মুন্নি আক্তার,নিজস্ব প্রতিবেদক:
পাথর শ্রমিক হিসেবে বান্দরবান জেলার থানছি থানায় দিনমজুরের কাজ করতেন মো. করিম। অল্প বেতনে কোনোমতে চলছিল জীবন।
বিনামেঘে বজ্রপাতের মতোই ২০২২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর বান্দরবান জেলার আলী কদম থানা পুলিশ গ্রেফতার করে মো. করিমকে। একই দিন আদালতে মাধ্যমে বান্দরবান জেলা কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
আসামির নাম-ঠিকানা সবই মো .করিমের সঙ্গে হুবহু মিল। পরিবার সদস্যরা খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারে চট্টগ্রামের বাঁশখালী থানার মাদকের মামলা গ্রেফতার হয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ২১ ডিসেম্বর ৩ হাজার পিস ইয়াবা নিয়ে জসিম উদ্দিন (২৬), মো. হারুন (২৭) ও করিমকে (৩৫) বাঁশখালী থানা গ্রেফতার করে। বাঁশখালী থানা পুলিশের কাছে পরিচয় গোপন করতে নিজের নাম-ঠিকানা হিসেবে মো. করিমের ঠিকানা দেওয়া হয়।
মো. করিম বান্দরবান জেলার আলী কদম থানার চৌক্যং ইউনিয়ন ২ নম্বর ওয়ার্ড সিরাজ কারবারি পাড়ার মৃত গোরা মিয়ার ছেলে। ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি তিন জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জসিট জমা দেন বাঁশখালী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) দিপক কুমার সিংহ।
২০২২ সালের ১৫ জুন চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে করিম জামিন নেন। জামিন নিয়ে পলাতক থাকায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। মামলাটি তৃতীয় চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
মো. করিমের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. ওয়াহিদ ছায়েদ চৌধুরী বলেন, আমার মক্কেল মো. করিমের নাম ঠিকানা ব্যবহার করে বাঁশখালী থানার একজন আসামি। বাঁশখালী থানার মামলা গত ১৯ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টার দিকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে বান্দরবান কারাগারে পাঠানো হয়। গত ২৫ সেপ্টেম্বর তৃতীয় অতিরিক্ত চট্টগ্রাম আদালতে মো. করিম বাঁশখালী থানার মাদক মামলার আসামি নয় বলে একটি আবেদন করা হয়। পরে ৩ অক্টোবর একই আদালত জামিন মঞ্জুর করে।
তিনি আরও বলেন, বাঁশখালী থানা পুলিশ গ্রেফতার করা করিমের সঙ্গে আমার মক্কেল করিমের সঙ্গে উচ্চতায়, ওজনে ও শরীরের বিভিন্ন অংশ দাগসহ কোন ধরণের মিল নেই। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে জেলা সুপার ও বান্দরবান কারাগারে জেল সুপারের প্রতিবেদনে প্রমাণিত হয়েছে। গত ১৬ জানুয়ারি শুনানি হয়েছিল আমার মক্কেল মো. করিমকে মামলা থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে। মামলাটি পুনরায় তদন্তের জন্য চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়েছে।
বিনা দোষে ১৫ দিন কারাভোগ করা মো. করিম বলেন, আমি পাথরের শ্রমিক হিসেবে দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করি। হঠাৎ একদিন দুপুরে পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে যায়। পুলিশ আমাকে বলেছিলেন মাদককের মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। আমার কোনো মাদকের মামলা নেই, তবুও কেন কারাগারে পাঠানো হচ্ছে নানা ধরনের প্রশ্ন করি। পুলিশ সেটা বিশ্বাস করেনি।
তিনি আরও জানান, বিনাদোষে ১৫ দিন কারাভোগ করেছি সেটার ক্ষয়ক্ষতি কে দিবে? এলাকায় আমাদের পরিবারের মানসম্মান সবকিছুই শেষ হয়ে গেছে। সেটা কেউ ফিরিয়ে দিতে পারবে? আমি বিনাদোষে ১৫ দিন কারাগারে থেকেছি সেটার ক্ষতি পূরণ চাই। ঘটনায় জড়িত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
সুশাসনের জন্য নাগরিক চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী বলেন, বিনাদোষে প্রতিনিয়ত কারাভোগের ঘটনা ঘটছে। কারাগারে আঙ্গুলের ছাপ নিলে প্রকৃত আসামি চিহ্নিত হবে। এক্ষেত্রে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার অবহেলা রয়েছে। বিনাদোষে একজন ব্যক্তিকে কারাগারে যেতে হয়েছে-এটা মেনে নেওয়া যায় না। যাদের অবহেলা রয়েছে, তাদেরও শাস্তি হওয়া দরকার।