বুধবার (৬ মার্চ) সকালে রাজধানীর উত্তরায় র্যাব ফোর্সেসের ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিরোধীদলের সন্ত্রাসের রাজনীতি প্রতিহত করেছে তথ্যপ্রযুক্তি। সবাই খুশি না হলেও, গণতন্ত্রকামী দেশগুলো এবারের নির্বাচনকে সাধুবাদ জানিয়েছে।
নিজেদের কাজ দিয়ে মানুষের মন জয় করা বাহিনীর ওপর অন্য দেশের নিষেধাজ্ঞা কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। র্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশের, আমাদের সংস্থা, তারা (র্যাব) দেশের মানুষের নিরাপত্তা দেবার জন্য যখন কোনো অপরাধীকে শনাক্ত ও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে; তখন আরেকটি দেশ এসে তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেবে। এটা আমাদের কাছে কখনও গ্রহণযোগ্য নয়। কাজেই সেটা আপনারা দেখেছেন, প্রথম প্রথম অনেকেই ঘাবড়ে গিয়েছিলেন, তখন কিন্তু আমি বলেছিলাম, ঘাবড়াবার কিছু নেই। স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) কখনও একতরফা হয় না। দরকার হলে আমরাও স্যাংশন দিতে পারি। সে অধিকার আমাদের আছে। কাজেই মনোবল ভাঙবেন না কেউ।
আত্মবিশ্বাস নিয়ে মানুষের কল্যাণে কাজ করবেন।
এ সময় রমজানে বাজার স্থিতিশীল রাখতে অসাধু ব্যবসায়ীদের রুখতে র্যাবকে তৎপর হওয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশে বিরোধী দল রাজনীতির নামে সন্ত্রাসে লিপ্ত হয়। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু যেহেতু এখানে দোষ চাপানোর রাজনীতি চলে। তাই এসব ঘটনার (সন্ত্রাস) সঙ্গে যারা জড়িত ছিল, তাদের ডিজিটাল পদ্ধতিতে শনাক্ত করে র্যাব ভালো কাজ করেছে।
র্যাবের নিষেধাজ্ঞার পেছনে ১০০ মিলিয়ন ডলারের প্রকল্পঃ আইজিপি
দেশের অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস দমন ও শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার উদ্দেশ্যে গঠিত এলিট ফোর্স র্যাব প্রতিষ্ঠার দুই দশক পূর্ণ করলো। গত ২০ বছরে সন্ত্রাস-জঙ্গি দমনসহ দেশের যে কোনো সংকটময় প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিয়মিত বাহিনীগুলোর পাশাপাশি নিজেদের পারদর্শিতায় মানুষের আস্থা অর্জন করেছে সাতটি বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত র্যাব।
সকালে উত্তরায় বাহিনীটির ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে র্যাব সদর দফতরে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ দরবার। যেখানে উপস্থিত ছিলেন বাহিনীর সহস্রাধিক সদস্য।
উল্লেখ্য,২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর’গুরুতর মানবাধিকার লংঘনমূলক কাজে জড়িত থাকার’ অভিযোগে বাংলাদেশের বিশেষ পুলিশ র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং এর ছয়জন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন অর্থ দফতরের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ খবর প্রকাশ করা হয়। ওই ছয় র্যাব কর্মকর্তা হলেন- চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন (র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক), বেনজির আহমেদ (সাবেক র্যাব মহাপরিচালক, জানুয়ারি ২০১৫-এপ্রিল ২০২০), খান মোহাম্মদ আজাদ, তোফায়েল মুস্তাফা সরওয়ার, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এবং মোহাম্মদ আনোয়ার লতিফ খান।
এতে বলা হয়, গুরুতর মানবাধিকার লংঘনে জড়িত থাকার জন্য আজ বেনজির আহমেদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার কথা ঘোষণা করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর – যার ফলে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অযোগ্য হবেন।
র্যাবের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ইস্যুতে বারবার সামনে চলে আসে নিউ জার্সির সিনেটর এবং প্রবীণ রাজনীতিক বব মেনেনডেজের নাম। ২০০৬ সাল থেকে সিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যানের পদ ব্যবহার করে আরও সাত সহকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণায় নেমেছিলেন বব।
সে সময়ের ট্রাম্প সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর কাছে বাংলাদেশে মানবাধিকার হরণের অভিযোগ তুলে নিষেধাজ্ঞার জন্য চিঠি দিয়েছিলেন তিনি।
তবে দুর্নীতির অভিযোগে আইনি ব্যবস্থা মুখে পড়েছেন মেনেনডেজ। তিন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণ করায় এরই মধ্যে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হয়েছে। অভিযুক্ত করা হয়েছে তার স্ত্রীকেও। এই ঘটনার পর প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি র্যাবের বিষয়েও
কোনো গোষ্ঠীর কাছ থেকে অবৈধ সুবিধা নিয়েছিলেন মেনেনডেজ?