মাসুমা জাহান,বরিশাল ব্যুরোঃ
বাংলার আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ইতিহাস আর ঐতিহ্য।তার মধ্যে অন্যতম ঐতিহ্যে পরিপূর্ণ শহর বরিশাল। এ বিভাগের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় রয়েছে অসংখ্য ইতিহাস। এরমধ্যে বরিশাল শহরতলীর খুব কাছেই রয়েছে চারশ বছরের পুরাতন লাকুটিয়া জমিদার বাড়িএই বাড়ির অবস্থান শহর থেকে ৮ কিলোমিটার উত্তরে বরিশাল সদর উপজেলার লাকুটিয়া গ্রামে।
রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে জমিদার বাড়িটি এখন পরিত্যক্ত ভুতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে।অথচ বাড়িটিকে ঘিরে রয়েছে প্রায় চারশ বছরের পুরোনো ইতিহাস।এখানে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন মঠ,সুবিশাল দিঘি,মাঠ এবং কারুকার্য মণ্ডিত জমিদার বাড়ি।
এই ঐতিহ্যবাহী জমিদার বাড়িটি অবহেলিত থাকলেও পর্যটকদের আনাগোনা থাকে সব সময়।অথচ সংস্কারের মাধ্যমে এটা হতে পারে বরিশালের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র।
জমিদার বাড়ির শিলালিপি থেকে জানা গেছে,প্রায় ১৭০০ সালে রুপচন্দ্র রায়ের ছেলে রাজচন্ত্র রায়ের হাত ধরে ইট, পাথর আর সুড়কির গাঁথুনিতে নির্মাণ করা হয় লাকুটিয়া জমিদার বাড়িটি।চারশ বছরের পুরাতন এই বাড়িটির দৃষ্টিনন্দন নির্মাণশৈলী ও কারুকার্য ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে।
বাড়ির মূল প্রবেশপথের বাঁ পাশেই রয়েছে একটি পুকুর। পুকুরটিতে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন শান বাঁধানো সুন্দর একটি ঘাট। বর্তমানে এটি বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে আছে।বাড়ির তিন ধারে রয়েছে ধানের জমি। বাড়ির কাছেই রয়েছে একটি আমবাগান। বাগানটির পাশেই রয়েছে বিশাল এক দীঘি। একে সবাই রাণীর দীঘি বলে। শীতের সময় এখানে অনেকেই পিকনিক করতে আসেন। এই দীঘিতে প্রতি বছর ফোটে পদ্মফুল। যেমন বড় তেমন এর রং। পাতা গুলোও ভীষণ বড় বড়।বরিশালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পদ্মফুল ফোটে এই দীঘিতেই।
পুরানো হওয়ার কারণে বাড়ির চারদিকের পলেস্তারা খসে পড়তে শুরু করছে।রাজা রাজচন্দ্র রায়ের এ বাড়িটি উনিশ শতকেও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের পীঠস্থান হিসেবে ব্যাপক পরিচিত ছিল,কালের গর্ভে আজ তা শুধুই স্মৃতি।
স্থানীয় ষাটোর্ধ্ব বাসিন্দা মালেক আফসারী বলেন, আমার জন্মের পরে থেকেই এই জমিদার বাড়িটি দেখছি। আমার পূর্ব পুরুষদের কাছে শুনেছি প্রজাকল্যাণ ও বিভিন্ন ধরনের জনহিতকর কাজে জমিদার পরিবারের সদস্যদের খ্যাতি ছিল। লাকুটিয়া থেকে বরিশাল অবধি রাস্তা তার আমলেই তৈরি হয়েছিল। তখন বেশ ঘটা করে তিনি রাস উৎসব করতেন। তার দুই পুত্র রাখালচন্দ্র রায় ও প্যারীলাল রায় ব্রাহ্মধর্মের অনুসারী ছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় তৎকালীন বরিশাল শহরেই নির্মিত হয়েছিল রাজচন্দ্র কলেজ। শের-ই-বাংলা এ কে ফজলুল হক ওই কলেজ থেকেই তার কর্মজীবন শুরু করেছিলেন।
পাকিস্তান আমলে ওই এলাকায় পুষ্পরানী বিদ্যালয় নামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন এই জমিদার বাড়ির লোকেরা।
আজ সেই জমিদার বাড়ির জমিদারি নেই, নেই কোনো উত্তরসূরিও।জমিদার বংশের শেষ উত্তরাধিকারী দেবেন রায় চৌধুরী|
ঘুরতে আসা একাধিক পর্যটক জানান,এই স্থানটির প্রতিটি নিদর্শন সবার নজর কাড়ে।স্থানটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সংস্কারের ব্যবস্থা নিলে এটি রক্ষা করা সম্ভব হবে। আর না হয় এটি একসময় হারিয়ে যাবে।
ঘুরতে আসা বরিশাল কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া জাহান বলেন, জায়গাটা বেশ ভালো লাগে আমার। একদম ন্যাচারাল পরিবেশ। এখানে অনেকবার এসেছি। মন খারাপ হলেই এসে এখানের দীঘির পানিতে পা ডুবিয়ে বসে থাকি।
লাকুটিয়া জমিদার বাড়ির ইতিহাস ঐতিহ্যের সাক্ষী হতে বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের লোকজন ছবি তুলতে ফটোগ্রাফারসহ হাজির হন এখানে।