বকশীগঞ্জ(জামালপুর)প্রতিনিধিঃ
জামালপুরের বকশীগঞ্জে পৌর এলাকার পাখিমারা এলাকায় অবস্থিত জিগাতলা পাখিমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি উচ্ছেদের পাঁয়তারা চলছে। এতে করে বিদ্যালয়টির সরকারি উন্নয়ন কাজ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে এবং কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান চরমভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
২৯ নভেম্বর বুধবার বিদ্যালয়ের জমি ও স্থাপনা রক্ষার দাবিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।
লিখিত আবেদন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৪৩ সালে জিগাতলা পাখিমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। অত্র এলাকায় এটি একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠাকালে পাখিমারা গ্রামের সরকার বাড়ির দানবীর প্রয়াত রিয়াজ উদ্দিন ৪৯ শতাংশ জমি এই বিদ্যালয়েল নামে দান করেন। ওই জমিতেই বিদ্যালয়টির কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে দীর্ঘ ৭৯ বছর ধরে। বর্তমানে এই বিদ্যালয়ে পাঁচজন শিক্ষক কর্মরত আছেন। যার ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে ২১২ জন। এই বিদ্যালয়ের অনেক ছাত্র-ছাত্রী তাদের পরবর্তী শিক্ষাজীবনে ভালো ফলাফল অর্জন করে স্ব-স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হয়ে সুনামের সাথে গ্রামে এবং দেশ-বিদেশে অনেক অবদান রেখে যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা, এমপি, সাবেক আইজিপি, সেনা সদস্য, ডাক্তার, প্রকৌশলী, কৃষিবিদ, ব্যাংকার, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক, কানাডা ও নাইজেরিয়ায় বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক, পিএইচডি গবেষক, দেশের বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষক, সরকারি-বিভিন্ন পদের চাকরিজীবী, স্বনামধন্য লেখক ও সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, ঠিকাদার, প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (উৎপাদন), বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বেসরকারি চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশায় বহু সংখ্যক স্বনামধন্য ব্যক্তি এই বিদ্যালয়েরই শিক্ষার্থী ছিলেন।
বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার সময় টিনশেড ভবন থেকে পরবর্তীতে একতল পাকা ভবন নির্মিত হয়। বিদ্যালয় প্রাঙ্গণেই রয়েছে একটি ফ্লাড সেন্টার কাম ক্লাসরুম। সম্প্রতি বিদ্যালয়টির চারতলা বিশিষ্ট ভবনের বর্তমান ২,২০০ বর্গফুটের দ্বিতল ভবন নির্মাণ প্রকল্প গৃহিত হয়েছে। এই দ্বিতল ভবনটি নির্মাণে সরকারের ব্যয় হবে প্রায় এক কোটি টাকা। বিদ্যালয়ের পুরাতন একতল ভবনটির স্থানে এই দ্বিতল ভবন নির্মাণের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে একতল ভবনটি ভেঙে চলতি নভেম্বর মাস থেকে দ্বিতল ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে একটি মহল বিদ্যালয়ের ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা সামনে দাড় করিয়েছে।
বিদ্যালয়টির জমি দাতা প্রয়াত রিয়াজ উদ্দিনের ওয়ারিশ রবিউল ইসলাম রবিন গং সম্প্রতি বিদ্যালয়ের সম্পূর্ণ ভূমির মালিকানা দাবি করে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সদস্য, ইউএনও, প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারসহ সাতজনকে বিবাদী করে আদালতে মামলা করেন। মামলার বিষয়টি জানাজানি হলে স্কুল কর্তৃপক্ষসহ এলাকার সচেতন মহল সহ সবাই হতবাক হয়েছেন। মামলা মোকদ্দমার কারণে বিদ্যালয়টির উন্নয়ন কাজ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত হুমকির মুখে পড়েছে।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, বিদ্যালয়টি ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত । এতোদিন কোন সমস্যা না হলেও এখন বিদ্যালয়টি উচ্ছেদের পাঁয়তারা চলছে।
পাখিমারা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল্লা হেল কাফি, মো. গোলাম রব্বানী জানান, এটি এশটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। এই বিদ্যালয় থেকে অসংখ্য জ্ঞানী গুণি তৈরি হয়েছে । আজ একটি মহল নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য বিদ্যালয় উচ্ছেদ ও জমি দখলের পাঁয়তারা করছে। তাই আমরা এলাকাবাসীর পক্ষে ভূমি জটিলতা নিরসন করে বিদ্যালয়টি রক্ষার দাবি জানাচ্ছি।
বিদ্যালয়ের জমির মালিকানা দাবি করা রবিউল ইসলাম রবিন জানান, বিদ্যালয়ের জমিটি আমার পৈতিৃক সম্পত্তি। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে বিদ্যালয়ের নামে কোন জমি নাই। তাই বিদ্যালয়ের মূল ভবন ছাড়া বাকি জমিটুকু আমার পরিবারের।
অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল আউয়াল জানান, আমরা সরকারি বিদ্যালয়ের জমি ও স্থাপনা রক্ষার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। তাই প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।
বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মুন মুন জাহান লিজা জানান, বাদী পরিবারের সঙ্গে কথা বলে বিদ্যালয়ে ভবনের পুন:নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। তারপরও তারা কেন এমন করছে বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে বিদ্যালয়ের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য যা যা সাপোর্ট দেওয়া দরকার সেটা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে। আশাকরি শিগগিরই এর সমাধান হবে।