মাকে ফিরে পেতে আকুতি তিন বছরের ছোট্ট শিশু সিফাতের। প্রতিনিয়ত মাকে খুজে বেড়ায় শিশুটি। এমন ঘটনা মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার ইছাপুরা ইউনিয়নের মধ্যে শিয়ালদী গ্রামে। অবৈধ ভাবে অনুপ্রবেশের দায়ে শিশুটির মা শবনম বেগম দীর্ঘ একবছর যাবত ভারতে আসাম রাজ্যের করিমগঞ্জ জেলখানায় বন্দি থাকে । সেখানে সাজা শেষ হলেও এখন বাড়ি ফিরতে পারেনি শবনম। এর আগে তাদের আটকের বিষয়ে আসামের একটি বেসরকারি স্থানীয় প্রাগ নিউজ চ্যানেলে একটি সংবাদ প্রচার হয়।
জানাগেছে,বিগত দেড় বছর আগে শিয়ালদী গ্রামের মানষিকভারসাম্যহী মোঃ লতিফ তালুকদারের মেয়ে শবনমকে নিয়ে পালিয়ে যায় তার আপন চাচাতো ভাই জনি তালুকদার। পরে তারা অবৈধ ভাবে ভারত অনুপ্রবেশ করলে আসাম পুলিশ তাদের আটক করে অবৈধ অনুপ্রেবেশের দায়ে আসাম আদালত মাসের কারাদন্ড ও দুই হাজার টাকা অর্থদন্ড প্রদান করেন। পরে করিমগঞ্জ জেলা খানায় ৯ মাসের সাজা কাটে। সাজা শেষ হলেও পাসপোর্ট ও ভিসা না থাকায় আইনি জটিলতায় দীর্ঘ ৭ মাস পার হলেও দেশে ফিরতে পারেনি শবনম। মাকে হারিয়ে প্রতিনিয়ত কান্না করে যাচ্ছে শিশু সিফাত।
মাকে হারিয়ে শিশু সিফাত দেড় বছর যাবত তার নানি মাকসুদা বেগমের কাছে রয়েছে। এছাড়াও ভারতে অবস্থাণ রত শবনম তার মা মাসুদা বেগম ও অপর ২ বোন ও এক ভাইয়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা মানবপাচার মামলা দিয়ে জমি দখলের চেষ্টাসহ বিভিন্ন ভাবে হয়রানির অভিযোগ জনি তুলকদারের বাবা রহিম তালুকদারের বিরুদ্ধে।
এদিকে চাচাতো ভাই জনি তালুকদার ফুসলিয়ে শবনমকে ভারত নিয়েছে বলে শবনমের স্বীকারুক্তি মুলক একটি ভিডিও রেকর্ড পাওয়া গেছে। সেই ভিডিওতে শবনম বলেন, তার চাচতো ভাই জনি তালুকদার ও তার পরিবারে সদস্যরা তাকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ভারতে নিয়ে যায়।
শবনমের মা মাকসুদা বেগম বলেন,২০০৭ সাল চাকরী দেয়ার কথা বলে নিয়ে যায় রহিম তালুকদারের গংরা। সেই থেকে আমার স্বামীকে নিখোঁজ থাকে পরে দীর্ঘ ১১ বছর পর ২০১৮ সালে একবার বাড়িতে এসে আবার নিখোঁজ হন। পরে দুই হাজার ২২ সালে পাগল বেসে বাড়ি এসে আবারো চলে যায় তার পরে এখন পর্যন্ত খোজ মেলেনি তার । আমার স্বামীকে নিখোঁজ রেখে রহিম তালুকদার গংরা দালালি করে বিভিন্ন জমিজমা প্রভাবশালীদের নামে বেনামে কিনে নিয়েছে দাবী করে দখল করে রেখেছে। পরে গত দেড় বছর আগে রহিম তালুকদারের ছেলে জনি তালুকদার আমার মেয়েকে ফুসলিয়ে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে পালিয়ে ভারত নিয়ে যায়। পরে সেখানে পুলিশের হাতে আটক হয় তারা। তাদের ছাড়াতে আমার থেকে কয়েক লাখ টাকা নিয়েছে। আমার বিরুদ্ধে উল্টো মানবপাচার মামলা দিয়ে হয়রানি করে যাচ্ছে।
যাতে আমার বাড়িটি দখলে নিতে পারে। এর আগেও আমাদের অনেক জমি বিভিন্ন জাল দলিল করে দখলে নিয়েছে ভূমিসদ্যুরা। মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে তার নিখোঁজ স্বামীকে ফিরে পেতে ও ভারত থেকে তার মেয়েকে মুক্তকরে দেশে ফিরে আনার দাবীও জানান তিনি।
শবনম ও জনি এখনো কোথায় আছে জানানেই জানিয়ে ভারতের আসাম রাজ্যের আদলতের আইনজীবী এ্যাডভোকেট আলতাফ হোসেন জানান,তারা পাসপোর্ট ও ভিসা ছাড়া অবৈধ ভাবে ভারতে প্রবেশ করায় আসাম পুলিশ তাদের আটক করে। পরে আদালত তাদের দুজনকে ৯ মাসের কারাদন্ডসহ দুই হাজার টাকা জরিমানা করেন। ৯ মাসের সাজা শেষ হলেও জরিমানার অর্থ প্রদার করতে না পারায় আরো দুই মাসের সাজা কেটে মুক্ত হয়েছে । ডিটেনশন ক্যাম্পে নিয়ে যায় সেখান থেকে বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের আলোচনার মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে নেয়ার কথা ছিলো ।
মাকসুদা বেগমের স্বামীকে নিখোঁজের বিষয়টি ভিত্তিহীন দাবী করে ও জাল দলিল করে জমি দখলের অভিযোগ অস্বীকার করে রহিম তালুকদারের ছেলে রনি তালুকদার বলেন,কাজের কথা বলে আমার ভাইকে ভারত পাচার করেছে মাকসুদা বেগম গংরা। তাই আমার ভাইকে ফিরে পেতে আদালদের ধারস্ত হয়েছি। এছাড়া তার স্বামী আরএকটি বিয়ে করে ভারত বা খুলনা সংসার করছে বলে দাবী করেন রনি।
মানবপাচার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মোঃ মিনহাজ উদ্দিন বলেন,রহিম তালুকদারের ছেলে জনি তালুকদারকে ভারত পাচার করা হয়েছে এমন মামলার বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে আসল ঘটনা জানাযাবে।