মোহাম্মদ আতিকুল্লাহ চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ
মরক্কোতে ভয়াবহ ভূমিকম্পের ঘটনায় গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক ও হেফাজতে ইসলামের সিনিয়র নায়েবে আমীর আল্লামা মুফতি খলীল আহমদ কাসেমী (দা.বা.)।
রবিবার (১০ সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক শোকবার্তায় আল্লামা মুফতি খলীল আহমদ কাসেমী (দা.বা.) বলেন, বিশ্বের সর্বপশ্চিমের মুসলিম অধ্যুষিত দেশ মরক্কোতে গতকাল সংঘটিত ভয়াবহ ভূমিকম্পে এ পর্যন্ত দুই হাজারের অধিক মানুষের মৃত্যু এবং বহু ভবন ধ্বসে পড়াসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর জানা যাচ্ছে। শিশু, নারী, বৃদ্ধসহ হাজার হাজার মানুষ ধ্বংসস্তুপের নিচে চাপা পড়ে আছে। জোরালো আশঙ্কা করা যাচ্ছে যে, নিহতের সংখ্যা ৫ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। জাতিসংঘ বলছে ভূমিকম্পে মরক্কোর অন্তত ৩ লাখ লোক ক্ষতির শিকার হয়েছেন। ভ্রাতৃপ্রতিম দেশটির এই ভয়াবহ বিপদে আমি গভীর শোক ও সমবেদনা জানাচ্ছি। দয়াময় আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নিহতদের সকলকে মাগফিরাত ও শহীদী মর্যাদা এবং শোকাহত স্বজনদেরকে ধৈর্যধারণের তাওফীক দান করুন। একই সাথে আহতদের দ্রুত সুস্থতার জন্যও মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে বিশেষভাবে দোয়া করছি।
আল্লামা মুফতি খলীল আহমদ কাসেমী (দা.বা.) আরো বলেন, আফ্রিকা মহাদেশের পশ্চিমপ্রান্তে অবস্থিত মরক্কো মুসলিম অধ্যুষিত ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ। একই সাথে দেশটি ওআইসির সদস্য রাষ্ট্র। সুতরাং ওআইসি ও আরববিশ্বসহ মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের মরক্কোর এই বিপর্যায়কালে তাদের পাশে দাঁড়ানোর দায়িত্ব রয়েছে। কারণ, পবিত্র কুরআনের সূরা হুজুরাতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা মুসলমানদেরকে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ করেছেন, اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ اِخْوَةٌ অর্থাৎ- মুমিনরা পরস্পর ভাই-ভাই। অপরদিকে হাদীসে হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, “সব মুসলমান একটি দেহের মতো, যদি তার চোখ অসুস্থ হয়, তাহলে পুরো শরীর অসুস্থ হয়ে যায়; যদি তার মাথা অসুস্থ হয়, তাহলে পুরো শরীর অসুস্থ হয়ে যায়”। রাসূলুল্লাহ (সা.) আরো ইরশাদ করেছেন, “বান্দা যতক্ষণ তার ভাইয়ের সহযোগিতায় আত্মনিয়োগ করে, আল্লাহ তাআলা ততোক্ষণ তার সহযোগিতা করতে থাকেন”। একই সাথে সাধারণ মুসলমানদের কর্তব্য হচ্ছে, নিজ নিজ অবস্থান থেকে মরক্কোতে ভূমিকম্পে নিহতদের মাগফিরাত ও আহতদের দ্রুত সুস্থতা ও সকলপ্রকার বিপদ থেকে হেফাজতের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া-মুনাজাত করা।
আল্লামা মুফতি খলীল আহমদ কাসেমী (দা.বা.) বলেন, দুনিয়ার বুকে যতো বিপর্যয় আসে, এগুলোর পেছনে মানুষের কর্মই দায়ী। কুরআন-হাদীসের ভাষ্যমতে মানুষ যখন বিভিন্ন পাপাচারে লিপ্ত হয়ে পড়ে, জুলুম-অত্যাচারকে গুনাহ বলে মনে করে না, তখন আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন আযাব-গযব ও দূর্যোগ-দুর্বিপাক, খরা, দুর্ভিক্ষ, ভূমিকম্প, ঘূর্ণিঝড় ও করোনার মতো বিপদে পতিত করে বান্দাকে সতর্ক করেন। আল্লাহ প্রদত্ত এত সতর্কতা প্রদর্শন সত্ত্বেও আমরা যদি গুনাহ থেকে তাওবা করে সঠিক পথে ফিরে না আসি, তবে জাতি হিসেবে আমাদের কপালেও যে কোন সময় যে কোন বিপদাপদ ও দুর্যোগ নেমে আসার প্রবল ভয় আছে।
তিনি সকলকে হুঁশিয়ার করে যাবতীয় পাপাচার ও অন্যায় র্কম পরিত্যাগ করে আল্লাহমুখী হওয়ার উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, বর্তমানে চতুর্দিকে যে হারে ইসলামের বিরুদ্ধে, আল্লাহ-রাসূল ও পবিত্র কুরআনের বিরুদ্ধে অবমাননাকর বক্তৃতা-বিবৃতি ও ক্রিয়কলাপ চলছে এবং অনাচার, ব্যভিচার, অপরাধ, দুর্নীতি, অন্যায়, মিথ্যাচার ও মানুষের অধিকার হরণের উৎসব চলছে, অনতিবিলম্বে এসব বন্ধ না হলে এবং সৎ ও ইনসাফের পথে ফিরে না আসলে যেকোন সময় যে কারো উপর আসমানী আযাব-গযব ও দুর্যোগ নেমে আসার প্রবল ভয় আছে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে ঈমান-আমল হেফাজত করুন। আমিন।