মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৩ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য হওয়ায়’আনিসুল হক কে অভিনন্দন জানিয়েছেন মো.মিয়া হোসেন বোয়ালখালী শ্বশুরবাড়িতে বিদ্যুস্পৃষ্টে যুবকের মৃ-ত্যু  সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটিকে স্বাগত জানিয়ে আনন্দ মিছিল বোয়ালখালীতে ৫ দোকানিকে ৯ হাজার টাকা জরিমানা  কোনাবাড়ী থানা প্রেসক্লাবের সভাপতি সালাহ উদ্দিন, সম্পাদক রবিউল সুনামগঞ্জ-১ আসনে এমপি হিসেবে দেখতে চান আনিসুল হক কে,মো. মিয়া হোসেন জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনে শ্রেষ্ঠ ইউএনও মোল্লাহাটের হরেকৃষ্ণ অধিকারী সাতক্ষীরায় এবি পার্টির পৌর মহিলা শাখার কমিটি গঠন চট্টগ্রামে ১ মাসে ৩৭১১ মামলা, গাড়ি আটক ৪৪৩৬টি, জরিমানা আদায় সোয়া কোটি টাকা বেশি নেত্রজল সাহিত্য ম্যাগাজিন এর ৪র্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সম্মাননা স্মারক প্রদান 

বরিশালে বিরল রোগে আক্রান্ত হাফসা,বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান

রিপোর্টার নামঃ
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৬ অক্টোবর, ২০২২
  • ১৪৭ বার পঠিত

মাসুমা জাহান,বরিশাল ব্যুরো:

 

স্কুলে কেউ হাফসার সঙ্গে কথা বলে না,পাশেও বসে না

বাবা ফিরোজ মোল্লা ভাড়ায় ব্যাটারি চালিত অটো রিকশা চালান।আর মা রেবা বেগম অন্যের বাসায় কাজ করেন।দুজনের রোজগারে কোনো মতে চলে তাদের সংসার।তিন সন্তানের মধ্যে সবচেয়ে ছোট সাড়ে ৮ বছরের হাফসা।

তার শরীরে অজানা রোগ বাসা বাধায় মা গৃহকর্মীর কাজ ছেড়ে দিয়েছেন।কারণ,সারাক্ষণ মেয়ের সঙ্গে থাকতে হয় তাকে|বছর খানেক আগেও স্কুলে যেত হাফসা।সে স্থানীয় ১৬৫ নং হাজেরা খাতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়তো। কিন্তু শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের বিকৃতি দেখা দেওয়ায় অন্য শিক্ষার্থীরা সংক্রমিত হতে পারে এই ভয়ে হাফসাকে স্কুল যেতে বারণ করে দেওয়া হয়েছে।

এ নিয়ে বাসায় কান্নাকাটি করে হাফসা।কখনও কখনও মাকে না জানিয়েই স্কুলের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সে।তার রোগের কারণে আতঙ্কিত এলাকাবাসী হাফসাকে বকাবকি করে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।এরপর থেকেই ঘরবন্দি রয়েছে শিশুটি। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ড পশ্চিম কাউনিয়া সৌদি সংস্থা মসজিদ সংলগ্ন একটি বাসায় থাকেন হাফসারা।

জন্মের পর দুই বছর সুস্থ ও স্বাভাবিক ছিল। এরপর থেকেই ক্রমে ত্বকে ফোসকার মতো পড়তে শুরু করে তার। যা দিনে দিনে আরও বাড়তে থাকে। এখন হাফসার বয়স সাড়ে ৮ বছর। তার মুখমণ্ডল, দুই হাত, পশ্চাৎদেশসহ বিভিন্ন স্থান বিভৎস ভাবে বিকৃত হয়ে গেছে।ক্ষতস্থানে সারাক্ষণ চুলকায় এবং ব্যথায় চিৎকার করে।

হাফসার বাবা ফিরোজ মোল্লা বলেন, দেড় বছর আগে কিছু টাকার ব্যবস্থা করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়েছিলাম হাফসাকে। ভর্তি করানোর পরে ডাক্তার একটি টেস্ট করাতে বলেন। টেস্টটির দাম ছিল ১৬ হাজার টাকা। ওই পরিমাণ টাকা না থাকায় পরীক্ষা না করিয়েই হাফসাকে নিয়ে বরিশাল চলে আসি। এখন মাঝে মাঝে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। এখানেতো এর চিকিৎসা নেই। তারপরও মনের সান্ত্বনার জন্য যাই।

তিনি বলেন, আমার মেয়ের কি রোগ হয়েছে সেটিই জানতে পারিনি। আমার যদি অনেক টাকা থাকতো তাহলে হয়তো মেয়েটার চিকিৎসা করাতে পারতাম। কিন্তু অটো চালিয়ে কি এতো বড় রোগের চিকিৎসা চালানো সম্ভবনা|

শিশু হাফসা কান্না করতে করতে বলে, আমাকে স্কুল থেকে বের করে দিয়েছে, আমার ব্যথা সবার গায়ে হবে দেখে। আমার খুব খারাপ লাগে স্কুলে যেতে পারি না বলে। কেউ আমার পাশে আসে না। সবাই আমাকে দূরে সরিয়ে দেয়।

হাফসার মা রেবা বেগম বলেন, হাফসা যে রোগে আক্রান্ত তা ছোয়াচে না। কারণ, সাড়ে ৬ বছর ধরে সে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে আছে। ঘরের অন্য কেউ আমরা আক্রান্ত হইনি। আফসোস হলো আমার মেয়েকে নিয়ে দিনে আমি বাইরে বের হতে পারি না। মানুষ তাকে দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।

তিনি বলেন, এক বছর আগেও ক্ষতস্থান ঢেকে স্কুলে যেত। কিন্তু সে যখন দ্বিতীয় শ্রেণিতে ওঠে তখন স্কুল থেকে না করে দিয়েছে। এরপর থেকে আর স্কুলে যেতে পারেনি। তবে হাফসা স্কুলে যাওয়ার জন্য কান্না করে। সর্বশেষ স্থানীয় ডা. খলিলুর রহমানকে দেখিয়েছিলাম ২৬ সেপ্টেম্বর। তিনি হাফসাকে দেখে ওষুধ দিয়েছেন। ভিজিটও রাখেননি। ওষুধ কিনে দিয়েছেন। তবে তিনিও বলতে পারেননি হাফসা কি রোগে আক্রান্ত?

হাফসার চিকিৎসার জন্য দীর্ঘদিন ধরে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা চালাচ্ছেন সরকারি ব্রজমোহন কলেজের ইংরেজী বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী শাফিন মাহমুদ।

তিনি বলেন, ২০১৬ সালের দিকে হাফসার মা আমাদের মেসে রান্না করতো। তখন হাফসা এই রোগে আক্রান্ত ছিল। তখন হাফসার শরীরে ক্ষত কম ছিল। তখন থেকেই মেসের শিক্ষার্থীরা টাকা সংগ্রহ করে ওর ওষুধের জন্য সহায়তা করতাম। এখনো সহায়তা করে যাচ্ছি। কিন্তু সেই টাকায় হাফসার চিকিৎসা সম্ভব না। সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে এলে অসহায় এই পরিবারের শিশু মেয়েটির চিকিৎসা হতো।

একই এলাকার বাসিন্দা বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাহাবুবুর রহমান বলেন, মেয়েটির জন্য আমার খুব মায়া হয়। তার চিকিৎসার সহায়তার জন্য আমি চেষ্টা করছি।পরিবারটি সত্যিকার অর্থেই অসহায়। যখন যতটুকু পারি সহায়তা করেছি। কিন্তু তাতে সুচিকিৎসা হয়নি। এজন্য সকলকে এগিয়ে আসতে অনুরোধ জানান এই জনপ্রতিনিধি।

এ বিষয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আমির হোসেন বিশ্বাস বলেন, আমার ওয়ার্ডে দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত কোনো শিশুর বিষয়ে আমার জানা নেই। তাদের পরিবার থেকে আমাকে কেউ জানায়নি। জানালে তার চিকিৎসার সহায়তা করবো।

হাজেরা খাতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মিসেস কনা বলেন, শিশুটি অসুস্থ থাকায় ক্লাসের অন্যান্য শিক্ষার্থীরা তার কাছে যেতে ভয় পায়, পাশে বসতে ভয় পায়। এজন্য আমরাই হাফসাকে স্কুলে আসতে নিরুৎসাহিত করেছি। তবে শিশুটি স্কুল থেকে বই নেয় এবং বাসায় লেখাপড়া করে।পরীক্ষা এলে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।

সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, আপনার (প্রতিবেদক) মাধ্যমে শিশুটি আক্রান্তের খবর জানলাম। ওই শিশুর চিকিৎসার জন্য আমি সর্বাত্মক সহায়তা করবো।আশা করি সুচিকিৎসা পেলে শিশুটি সুস্থ হবে এবং পুনরায় স্কুলে যেতে পারবে।

সাংবাদ পড়ুন ও শেয়ার করুন

আরো জনপ্রিয় সংবাদ

© All rights reserved © 2022 Sumoyersonlap.com

Design & Development BY Hostitbd.Com

কপি করা নিষিদ্ধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ।