সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৪৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
মুন্সীগঞ্জে সিরাজদিখানে  নারীকে খুণের অভিযোগে বাবা ছেলের বিরুদ্ধে মামলা রায়পুর নিজদেবপুর উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা সেবা প্রদান  রূপান্তর প্রতিদিন’ পত্রিকার সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি হলেন গাজী হাবিব মোল্লাহাটের শুড়িগাতীতে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে মৎস্য ঘের কর্মচারীর মৃত্যু সাতক্ষীরা সাস্থ্য উন্নয়ন কমিটির বর্ধিত সভায় মানব বন্ধনের সিদ্ধান্ত  পটিয়ায় শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি: গ্রেপ্তার ২ দৈনিক রূপালি বাংলাদেশ পত্রিকার শুভযাত্রা: নতুন দিনের প্রতিশ্রুতি সমন্বয়ককে জীবননাশের হুমকি, আ.লীগ-জাপার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মসজিদ মন্দির গির্জা দখলে নিতে চাইলে তাৎক্ষণাৎ হেফাজতে ইসলাম রক্ষে দাড়াবে~ মাওলানা নাসির উদ্দীন মুনির  অনুগল্প “পরোপকার”লেখক আশিকুর সরকার (রাব্বি)

অনুগল্প “পরোপকার”লেখক আশিকুর সরকার (রাব্বি)

রিপোর্টার নামঃ
  • আপডেট সময় রবিবার, ২০ অক্টোবর, ২০২৪
  • ১২ বার পঠিত

সময়ের সংলাপ অফিসঃ

বিকেল নামতে শুরু করেছে। নদীর স্রোত গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির কারণে তীব্র হয়ে উঠেছে। সাঁকোটি ভেঙে পড়েছে, ফলে গ্রামের মানুষ পারাপারের জন্য দুশ্চিন্তায় পড়েছে। নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে রাজ অনেকটা চিন্তিত চোখে স্রোতের দিকে তাকিয়ে থাকে। তার কাছে সময় কম, বই কেনার জন্য বাজারে যেতে হবে। সে জানে, এই বইগুলো তার শিক্ষার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ,কিন্তু অর্থের অভাবে কিছুদিন ধরেই তার চিন্তা বেড়ে চলছে।

রাজের বয়স মাত্র ১৮ কলেজে সদ্য ভর্তি হয়েছে। তার বাবা ব্যাবসা করে এবং-মা শিক্ষক হলেও সংসারের অর্থনৈতিক চাপ বেশ বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিনের টানাপোড়েনে, রাজের নিজের পড়াশোনার খরচ চালানোও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে, রাজের স্বপ্ন বড়— সে শিক্ষার আলোতে নিজের পরিবারকেই শুধু নয়, সমাজকেও আলোকিত করতে চায়। আজকের যাত্রা তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ কলেজে ভালো করতে হলে প্রয়োজনীয় বই কেনা আবশ্যক।

-হঠাৎ নদীর ধারে একজন বৃদ্ধ লোক এসে দাঁড়ালেন। কাঁপা কাঁপা হাতে একটা লাঠির ওপর ভর দিয়ে সামনের দিকে এগোনোর চেষ্টা করছেন তিনি। রাজ তার দিকে দৃষ্টিপাত করল, লোকটির চলাফেরায় দুর্বলতা স্পষ্ট। সাদা দাড়ি আর ধূসর চুলে বার্ধক্যের ছাপ স্পষ্ট। লোকটির চোখে ক্লান্তির ছাপ, তবে মনের ইচ্ছা প্রবল।

“বাবা, পারাপারের কোনো ব্যবস্থা নেই?” বৃদ্ধ লোকটি রাজকে প্রশ্ন করলেন।

রাজ কিছুক্ষণ নীরব থেকে ভাবল। নিজের মনেও সন্দেহ ছিল নদী পার হওয়ার উপায় কী হতে পারে। সে বলল, “সাঁকো ভেঙে গেছে, চাচা। নৌকাও দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু আপনাকে সাহায্য করতে পারি, আপনি চাইলে আমার সাথে পার হতে পারেন।

বৃদ্ধ লোকটি একটু অবাক হয়ে রাজের দিকে তাকালেন, তারপর কণ্ঠে কৃতজ্ঞতার আভাস নিয়ে বললেন, “তুমি কি সত্যিই আমাকে সাহায্য করবে, বাবা? আমার বয়স হয়েছে, হাঁটতেও কষ্ট হয়। স্রোত এতটাই তীব্র যে নিজে নিজে পার হতে পারব না।

রাজের মনে সামান্য দ্বিধা থাকলেও তার মন মানবিকতায় পূর্ণ। নিজেও যে কীভাবে পার হবে, সেটাই পরিষ্কার নয়, তবুও সে ঠিক করল সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে। “চাচা, আমার কাঁধে ভর দিয়ে আসুন। একসাথে চেষ্টা করি,” রাজ বলল।

দুজন ধীরে ধীরে পানির দিকে এগোল। স্রোত প্রতিটি পদক্ষেপকে কঠিন করে তুলছিল। রাজ সতর্কতার সাথে বৃদ্ধ লোকটির ভার নিতে চেষ্টা করল, স্রোত যতই তীব্র হোক না কেন, সে নিজের ভারসাম্য ধরে রাখার জন্য কঠোর চেষ্টা করছিল। কয়েকবার পা পিছলে গেলেও রাজের মনোবল অটুট ছিল। হৃৎপিণ্ডের জোরে সে নিজের পা শক্ত করে নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে ছিল। একে একে তারা নদীর মাঝ বরাবর এসে পৌঁছাল, যেখানে স্রোত যেন আরও জোরালো হয়ে উঠেছিল।

এত কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও রাজের মনে একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল— “জীবনে বড় কিছু অর্জন করতে হলে কি সবসময়ই এমন বাধার মুখে পড়তে হয়?” সে জানত, শিক্ষা তার জীবনের পথের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ, কিন্তু তা পাওয়ার পথ এতটাই দুর্গম যে নিজের ভাগ্য নিয়ে তার মাঝে মাঝে সন্দেহ হয়। বৃদ্ধ লোকটির কাঁধে ভর রেখে নদী পার হতে গিয়ে রাজ অনুভব করল যে জীবনও অনেকটা এমনই— কখনো স্রোতের বিরুদ্ধে লড়তে হয়, কখনো অন্যের কাঁধে ভর করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হয়।

জীবনের ভয়াবহতার মধ্যে চিরন্তন একটি সত্য আছে— সহযোগিতায় অনেক কঠিন কাজ সহজ হয়ে যায়। নদীর মাঝখানে এসে রাজের অনুভূতি আরো গভীর হলো। এই অনুভূতির স্রোত যেমন প্রবাহিত হচ্ছে, তেমনই তার চিন্তার জগতেও নতুন ধারণা তৈরি হচ্ছে। সে অনুভব করল, কখনো কখনো জীবনচক্রের এই প্রবাহের স্রোতের মধ্যে অন্যের কাছে সাহায্য চাওয়া একটি শ্রদ্ধা এবং সাহসের কাজ।

একপর্যায়ে তারা নদীর ওপারে পৌঁছাল। দুজনেরই হাঁফ ছুটে গেছে। বৃদ্ধ লোকটি ক্লান্তির গলা নিয়ে বললেন, “বাবা, তুমি না থাকলে আমি আজ এখানে পৌঁছাতে পারতাম না। আল্লাহ তোমার মঙ্গল করুন।”

রাজ কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। তার হৃদয় ভরে উঠল একধরনের পরিতৃপ্তিতে। সে জানল, এই সাহায্যের বিনিময়ে তার জীবনে এক নতুন অভিজ্ঞতা যোগ হলো। এ যেন জীবনের প্রতিটি সমস্যার মধ্য দিয়ে পারাপারের মতোই— কষ্ট, ভয়, এবং দ্বিধা সত্ত্বেও এগিয়ে যেতে হয়।

বৃদ্ধ লোকটি কিছুক্ষণ পর নিজের পকেট থেকে একটি ছোট মানিব্যাগ বের করে রাজের হাতে কিছু টাকা দিলেন। “এটা নাও, বাবা। তোমার অনেক উপকার হলো আজ। তোমার এই সাহস আর সহানুভূতি কখনো ব্যর্থ হবে না। তুমি পড়াশোনা করো, শিক্ষার আলোতে নিজেকে এবং আমাদেরকেও আলোকিত করো।

রাজ প্রথমে নিতে চায়নি। কিন্তু লোকটির আন্তরিকতা দেখে শেষ পর্যন্ত নিতে বাধ্য হলো। তার চোখ ভিজে উঠল। জীবন আসলে এমনই— সাহায্যের বিনিময়ে শুধুমাত্র সাহায্য পাওয়া নয়, বরং মানবিকতার একটি চিত্র গড়ে ওঠা। এটাই তার কাছে শিক্ষার আসল মূল্য।

বৃদ্ধ লোকটির কথাগুলো যেন একটি প্রতিজ্ঞা হয়ে রাজের মনে গেঁথে গেল। সে ঠিক করল, এই অভিজ্ঞতাকে মাথায় রেখে নিজের পড়াশোনায় মনোযোগ দেবে। জীবনের এই ছোট অভিজ্ঞতাটি তার মনে গভীরভাবে দাগ কাটল— মানুষের জীবনে কষ্ট থাকবেই, তবে সহানুভূতির মাধ্যমে সেই কষ্টকে জয় করা সম্ভব।

আজ রাজ বুঝতে পেরেছে যে প্রতিটি জীবনপ্রবাহের একটি উদ্দেশ্য থাকে, আর তা হল—সৃষ্টিকর্তার প্রতি ভরসা রেখে একে অপরকে সাহায্য করা। জীবনের প্রতিটি চ্যালেঞ্জ একটি পারাপার। কেউ যদি পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার ওপর ভরসা রেখে এগিয়ে যায়, তাহলে সেই পথের কষ্টও একসময় পার হয়ে যায়। রবিন আজ সত্যিই একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল— যেখানে প্রতিটি কষ্ট, প্রতিটি চ্যালেঞ্জ, এবং প্রতিটি অভিজ্ঞতা তাকে আরও শক্তিশালী করবে।

সাংবাদ পড়ুন ও শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো জনপ্রিয় সংবাদ

© All rights reserved © 2022 Sumoyersonlap.com

Design & Development BY Hostitbd.Com

কপি করা নিষিদ্ধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ।