মানিকগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি (মোঃ শামীম মিয়া)
মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনে নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক বিজয়ী প্রার্থীর নির্বাচন বাতিল করে যথাযথভাবে প্রকৃত নির্বাচিত ব্যক্তিকে নির্বাচিত ঘোষণার দাবীতে আদালতে মামলা করেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান প্রার্থী অ্যাডভোকেট কে এম বজলুল হক রিপন। গতকাল ২০ ই নভেম্বর রোববার সকালে মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচন ট্রাইব্যুনালের বিচারক ও ১ম যুগ্ম জেলা জজ ওবায়দা খানমের আদালতে মামলা দায়েরের পর,বিচারক মামলাটি আমলে নেন এবং সমন জারির আদেশ দেন। আগামী ১লা ডিসেম্বর বিবাদী চেয়ারম্যান প্রার্থী অ্যাডভোকেট গোলাম মহীউদ্দীনকে আদালতে হাজির হয়ে জবাব দেওয়ার নির্দেশ দেন।অভিযোগকারী চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী কে এম বজলুল হক রিপন বলেন, নির্বাচনে মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার পর থেকে প্রতিপক্ষ প্রার্থীর লোকজন আমাকে,আমার মনোনয়নপত্রের প্রস্তাবক ও সমর্থনকারী সহ আমার পক্ষের লোজনকে নানাভাবে হয়রানী,হুমকী-ধামকী ও নির্যাতন করেছেন। নির্বাচন চলাকালীন দুটি ভোট কেন্দ্রের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রেখে সিসি ক্যামেরাকে অকার্যকর করে আমাকে হারিয়ে পরাজিত প্রার্থীকে বিজয়ী করা হয়েছে। বিগত সময়ে আমি এই নির্বাচনে অনিয়মের বিষয়টি প্রধান নির্বাচন কমিশন এবং রিটার্নিং অফিসার সংশ্লিষ্ট বিভাগে অভিযোগ করেছি। কোথাও সুবিচার না পেয়ে, আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। আমি আশা করি, আদালতের কাছ থেকে সুবিচার পাবো এবং আমাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে।অভিযোগকারী অ্যাডভোকেট বজলুল হক রিপনের আইনজীবী আব্দুর রহমান বলেন, গত ২৭ই অক্টোবর নির্বাচনের গ্যাজেট প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বলা আছে, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা সংক্ষুব্ধ হলে তিনি এক মাসের মধ্যে অনিয়মের অভিযোগ এনে তিনটি ক্ষেত্রে মামলা করতে পারেন। একটি হলো-যিনি নির্বাচিত হয়েছেন, তার নির্বাচন বাতিল চাইতে পারেন। দ্বিতীয়ত: অনিয়মের মাধ্যমে নির্বাচিত ব্যক্তির নির্বাচন বাতিল এবং তার স্থলে অভিযোগকারী, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণার বিধান রয়েছে। আরেকটি হলো- সামগ্রিকভাবে নির্বাচনটি বাতিল। আমরা দুই নম্বর গ্রাউন্ডে গিয়েছি। সেটা হলো- এই নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম অর্থাৎ নির্বাচন কমিশন বিধিমালা ২০১৬ এর ৬৯,৭০ এবং ৭৫বিধিমালা লঙ্ঘন হয়েছে। প্রভাব খাটিয়ে ভোট কারচুপি করা হয়েছে এবং নির্বাচন কমিশন এবং বাংলাদেশ সরকারের কাঙ্খিত ইভিএম পদ্ধতিকে প্রশ্নবিহীন করার বিষয়ে আন্তরিক সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। সেখানে সিসি ক্যামেরার উল্লেখ ছিল। কিন্তু বিদ্যুৎ নাই এই অজুহাতে সিসি ক্যামেরাকে অকারযকর দেখানোর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণকে ব্যহত করা হয়েছে। এছাড়া, নির্বাচনকালীরন সময়ে নগদ টাকা বিলি করা হয়েছে এবং আইনের ব্যাত্যয় ঘটিয়ে বিভিন্ন ধরণে উপঢৌকন দেওয়া হয়েছে। এসব কারণ উল্লেখ করে বাংলাদেশ সরকারের গেজেটের নির্দেশণা অনুযায়ী জেলা পরিষদ নির্বাচন ট্রাইব্যুনালের বিচারক ও ১ম যুগ্ম জেলা জজ ওবায়দা খানমের আদালতে বাদীর পক্ষে আবেদন করেছি। তিনি আবেদনটি আমলে নিয়েছেন এবং সমন জারীর আদেশ দিয়েছেন। মামলা নম্বর ১(২০২২)। আগামী ১লা ডিসেম্বর অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আদালতে তার জবাব দিতে বলা হয়েছে।এব্যাপারে অভিযুক্ত অ্যাডভোকেট গোলাম মহীউদ্দীন জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন,আমি মামলার বিষয়টি এখনও জানি না। আমি নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলাম এবং ভোটারদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ইতিমধ্যে দায়িত্বভারও গ্রহণ করেছি। এর আগেও নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হয়েছিলাম। মামলার বিষয়টি জানার পর এ নিয়ে কথা বলতে পারবো। উল্লেখ্য গত ১৭ ই অক্টোবর দেশের অন্যান্য ৬১টি জেলার মতো মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও প্রশাসক অ্যাডভোকেট গোলাম মহীউদ্দীন ’আনারস’ প্রতীকে এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কেএম বজলুল হক রিপন ’চশমা’ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। নির্বাচনে এ্যাভোকেট গোলাম মহীউদ্দীন ৪৫২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হউন। অপরদিকে কে এম বজলুর হক রিপন পান ৪২৫ ভোট।