।
কথা হয়, উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়ন যুব দলের সভাপতি জিয়াউর রহমান আখঞ্জী’র সাথে তিনি বলেন আমার জন্মভূমি তরং গ্রামে। আমার বাবা আলী আছকর আখঞ্জী, তিনি
প্রকৃত একজন কৃষক। যিনি সারা বছর কৃষি জমিতে কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পাড় করেন। এ বিষয়টি এলাকা মানুষ অবগত, আমার কথা নয়, যার ফলে আমাদের জমিতে আশা অনুরূপ সোনালী ফসল ফলে। যার ফলে আমরা সবার আগেই ধান কাটতে পারি, কৃষির আয় দিয়েই, একান্নবর্তী পরিবারের সম্পূর্ণ খরচ ব্যয় বার হয়েও সঞ্চয় করতে সক্ষম হন বাবা। এ বারও ২০একর জমিতে বিভিন্ন জাতের ধান চাষাবাদ করেছি। তার মধ্যে, বি২৮,বি২৯, বি৭৪, বি১২” ৪সহ আরও অনেক। আশা করছি প্রকৃতি অনুকূলে থাকলে, এবার আশানুরূপ ফসল পাব। এ বছরের প্রথম ৪ কানি পাকা বোরোধান কেটেছি। এতে ক্লান্ত শরীরে স্বস্তিরের ছোঁয়া লেগেছে। তিনি আরও বলেন কষ্টের ফসল যখন, সোনালী আবরণে রুপ ধারণ করে, তখন-ই ধীরে ধীরে ক্লান্ত মনে, পূর্ণ আশা জাগে মনে, কিছু দিন পরেই, বুনা ফসল সবটুকু আনিব গৃহে। ২৫,/২০দিন সময় পেলেই, হাওরের সব ফসল, কৃষক কাটিয়া আনিবে গৃহে।
কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য মতে জানা যায়, এ উপজেলার ছোট- বড় ২৩টি হাওরে,
প্রায় ১৭হাজার ৪শত ২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর এর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৬হাজার১ শত ৮০ মেঃটন চাউল।
কথা হয়,বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ এর তাহিরপুর উপজেলা শাখার সহসভাপতি আবুল কালাম খান (পারুল)’র সাথে তিনি বলেন, হাওর পাড়ের কৃষককের কষ্টার্জিত সোনালী ফসল রক্ষায়, ২০কোটি টাকা ব্যয়ে ১১২টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন করে ৮৫কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে উপজেলার ছোট-বড় ২৩টি হাওরের ফসল রক্ষায় কাজ করেছেন, শেখ হাসিনা সরকার। একমাত্র কৃষক বান্ধব সরকার, শেখ হাসিনা সরকার, কৃষককের সুখ দুঃখের সারতি। যিনি সারা বছর বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবেলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকেন । যেমন, অতি বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলসহ প্রাকৃতিক যেকোনো দুর্যোগ। তিনি আরও বলেন, এবার বোরো মৌসুমের ফসল ভালো হয়েছে। আশা করি ১৫-২০দিনের মধ্যে, প্রকৃতি অনুকূলে থাকলে, সবাই সোনালি ফসল ঘরে তুলতে পারবেন। আমিও, ৩৬ কেয়ার বোরোধানের চারা রোপণ করেছি। সপ্তাহ খানিক পরে কাটা শুরু করতে পারব। তবে কিছু ধান ক্ষেতে রোগের ছোঁয়া লেগেছে। এর কারণে কৃষক কিছু এটা ক্ষতি গ্রস্ত হবে।
হাওর পাড়ের কৃষক শাহীন বলেন, ক্ষুধা নামক দানবকে বিতাড়িত করতে দিন রাত, গতর খাটুনি খেটে জমি চাষাবাদে সময় ব্যয় করে রঙিন স্বপ্ন আকিঁ । যখন সোনালী ফসল ঘরে তুলতে পারব, সেই আশায় বুক বেঁধে প্রায় ছয় মাস দিনক্ষন অতি বাহিত করি। প্রকৃতি অনুকূলে থাকলে, বাস্তবে রুপ নেয় রঙিন স্বপ্নের। আর প্রাকৃতিক দুর্যোগের রোষানলে পড়লে সবেই ধুলি সাত, দারিদ্রতার ফাঁদে পড়ে, শুরু হয় অনাহার, অর্ধাহারে দিনাতিপাত। তবে আশা করছি এবার দয়াল মুখ তোলে চাইবেন, ধানের পিজা বাহির হয়ে গেছে, কাহার কাহারও জমির ধান পেকে গেছে। তারা পাকনা ধান কাটছেন। আমি ও আগামী সপ্তাহে কাটার আশা রাখি।
মৌসুমে প্রায় ১৭হাজার ৪শত ২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এর বিপরীতে এ মৌসুমে উপজেলায় বোরো ধানের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৬হাজার১শত৮০ মেঃ টন চাল নির্ধারণ করা হয়েছে।
তাহিরপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা হাসান উর দৌলা বলেন, ধানের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য সরকারি ভাবে হাইব্রিড জাতের বীজ, সার বিনা মূল্যে কৃষক গণকে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অল্প কিছু দিনের মধ্যে হাওরের জমিতে পুরুদমে ধান কাটা শুরু হবে। প্রায় সপ্তাহ খানেক আগেই কিছু কিছু হাওরে ধান কাটা শুরু হয়েছে। প্রকৃতি অনুকূলে থাকলে, আশা করি এবার লক্ষ্য মাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা
ধারা হয়েছে ৬৬হাজার ১শত ৮০ মেঃটন চাউল।