শামছুল আলম আখঞ্জী তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) সংবাদদাতাঃ
বর্ষার স্বাভাবিক নিয়মের পানি থেকে ৩ হাত উপরে আমাদের হাওরাঞ্চলের জনবসতি। বংশপরম্পরায় শত শত বছর ধরে ঝুঁকিতেও থাকতে পারি। তবে আষাঢ়- শ্রাবণ মাসের টানাবৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলের ভয়ে বুকে কম্পন বেড়ে ওঠে। বন্যার দুর্যোগ সৃষ্টি হলেই, ইঞ্চি, ইঞ্চি করে পানিতে ডুবতে থাকে বিটে মাটি। আর আফাল ঢেউয়ে তান্ডব সংযুক্ত হলে পলকেই ভেঙ্গে ছুড়ে বিলীন হতে থাকে বাড়ি, গৃহে থাকে আনুষাঙ্গিক জিনিস পত্র ভেসে যায় জলে, চেয়ে তাকি অপলক দৃষ্টিতে। পুরপুরি তলিয়ে যাবে এ ভয়ে আতংকে কাটে দীর্ঘ দুইটি মাস। আমরা সবাই হাওর পাড়ে করি বসবাস।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা ৩শত ৩৬.৭০ বর্গকিলোমিটার আয়তন নিয়ে গঠিত
এ উপজেলা। এখানে রয়েছে ছোট -বড়, ২৪৯টি ঘণবসতি গ্রাম । এর অধিকাংশ হাওর পাড়ে পয়নিষ্কাসনের অভাব, স্বাস্থ্য ঝুঁকিতেও থাকে গ্রামবাসী। অপর দিকে বর্ষার থইথই জলে ভেসে ওঠে চতুর দিকে ঘেরা থাকে গ্রাম । সরাসরি দুর্যোগ রোষানলে ঝুঁকিতে থাকে কিছু গ্রাম , তরং, শিবরামপুর,মাটিয়ান, গোলাবাড়ি, মন্দিয়াতা, নোয়াবন্দ, মুজরাই, মদনপুর কদমতলী, পানিয়াকালি, বড়দল, কাউকান্দি, বেতাগড়াসহ দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের সব কয়েকটি গ্রাম। উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ১লক্ষ ৫৫হাজার ৯শত ৯৮ জন বসতি। দুর্যোগ মোকাবেলায় নেই কোন সরকারি পদক্ষেপ বা স্থায়ী সমাধান।
বিগত দিনে ভেঙ্গে ছুড়ে যা-ওয়া পিতৃক বিটা মাটি। হেমন্ত ঠিক ঠাক করতে পারলেও। এ কয়েক বছর যাবৎ, বন্যার হানায় বিচলিত।
দুর্যোগ মোকাবেলায় ক্লান্ত হয়ে গেছে হাওর বাসী। এখন একাধারে কয়েক দিন টানা বৃষ্টি আর বৈরী আবহাওয়ার উত্তাল ঢেউয় হলেই সোনালী স্বপ্ন চৌচির হয়ে যাওয়ার আতংকে থাকে নিন্মাঞ্চলের বসতিরা।
ভারতের মেঘালয়ের পাহাড় ঘেঁষা হওয়ায়, ঐদেশের ভারিবৃষ্টির পানি ঢলের রুপ ধারণ করে দ্রুত নিন্মাঞ্চলে প্রবল স্রোতে নেমে আসে,ছড়া,ঝরনা,৫টি নদী বৌলাই,যাদুকাটা,পাটলাই, মাহারাম,ও পাইকারতলা নদী পথের মাধ্যমে সরাসরি প্রবেশ করে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার ১শত৩৬টি মৌজার জলাভূমিতে, এসেই দুর্যোগ তৈরী করে। কাল বর্ষায় অতি বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢল আসলেই, ৩হাত উপরে অতিক্রম করলেই, বিটে মাটি ছোঁয়ে,আফাল ঢেউয়ের তান্ডবে ভাঙ্গে জন্মস্থানবিটা, কেউ কেউ সর্বস্ব হাড়িয়ে, নিঃস্ব হয়ে, অস্থির হয়ে উঠে জীবন চলা।
উপজেলার তরং গ্রামের (বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান)শাহীন আখঞ্জী বলেন, আমরা নিন্মাঞ্চলে বসবাস করি
মনের জুড়ে, ভাঙা গড়া খেলায় মেতে উঠি, বর্ষায় থইথই জল আর আফাল আর,
পাহাড়ি ঢলের ছোবলে ভাঙ্গনে পড়ি, হেমন্তে আবার গড়ি। ভেঙে ছুড়াঁ মেরামতে কাটাই বারমাস। নিন্মাঞ্চলের বসতিরা অধিক জনেই দিনমজুর হতদরিদ্র বটে। তা-ই প্রডাকশন দেওয়াল তৈরি করা মত নেই অর্থবল। বাধ্য হয়েই, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ভাঙা গড়ার সাথেই শত শত বছর ধরে চলে সংঘাত। এই দুর্যোগ প্রতিরোধে, সরকার স্থায়ীভাবে প্রডাকশন দেওয়ালের ব্যবস্তা গ্রহণের জন্য জোর দাবি জানাই।
রোপনে পানি আসলে, দুর্ভোগ সৃষ্টি না হয়ে সুফল বয়ে আনে । কিন্তু বর্ষায় অতি জল সংযোগ হয়ে পুলে উঠে,তখননি বিপদ সীমায় পৌঁছে যায়, প্লাবিত হয় বন্যা। এতে
গবাদিপশু মৃত্যুর হার বেড়ে যায়, অন্য দিকে
সংকট দেখা দেয়, গো-খাদ্যের।
উপজেলার হাওর পাড়ের সংবাদ কর্মী (দৈনিক সকালের সময় প্রতিনিধি) মুরাদ মিয়া বলেন, আমরা নিন্মাঞ্চলে বসবাস করি,
সকল প্রকার দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হয়
প্রতিনিয়ত। সব থেকে ভয়ংকর সময় পার করতে হয়, আষাঢ়, শ্রাবণ, ভ্রাদ্র মাসের, অতি বৃষ্টি, আর পাহাড়ি ঢলের পানি, আর উত্তাল ঢেউয়ের তান্ডব ভেঙে ছুড়ে নিয়ে যায় বসত বাড়ি। এসব দুর্যোগের হাত থেকে, রেহাই পেতে হলে, সরকারি অর্থায়নে প্রতিটি হাওরাঞ্চলের গ্রামে প্রডাকশন দেওয়াল তৈরি করতে হবে। এসব বাস্তবায়নের, আমি উর্ধতন কতৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করি।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুণ সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, আমার সাধ্যমত চেষ্টা করে কয়েকটি গ্রামসহ বাজারে
প্রডাকশন দেওয়াল তৈরি করে দিয়েছি, রামেশপুর,শ্রীপুর বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গন রোধে এ কাজ করেছি। যদি বিধাতার কৃপায় কোনো দিন সুনামগঞ্জ এক আসনের সাংসদ নির্বাচিত হতে পারি, তাহলে প্রথমেই নিন্মাঞ্চলের বসতি জনের, বসত বাড়ি রক্ষায় প্রডাকশন দেওয়াল তৈরি করা কাজ করবো।
তিনি আরও বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমি মনোনয়ন প্রত্যাশী, জনগণের দুরগোড়ায় গিয়ে গিয়ে জনসংযোগ, সভা, সেমিনার করে যাচ্ছি। এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা, যে সিদ্ধান্ত দিবেন, আমি তা মাথা পেতে নিব, এবং তার সিদ্ধান্ত মত কাজ করবো।