একটি রাজনীতিক দল, রাজনৈতিক দল হয়ে ওঠার জন্য যা কিছু দরকার, তা কি বিএনপিতে আছে? মরহুম জিয়াউর রহমান সৃষ্ট বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদ দল তথা বিএনপির জন্ম ইতিহাস অনেকেই জানে না। এমনকি বর্তমান যাঁরা বিএনপির রাজনীতি করেন, তাঁরাও অনেকে জানেন কি না সন্দেহ আছে। কোনো এক অদৃশ্য কারণে অনেকে বিএনপি করে থাকেন। জিয়াউর রহমান অবিভক্ত পাকিস্তানের একজন জুনিয়র সেনা কর্মকর্তা ছিলেন। তৎকালীন পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর যারা প্রধান ছিলেন, কীভাবে একটি রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক পরিবেশ ধ্বংস করে দিয়ে সেনা-সমর্থনে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন; তা জিয়াউর রহমান প্রত্যক্ষ করেছেন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে তাঁর যথেষ্ট অবদান আছে এবং তিনি একটি সেক্টর কমান্ডার ছিলেন।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পাকিস্তানি কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তি পেয়ে বাংলাদেশে এলেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ, যেখানে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা নেই বললেই চলে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সবকিছু শেষ করে দিয়েছে। হানাদার বাহিনী স্বপ্নেও কল্পনা করেনি, পাকিস্তান বিভক্ত হয়ে যাবে এবং বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্ম হবে।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান এই স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম রূপকার। একাত্তরের দেশ স্বাধীন হলো। বঙ্গবন্ধু দেশের হাল ধরলেন। ১৯৭৩ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হলো। সেখানে আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে রাষ্ট্র পরিচালার দায়িত্ব বঙ্গবন্ধু হাতে নিলেন। কিন্তু একটি সদ্য স্বাধীন দেশের জনগণ যে মাত্রায় রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য তথা দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হওয়ার প্রয়োজন ছিল; তাদের মধ্যে তার ঘাটতি পরিলক্ষিত হলো। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ, চোরাচালানি, মজুতদারি, মুনাফাখুরি, কালোবাজারিসহ সদ্য স্বাধীন দেশে এমন কোনো অপকর্ম নাই, যা একটি গোষ্ঠী করিনি। অপর দিকে রাজনীতির নামে সর্বহারা পার্টি এবং জাসদ যা করেছে, তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। একপর্যায়ে বঙ্গবন্ধু ভীতশ্রদ্ধ হয়ে দেশের সব জনগণকে নিয়ে বাকশাল নামক একদলীয় শাসন কায়েম করতে বাধ্য হয়েছেন। যে ব্যক্তিটি দেশের মানুষের অধিকারের জন্য জীবনের অধিকাংশ সময় জেলে কাটিয়েছেন। এমনকি স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ যখন সংঘটিত হয়েছিল তাঁর সুযোগ্য সহযোদ্ধাদের নেতৃত্বে, তখনো তিনি পাকিস্তানি কারাগারে ছিলেন। এত ত্যাগ-তিতিক্ষা পৃথিবীতে খুব কম নেতাই করে থাকেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ জাতির সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার অল্প কিছুদিন পর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হন। এর চেয়ে বেদনার ঘটনা বিশ্ব ইতিহাসে খুব বিরল।
কিন্তু তৎকালীন সেনাবাহিনীতে যে বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তাতে সে সময়কার সেনাবাহিনীর প্রধানের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। অপর দিকে তৎকালীন সেনাবাহিনীর উপপ্রধান ছিলেন জেনারেল জিয়াউর রহমান। তিনি পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর দীর্ঘদিনের অবৈধ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের বিভিন্ন প্রক্রিয়া দেখেছেন। বিশেষ করে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিতে ন্যক্কারজনক হস্তক্ষেপ উনি দেখেছেন এবং অবিভক্ত পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর একজন জুনিয়ার সেনা কর্মকর্তা হয়েও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছেন।
উল্লেখ্য, তাঁর যদি রাজনীতি করার ইচ্ছা থাকত, তাহলে তিনি মেজর জলিলের মতো সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করে রাজনৈতিক দল করতেন। তাহলে আজকে দেশেরই অবস্থা হতো না।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁকে সেনাবাহিনীর উপপ্রধান করেছেন। জিয়াউর রহমান ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট, ৩ নভেম্বর, ৭ নভেম্বর, খালেদ মোশাররফসহ অনেক সেনা কর্মকর্তার নির্মমভাবে নিহত হওয়ার ঘটনা দেখেছেন।
যেখানে সামান্য কয়েক বছর আগে পাকিস্তানের সামরিক স্বৈরশাসকের হাত থেকে দেশ মুক্তি করার জন্য তিনি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে দেশ স্বাধীন করলেন; সেখানে তিনি কীভাবে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক, সেনাবাহিনীর প্রধান এবং রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করলেন।
তাঁর একটু চিন্তা আসেনি যে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কারণে একটি দেশ স্বাধীন হয়ে গেছে। আর সেই সেনাবাহিনীর আমি একজন জুনিয়র কর্মকর্তা ছিলাম। আমি সেই সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি। আমি কীভাবে পাকিস্তানের স্বৈরশাসক আইয়ুব-ইয়াহিয়া খানের মতো সেনাবাহিনী থেকে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করি?
দাইয়ানুর রহমান (সম্পাদক) তাপস কুমার ঘোষ (প্রকাশক) শিমুল হোসেন, (নির্বাহী সম্পাদক) আজহারুল ইসলাম-বাবলু হোসেন ( নির্বাহী সম্পাদক)
অফিসঃ পশ্চিম শেওড়াপাড়া- ইকবল রোড বাসা নং- ৪১৬/৪ মিরপুর ঢাকা-১২১৬,
Email: Info@sumoyersonlap.com, taposhg588@gmail.com,shimul00252@gmail.com
01715522822, 01728.855627, 01710118632, 01709255325
https://www.sumoyersonlap.com
কপি করা নিষিদ্ধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ।