মৌসুমী দাস, স্টাফ রিপোর্টারঃ
ছুটিতে বাড়িতে এসে বন্ধুর সাথে পদ্মার জলাশয়ে ছাড়া মাছ দেখে বাড়িতে ফিরছিলেন বেসরকারি কোম্পানীতে কর্মরত মেহেদি হাসান লিখন (২৬) ও তার বন্ধু শামীম হোসেন (২৪)। পথি মধ্যে তাদের থামিয়ে তর্কে জড়িয়ে পড়েন একই গ্রামের একই গ্রামের বাচ্চু মন্ডলের ছেলে নাফিজ হোসেন (২৫)। পরে তার সাথে যুক্ত হন নাফিজ হোসেনের বাবা বাচ্চু মন্ডল। ঘটনার এক পর্যায়ে প্রতিপক্ষের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নিহত হন, মেহেদি হাসান লিখন ও আহত হন শামীম হোসেন (২৪)। মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) সকাল ১২ টায় রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পাকুড়িয়া ইউনিয়নের কিশোরপুর গ্রামের এ ঘটনা ঘটে।
নিহত মেহেদি হাসান লিখন ওই গ্রামের সাদেক আলীর ছেলে ও আহত শামীম হোসেন একই গ্রামের আফছার আলীর ছেলে। মেহেদী হাসান ৫ বছর ধরে বেসরকারি এক ঔষধ কোম্পানীতে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। মঙ্গলবার বিকেলে তার চাকুরিতে যোগ দেওয়ার কথা ছিল।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, উপজেলার পাকুড়িয়া ইউনিয়নের কিশোরপুর গ্রামের পদ্মার ক্যানেলের জলাশয়ে কয়েকজন বন্ধু মিলে মাছ চাষ করেন। ঘটনার দিন জলাশয়ের মাছ দেখে বাড়ি ফিরছিলেন মেহেদি হাসান লিখন ও শামীম হোসেন। এ সময় তাদের পথরোধ করে মাছ ছাড়া জলাশয়ের জায়গাটি নিজের বলে দাবি করেন একই গ্রামের বাচ্চু মন্ডলের ছেলে নাফিজ হোসেন (২৫)। এ নিয়ে তাদের সাথে তর্ক বিতর্ক হয়। এক পর্যায়ে নাফিজ হোসেন তার বাবাকে ডেকে নেয় সেখানে। পরে তার বাবা বাচ্চু মন্ডল সেখানে গিয়ে তার কাছে থাকা খেজুর গাছের রস নামানোর কাজে ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্র (বাটাল) দিয়ে মেহেদি হাসান লিখনের শরীরের নিচের অংশে ডান পায়ের হাঁটুর উপরে কুপিয়ে রক্তাত্ত জখম করে। তাকে রক্ষা করতে গেলে শামীম হোসেনকেও কুপিয়ে আহত করা হয় । ঘটনা জানার পর স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি ঘটনা স্থলে দৌড়ে গিয়ে তাদের বাঁচানোর চেষ্টা করেন।
পরে তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক হাসিবুল হাসান মেহেদি হাসান লিখনকে মৃত ঘোষণা করেন। এমন সময় হাসপাতালের সামনে আহাজারি করতে দেখা যায় নিহতের পরিবারকে।
আহত শামীম হোসেন জানান, কয়েকজন বন্ধু মিলে পদ্মার ক্যানেলের জলাশয়ে মাছ চাষ করেছেন। তারা দুইজন ক্যানেলের জলাশয়ে মাছ দেখে বাড়ি ফেরার পথে নাফিজ হোসেন পথরোধ করে মাছ ছাড়ার জায়গাটি তার বলে দাবি করে। তাকে টাকা দিয়ে অংশ নিতে বলা হয়। এ নিয়ে তর্কে জড়িয়ে পড়ে কুপিয়ে জখম করে।
নিহতের পরিবার ও আহত শামীম হোসেনের মা সাবিনা বেগম জানান, গ্রামের কয়েকজন ছেলে মিলে মাছ ছেড়েছে পদ্মার ক্যানেলের জলাশয়ে। তাদের একজন পার্টনার মেহেদি হাসান লিখন। স্থানীয় সুত্র জানায়, মেহেদি হাসানসহ কয়েকজন মিলে অনেক আগে থেকেই মাছ চাষ করছেন। বাচ্চু মন্ডল তার ছেলে নাফিজ হোসেন জায়গাটি তার দাবি করেন।
নিহতের মা হাসিনা বেগম ভূমিহীন। আত্মীয় জমিতে বাড়ি করে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে তিনি বলেন, মেহেদি হাসান ৫ বছর ধরে পাবনা স্কয়ার ঔষধ কোম্পানীতে নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। ৩দিন আগে ছুটিতে বাড়িতে এসেছিল। মঙ্গলবার বিকেলে তার চাকুরিতে যোগ দেওয়ার কথা ছিল।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল কাদের মোল্লা জানান, নিহতের পরিবারের কোন জায়গা জমি নাই। আত্মীয় জায়গায় পরিবার নিয়ে বসবাস করেন।
বাঘা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সবুজ রানা বলেন, সুরতহালে নিহতের ডান পায়ের হাটুর ওপরে জখম পাওয়া যায়। আঘাতজনিত কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। পারিবারিক কোন বিষয় আছে কিনা,সে বিষয়টিও তদন্ত করে দেখা হবে।
মাছ ছাড়ার জায়গাটি উন্মুক্ত জলাশয় কিনা জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা শারমিন আখতার বলেন, সরেজমিন তদন্ত না করে মন্তব্য করা যাচ্ছেনা। ঘটনার পর থেকে এলাকা ছাড়া বাচ্চু মন্ডল তার ছেলে নাফিজ হোসেন। মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তাঁদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।