মাসুমা জাহান,বরিশাল ব্যুরো:
বরিশাল সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের প্রবেশদ্বার ফুল দিয়ে সাজানো। রঙিন শাড়ি পরে প্রবেশদ্বারে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে পুনর্বাসন কেন্দ্রের মেয়েরা।ফুল দিয়ে তারা বরণ করে নিচ্ছে অতিথিদের।সব মিলিয়ে নগরীর রূপাতলী এলাকার পুনর্বাসন কেন্দ্রটির চিত্র ছিল অন্য দিনের থেকে আলাদা।হঠাৎ করে কেউ গেলে বুঝে ওঠা দায় পুনর্বাসন কেন্দ্র না বিয়ে বাড়ি।
অবশ্য পুনর্বাসন কেন্দ্রটির এমন অন্যরকম রূপের এক বিশেষ কারণ ছিল।এ দিন ছিল পুনর্বাসন কেন্দ্রের নিবাসী সৃষ্টি ও তানজিলার বিয়ে।সৃষ্টি ও তানজিলার বিয়ে উপলক্ষেই করা হয়েছিল এমন জমকালো আয়োজন।
পুনর্বাসন কেন্দ্রের সূত্রে জানা গেছে,বাক প্রতিবন্ধী সৃষ্টি আক্তারকে (১৯) আড়াই বছর আগে লঞ্চঘাট এলাকায় পাওয়া যায়।ভবঘুরের মতো ঘোরাফেরা করতে দেখে এক ব্যক্তি পুলিশে খবর দেন।পরে পুলিশের মাধ্যমে তাকে এই কেন্দ্রে আনা হয়।আর তানজিলা আক্তারকে (২০) পটুয়াখালী শহরে পাওয়া যায়।সেখানে এক নারী তাকে উদ্ধার করেন।পরে পুলিশের মাধ্যমে তাকেও এই কেন্দ্রে আনা হয়।
সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক সাজ্জাদ পারভেজ বলেন, মাস খানেক আগে সমাজ সেবার এক কর্মকর্তার সঙ্গে এক ব্যক্তি যোগাযোগ করেন।ওই ব্যক্তি তার এক আত্মীয়ের ছেলের জন্য মেয়ে খুঁজছিলেন।পুনর্বাসন কেন্দ্রের তানজিলার ছবি দেখে তার পছন্দ হয়।পরে তাদের সূত্র ধরে সৃষ্টির বিয়ের প্রস্তাব আসে।এরপর বিষয়টি জেলা প্রশাসক স্যারকে জানানো হলে তিনি সৃষ্টি ও তানজিলার সম্মতি নেন।এর পর দুই পাত্রের সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়ার নির্দেশ দেন।
খোঁজ নিয়ে দুই পাত্রের সম্পর্কে জানা গেছে ওরা ভালো মানুষ।গত ২১ অক্টোবর দুই ছেলে ও তাদের পরিবার পুনর্বাসন কেন্দ্রে এসে তানজিলা ও সৃষ্টিকে দেখে বিয়ের দিন ঠিক করার অনুরোধ করেন।এদিকে তানজিলা ও সৃষ্টিও পাত্র পছন্দ হয়েছে বলে জানায়।
তিনি আরও বলেন,জেলা প্রশাসক স্যারকে বিষয়টি জানিয়ে বিয়ের দিন ঠিক হয়।স্যারের নির্দেশে মেয়েসহ বরের বিয়ের যাবতীয় সামগ্রী কেনাকাটা শুরু হয়। দুই বরের জামাকাপড়, কনেদের স্বর্ণের কানের দুল, শোকেস,সেলাই মেশিন কেনা হয়।এমনকি লেপ, তোশকসহ সংসারের ব্যবহার্য জিনিসপত্রও ছিল কেনাকাটার তালিকায়।পাশাপাশি পুনর্বাসন কেন্দ্রে চলে সাজসজ্জার কাজ।বিয়ের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ তিন শতাধিক মানুষকে।
এরপর গতকাল শনিবার(২৯ অক্টোবর) দুপুর ২টার দিকে ৩ লাখ টাকা দেন মোহরে তানজিলার সঙ্গে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার নগরবাড়ি গ্রামের মো. রেজাউল সরদারের বিয়ে হয়।রেজাউল সরদার এলাকায় অটোরিকশা চালান।একই মঞ্চে ৩ লাখ টাকা দেন মোহরে সৃষ্টির সঙ্গে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার দক্ষিণ মোরাকাঠি গ্রামের ওবায়দুল মৃধার বিয়ে হয়।ওবায়দুল মৃধা কৃষি কাজ করেন।
কনে তানজিলা আক্তার এমন আয়োজনে আনন্দিত। তিনি বলেন, এমন ধুমধাম বিয়ের আয়োজন হবে, কখনো ভাবিনি।ডিসি স্যার,পুনর্বাসন কেন্দ্রের সাজ্জাদ স্যারসহ সবার কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ।আমার কাছে দিনটি চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
বাক প্রতিবন্ধী সৃষ্টি আক্তারও বিয়ের অনুষ্ঠানে বেশ হাসিমুখে ছিলেন।এত সুন্দর আয়োজন তার অনেক ভালো লাগছে বলে অনুভূতি প্রকাশ করেছেন।
এ বিয়ের অন্যতম আয়োজক বরিশাল জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন,বিয়ের অনুষ্ঠানে আমাদের দুই কন্যা বেশ হাসিমুখে ছিল। এই বিয়েতে তাদের বেশ খুশি মনে হয়েছে। তাদের জন্য কিছু করার আমার এই ছোট ইচ্ছার বিষয়টি পরিপূর্ণতা পাওয়ায় মানসিক তৃপ্তি পাচ্ছি।তারা সুখে শান্তিতে থাকুক। আমরাই তাদের অভিভাবক।
বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো. আমিন উল আহসান, কর কমিশনার তাসনিমা হোসেন লুনা ও কাজী লতিফুর রহমান, বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার,পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন,ভোলার জেলা প্রশাসক মো. তৌফিক -ই-লাহী চৌধুরী,পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান, সমাজসেবা অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. শহীদুল ইসলাম, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আল মামুন তালুকুদার হোসেন, বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু, বরিশাল প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেনসহ সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারাসহ তিন শতাধিক মানুষ।