খন্দকার মোঃ জসীম উদ্দীন, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
আপনার বাবার নেতৃত্বে এই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। আপনার বাবা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। আপনার বাবার শাহাদাত অঙ্গুলীর নির্দেশে জাতি উঠত এবং বসত। আপনার বাবার কী অসম্ভব ক্ষমতা ছিল, যা ভাষায় বর্ণনা করার মতো নয়। ব্যাঙ যেভাবে পাল্লায় নেওয়া যায় না, ব্যাঙের মতো এই জাতিকে কীভাবে ঐক্যবদ্ধ করে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, যা চিন্তা করলে অস্থির হতে হয়। যার শয়নে-স্বপনে ছিল বাঙালি তথা বাংলাদেশের মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার নিশ্চয়তার ভাবনা। যিনি ছিলেন কৃষকের প্রাণ, শ্রমিকের আত্মা, ছাত্র-ছাত্রীর অহংকার, বাবা-মায়ের সন্তানের স্বপ্ন তথা ভবিষ্যৎ। তিনি একটি দেশ, দেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, জাতির পিতা তথা বাংলাদেশ।
সীমাহীন ত্যাগ, অনেক বঞ্চনা, অনেক নির্যাতন, অনেক হাহাকার, অনেক বেইমানি, অনেক মোনাফেকি; সর্বশেষ পবিত্র ভূমিতে নিজেসহ পরিবারের রক্ত ঢেলে দেওয়া। সে এক বেদনার মহাকাব্য, মহালেখ্য।
জাতির পিতা দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশে এসে সদ্য স্বাধীন ভূমিষ্ঠ একটি দেশের হাল ধরেন। শিশু রাষ্ট্রটিকে সফলকাম করতে যা প্রয়োজন ছিল, তা একেবারেই ছিল না। এত প্রতিকূলতার মধ্যেও শিশুটিকে লালন করতে গিয়ে যে প্রতিকূলতার শিকার হয়েছেন, যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। তারপরও তিনি দমে যাননি। তিনি হিমালয় পর্বতের মতো অটল থেকে জাতিকে সাহস জুগিয়েছেন এবং সামনে থেকে পরিপূর্ণভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর নায়কোচিত মহাকাব্যিক নেতৃত্বের গুণে আজ বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ড পৃথিবীর মানচিত্রে সমহিমায় তার অবস্থান জানান দিচ্ছে।
আপনি জাতির পিতার কন্যা। দেশের মানুষের দুঃখ-কষ্ট, আনন্দ-বেদনা আপনার চেয়ে বেশি বোঝে মনে হয়, বাংলাদেশে আর কেউ নেই। কিন্তু বর্তমানে দেশে দেখা যায়, একধরনের মারাত্মক রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে। আপনি নিশ্চয়ই স্বপ্নালোকে অদৃশ্যভাবে তা অনুধাবন করছেন।
দেশের শতকরা ৮০ জন মানুষ ভোট প্রদান করেননি। এটাও নিশ্চয়ই আপনি বোঝেন। বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন হওয়ার পর অনেক দেশদ্রোহীকে ক্ষমা করেছেন।
এখন দেশে যেহেতু অনেক মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি, বা করেনি। তাদের ব্যাপারে আপনার দায়িত্ব সীমাহীন। কারণ, আপনি জাতির পিতার কন্যা।
আপনার যথেষ্ট বয়স হয়েছে। যখন আপনার দলের নেতা-কর্মীরা স্লোগান দেন, ‘বারবার দরকার, শেখ হাসিনার সরকার।’ আপনি তখন বলে ওঠেন, ‘আমার বয়স হয়েছে, এবার আমাকে মুক্তি দাও।”
এই অবস্থায় আপনার তথা আপনার পরিবারের সঙ্গে বাংলাদেশে যেসব অঘটন ঘটেছে, তা এক কথায় ক্ষমার অযোগ্য এবং ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। কিন্তু তারপরেও আপনি জাতির পিতার কন্যা। আপনার এবং আপনার পরিবারের প্রতি যে অন্যায় হয়েছে, এটা কোনো মানুষ স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারে না। আপনি অবিশ্বাস্য, অকল্পনীয় ত্যাগকে যেভাবে শক্তিতে রূপান্তরিত করেছেন, যা বিশ্বের কাছে নজির হয়ে থাকবে। ইতিহাস একসময় আপনাকে স্মরণ করবে এবং আপনার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
এখন আসি মূল কথায়। যারা আপনার প্রতি, আপনার পরিবারের প্রতি অন্যায় করেছে, তারা দৃশ্যমান। এরপরেও কীভাবে তাদের ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা যায়, তার দায়িত্ব একমাত্র আপনার, শুধু আপনার এবং আপনার।
সে দায়িত্ব নেওয়ার বুকের পাটা বাংলাদেশের আর কারও নেই। যদিও আপনাকে কথা বলি মারাত্মক দুঃসাহসের ওপর ভর করে। কারণ, আমাদের আশার বাতিঘর আপনি, জাতির পিতার সার্থক উত্তরসূরি জননেত্রী শেখ হাসিনা।
বিএনপিকে একটু ছাড় দিয়ে কীভাবে দেশে একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনা যায়, তার ভাবনা আর কারও কাছে জাতি না চাইলেও জাতির পিতার কন্যা হিসেবে আপনার কাছে সচেতন দেশবাসীর একমাত্র চাওয়া। এই চাওয়া পূরণ আপনাকেই করতে হবে। বাংলাদেশে এই চাওয়ার বিকল্প আর দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তি নেই।
আপনি হয়তো বলতে পারেন, আমার পিতাসহ পরিবারের সবাইকে নির্মম-নিষ্ঠুরভাবে খুন করা হয়েছে। আমিসহ আওয়ামী লীগের পুরো নেতৃত্বকে শেষ করে দিতে চেয়েছিল। তারপরও কোনো প্রতিশোধ নিইনি। বুকে পাথর বেঁধে সব দায়দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়েছি, সব ভুলে গিয়েছি। সবকিছু শুধু আমার একারই দায়দায়িত্ব? এই প্রশ্ন করা শতভাগ যুক্তিসংগত। কিন্তু এই দায়িত্ব আপনাকে নিতেই হবে। কারণ, সব দায়দায়িত্ব শুধু আপনার এবং আপনার। দেশটাকে একটা আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার আপনার যে রাজনীতি প্রজ্ঞা এবং কৌশল; সমকালীন বাংলাদেশ তথা বিশ্বে আর কোনো নেতার আছে বলে সচেতন দেশবাসী বিশ্বাস করে না। সব রাজনীতিক দল এবং নেতৃত্ব কীভাবে ধীরে ধীরে আদর্শের ওপর ভিত্তি করে সম্মানজনক দূরত্ব বজায় রেখে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব তথা রাজনৈতিক নেতৃত্ব পরিচালিত করবে, তার জন্য একটা সুষ্ঠু পরিবেশ আপনি তৈরি করে দেবেন- এই প্রত্যাশা আপনার কাছে রইল।