মুরাদ মিয়া,সুনামগঞ্জ
ঠিক" আব্দুল আলীমের একটি গানের ছন্দে হুবহু হুবহু মিলে যায়,অন্ধ মাঝি আলী হোসেন এর জীবন কাহিনী ও না বলা কিছু কথা, অভাব যেন পিছু ছাড়লো না।
তিনি বলেন,আর কত কাল ভাসবো আমি দুঃখের সারি গাইয়া
আমার জনম গেল ঘাটে ঘাটে,
ভাঙ্গা তরী বাইয়া রে আমার ভাঙ্গা তরী বাইয়া।
আমি পরের বোঝা বইয়া বইয়া আমার নৌকার গলুই গেছে খইয়ারে
আমার নিজের বোঝা কে বহিবে রে,
রাখব কোথায় যাইয়ারে আমি রাখব কোথায় যাইয়া।
এই জীবনে দেখলাম নদীর/কতই ভাঙ্গা গড়া আমার দেহ তরী ভাঙলো শুধু না যাগিলো জোড়া।
আমার ভাবে কেউ কি আছে আমার দুঃখ কইবো কার কাছে রে
আমি রইলাম শুধু দয়াল আল্লাহ গো।
তোমার পানে চাইয়ারে আমি/তোমার পানে চাইয়া।
জানাযায় এই অন্ধ মাঝি আলী হোসেন(৩৫)। এর বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড কদমতলী গ্রামে। তিনি মৃত আব্দুল রাজ্জাকের ছেলে,এবং হাওরের কান্দায় আলাদা একটি ঝুপড়ি ঘরে ২মেয়ে ও চোখে কম দেখা তার স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন।
জীবিকার তাগিদে ভোর হলেই ঘুম থেকে উঠেন আলী হোসেন এবং ভাত না খেয়েই নৌকা নিয়ে বের হন বড় মেয়ে জুই(৭)কে নিয়ে হাওরের উত্তাল ঢেউ পারি দিয়ে শ্রীপুর বাজার ঘাটে।
গ্রাম থেকে বাজার ঘাটে আসা ও বাজার থেকে বাড়ির
ঘাটে যাওয়া পারাপার যাত্রীদের তার নৌকায় তুলে মেয়েকে নিয়ে ঘাটে ঘাটে নৌকা লাগিয়ে যাত্রীদের পৌঁছে দিয়ে আসেন এই অন্ধ মাঝি আলী হোসেন(৩৫)।'
স্হানীয় এলাকা নয়াবন্দ, তরং, শিবরামপুর,খালা শ্রীপুর কুড়ের পাড়,মদনপুর,তরং কান্দাহাটি,উজ্জলপুর,বেতাগড়া,মাটিয়াই,ও কদমতলী, গ্রামে এইসব যাত্রীর পারাপার করে,কোন রকম সংসার চল্লেও,তার নিজের জীবন চলছে খুবই কষ্টে।
যাত্রীদের সঙ্গে ভাড়া নিয়ে কোনো দরকষাকষি করেন না তিনি।
চোখে কম দেখতে পাওয়া নৌকার মাঝি আলী হোসেন বলেন, যাত্রীরা খুশি হয়ে তাকে যা দেন তা নিয়েই খুশি থাকেন আলী হোসেন। ভোর থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত মেয়েকে নিয়ে নৌকা চালিয়ে কোনোদিন ২০০ থেকে ৩০০ টাকা হয়, আবার কোনোদিন আরও বেশি হয়। যাত্রীরা বাজারে না এলে কোনোদিন আবার কোনো টাকাই উপার্জন হয় না। তবুও নৌকা চালিয়েই খেয়ে না-খেয়ে চলছে অন্ধ আলী হোসেন এর জীবনযুদ্ধ। এভাবেই অন্ধ মাঝি আলী হোসেন ৯/১০ বছর ধরে নদীতে হাতে ভাওয়া নৌকা নিয়ে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।
১৩ জুলাই শনিবার সকালে নদী পারাপারের সময় দেখা হয়।দৈনিক সকালের সময় পত্রিকার,(সাংবাদিক) মুরাদ মিয়ার সাথে। অন্ধ মাঝি আলী হোসেন জানান,তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের কদমতলী,খালা নদীর তীরে কান্দায় ছোট একটি ঝুপড়ি ঘরে স্ত্রী,সন্তানদের নিয়ে থাকেন তিনি।
কিন্তু দুঃখের কি কপাল আমার, অতিবৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে ৩ ধাপে বন্যা হওয়ায়, ও মাটিয়াইন হাওরের উত্তাল ঢেউয়ে আমার ঝুপড়ি ঘরটা ভেঙে তচনচ করে দিয়ে গেছে।
তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে আরও বলেন,দেশে টেকা ওলা আর হৃদয়বান ব্যক্তিদের অভাব নেই।কিন্তু আমার দুঃখ, কষ্ট,আর সংসারে অভাব পিছুই ছাড়লো না।যেনো দেখার কেউ নেই,যার কেউ নেই তার তো আল্লাহ আছেন।
তাই আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা মা-এর সুদৃষ্টি কামনা করছি।
স্হানীয় এলাকাবাসী অনেকের সাথে কথা বলে জানাযায়,জীবনের শেষ সময়ে এমন একজন অন্ধ নৌকার মাঝি আলী হোসেন এর নদীতে নৌকা চালিয়ে ব্যতিক্রমী পেশা গড়ে ওঠা সত্যিই বড় বেদনার। তবে এই জীবন সংগ্রামী পুরুষকে স্যালুট জানাই, কারণ তিনি নিজের জীবনযুদ্ধ একটি ব্যতিক্রমী পেশার মাধ্যমে চালিয়ে যাচ্ছেন। এ থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত।
আসুন আমরা যার যার সার্মথ্য অনুযায়ী অন্ধ নৌকার মাঝি আলী হোসেন এর পাশে দাড়াই। মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য,একটু সহানুভূতি কি আলী হোসেন পেতে পারে না।
দাইয়ানুর রহমান (সম্পাদক) তাপস কুমার ঘোষ (প্রকাশক) শিমুল হোসেন, (নির্বাহী সম্পাদক) আজহারুল ইসলাম-বাবলু হোসেন ( নির্বাহী সম্পাদক)
অফিসঃ পশ্চিম শেওড়াপাড়া- ইকবল রোড বাসা নং- ৪১৬/৪ মিরপুর ঢাকা-১২১৬,
Email: Info@sumoyersonlap.com, taposhg588@gmail.com,shimul00252@gmail.com
01715522822, 01728.855627, 01710118632, 01709255325
https://www.sumoyersonlap.com
কপি করা নিষিদ্ধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ।