মুন্নি আক্তার,নিজস্ব প্রতিবেদক :
পতেঙ্গা–ফৌজদারহাট আউটার রিং রোডে যানবাহনের চলাচল বেড়েছে। দিন দিন ব্যস্ত হয়ে ওঠা এ সড়কটি যেন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, একই লেনে চলছে উভয়মুখী গাড়ি (বামের লেনের গাড়িগুলো চলছে ডানের লেনে, ডানের লেনের গাড়ি চলছে বামের লেনে)। এছাড়া রাতের অন্ধকারে সড়কটি অপরাধীদের স্বর্গরাজ্যেও পরিণত হচ্ছে।
মাদকসহ অসামাজিক কার্যকলাপের ঢেরায় পরিণত হচ্ছে সড়কের পাশের নানা পয়েন্ট। টানেল চালু হওয়ার আগেই রাস্তাটিতে আলোর ব্যবস্থা এবং উল্টোপথের গাড়ি চলাচল বন্ধ করার উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
সরেজমিনে পরিদর্শন এবং অনুসন্ধানে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগরীর যান চলাচল, আবাসন, পর্যটনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বড় ধরনের বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে নির্মিত পতেঙ্গা–ফৌজদারহাট আউটার রিং রোডটি অনিয়মের কবলে পড়েছে। আড়াই হাজার কোটিরও বেশি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রাস্তাটির একটি বড় অংশ অবৈধ ট্রাক টার্মিনালে পরিণত হয়েছে। রাস্তার বড় একটি অংশ জুড়ে রাতে দিনে লম্বা লাইনে পার্কিং করে রাখা হয় শত শত ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, কন্টেনার মুভারসহ বিভিন্ন ধরনের ভারী গাড়ি। চার লেনের রাস্তাটির একপাশের দুই লেনের এক লেন অবৈধ পার্কিং এ চলে যাওয়ায় মূলত এক লেন দিয়েই গাড়ি চলাচল করে। দিনে দিনে ব্যস্ত হয়ে ওঠা রাস্তাটি দিয়ে বিমানবন্দরসহ সন্নিহিত অঞ্চলের প্রচুর গাড়ি চলে। টানেল চালু হলে এই ব্যস্ততা বহুগুণে বেড়ে যাবে। দখলে দখলে অর্ধেক চলে যাওয়া রাস্তাটির বাকি অর্ধেক দিয়ে যান চলাচল করলেও বড় সংকট তৈরি করছে উল্টো গাড়ি। পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট কিংবা ফৌজদারহাট থেকে পতেঙ্গা উভয়মুখী যান চলাচলের ক্ষেত্রেই উল্টো গাড়ি চলার ঘটনা প্রাত্যহিক। সকাল থেকে গভীর রাত অব্দি শত শত উল্টো গাড়ি এই রাস্তায় অসংখ্য দুর্ঘটনা ঘটায়। রাস্তাটির কোনও না কোনও পয়েন্টে প্রায় প্রতিদিনই ছোট খাটো দুর্ঘটনা ঘটছে। এই নিয়ে ঘটে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ময়লাবাহী গাড়িগুলোর প্রত্যেকটিই উল্টোপথে চলাচল করে আনন্দবাজার ময়লা ডিপোতে যাতায়াত করে। টানেল চালু হলে রাস্তাটির ব্যস্ততা আরো বহুগুণে বেড়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে সূত্র বলেছে, উল্টো গাড়ি এবং অবৈধ পার্কিং রাস্তাটি নির্মাণের মূল উদ্দেশ্যই ভণ্ডুল করে দেবে।
প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তাটির পতেঙ্গা থেকে সাগরিকা টোল রোড পর্যন্ত ১৫.২ কিলোমিটার অংশ চার লেনের। টোল রোডের ফৌজদারহাট পর্যন্ত বাকি প্রায় ৫ কিলোমিটার অংশ দুই লেনের। এতে করে যান চলাচলের ক্ষেত্রে একটি সংকট রয়েছে। টানেল চালু হলে এই সংকট আরো প্রকট হয়ে উঠবে বলেও সূত্র জানিয়েছে।
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটির বিস্তৃত এলাকায় কোন লাইট নেই। সন্ধ্যার সাথে সাথে রাস্তাটি অন্ধকারে ডুবে যায়। তখন নানা ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপের আসর বসে। বিভিন্ন সময় এই রাস্তাটির পাশ থেকে কয়েকটি লাশ উদ্ধারের ঘটনাও ঘটেছে। রাস্তাটিতে বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবস্থা করা খুবই জরুরি বলেও সূত্র মন্তব্য করেছে।
পতেঙ্গা এলাকার বিশিষ্ট সমাজসেবক ওয়াহিদ জামানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সময়ের সংলাপকে বলেন, রাস্তাটি এলাকার চেহারা পাল্টে দিয়েছে এ কথা ঠিক। একই সাথে এটাও ঠিক যে রাস্তাটি নির্মাণের মূল উদ্দেশ্যে ভেস্তে যেতে বসেছে। অবৈধ পার্কিং, উল্টো গাড়ি, অন্ধকারসহ বিভিন্ন সংকট ক্রমে প্রকট হয়ে উঠছে। শহরের বহু উঠতি যুবক রাস্তাটিতে এসে গাড়ির স্পিড টেস্ট করে, যা বিপজ্জনকও বটে।