মোঃ শফিকুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে প্রতিদিনই বাড়ছে কুকুরে কামড়ানো রোগীর ভিড়। কিন্তু জলাতঙ্ক প্রতিষেধক সরকারি টিকা মিলছে না হাসপাতালগুলোতে। মানুষের হয়রানি ও ভোগান্তি বাড়লেও কুকুর নিধনে বা নিয়ন্ত্রণে নেই কোনো উদ্যোগ। প্রতিদিনই বেওয়ারিশ কুকুরের কামড়ের শিকার হতে হচ্ছে শিশু-বৃদ্ধসহ সব বয়সী মানুষ ও পশুকে।
জেলার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালসহ আট উপজেলায় অবস্থিত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভূরুঙ্গামারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জলাতঙ্ক ভ্যাকসিন রয়েছে। কোনো কোনো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত এক বছর ধরে নেই ভ্যাকসিন। ফলে অন্যান্য উপজেলার কুকুরে কামড়ানো রোগীদের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের ওপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু এই হাসপাতালটিও ৬ আগস্ট থেকে জলাতঙ্কের দ্বিতীয় ক্যাটাগরির ভ্যাকসিন শূন্য যেখানে এ ধরণের রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। সরকারি টিকা না থাকায় রোগীদের ফার্মেসি থেকে টিকা কিনতে হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের জেলা জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে কর্মরত নজরুল ইসলাম জানান, প্রতিমাসে টিকা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা গড়ে ১২০০-১৫০০ জন। তবে শীতকালে রোগীর পরিমাণ বেড়ে যায়। চলতি বছরে জুলাই পর্যন্ত মোট সাত হাজার ৮৬৬ জনকে জলাতঙ্ক প্রতিষেধক টিকা দেওয়া হয়েছে। সাধারণত ৩ ক্যাটাগরিতে রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হলেও দ্বিতীয় ও তৃতীয় ক্যাটাগরির রোগীকে প্রতিষেধক টিকা দেওয়া হয়। তবে দ্বিতীয় ক্যাটাগরির রোগীর সংখ্যাই বেশি।
কুড়িগ্রাম পৌর শহরের খেজুরেরতল এলাকার নবম শ্রেণি পড়ুয়া স্কুলছাত্র সালাউদ্দিন আহম্মেদ বলে, সকাল বেলা প্রাইভেট ও স্কুলে যাওয়ার সময় কুকুরের দল একা পেলে ঘেউ ঘেউ করে তেড়ে আসে। ফজরের সময় দাদু নামাজ পড়তে গেলে কুকুর থেকে বাঁচতে সঙ্গে লাঠি নিয়ে যায়।
নাগেশ্বরী উপজেলার বোয়ালেরডারা গ্রামের আব্দুল মোমেন বলেন, আমি প্রতিদিন হেঁটেই আমার কর্মস্থলে আসা যাওয়া করি। কুকুরের ভয়ে রাতে একা একা বাড়িতে যাওয়া যায় না। সবার আতঙ্কের কারণ হচ্ছে এই বেওয়ারিশ কুকুর।
রাজারহাট উপজেলা সদরের মোটরসাইকেলচালক এনামুল হক বলেন, আমি ব্যবসার কাজে প্রতিদিন বিভিন্ন ইউনিয়নে যাতায়াত করি। রাতের বেলা বেশ কয়েক জায়গায় মোটরসাইকেল দেখলে কুকুরের দল তেড়ে আসে। এর ফলে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে।
কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে জলাতঙ্ক প্রতিষেধক ভ্যাকসিন নিতে উলিপুর উপজেলার কাছারিপাড়া আসা আমিনুল ইসলাম বলেন, আমার বাড়ির আশপাশে বেশ কয়েকটি কুকুর মুরগি ও হাঁসকে ধরে খেয়ে ফেলছে এবং ছাগল, গরুসহ মানুষকেও কামড় দিচ্ছে। আমরা অনেক আতঙ্কে আছি। উলিপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভ্যাকসিন না পেয়ে এখানে এসেছি। তবে এখানে এসেও ভ্যাকসিন পেলাম না।
কুড়িগ্রাম সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) সভাপতি অ্যাডভোকেট আহসান হাবীব নীলু বলেন, আন্তর্জাতিক আইনে নিরীহ প্রাণিকে হত্যার বিষয়টি মানবতা পরিপন্থী হওয়ার কারণে বর্তমানে কুকুর নিধন বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশের প্রাণিকল্যাণ আইন-২০১৯ এর ৭ ধারা অনুযায়ী বেওয়ারিশ কুকুরসহ কোনো প্রাণিকে অপসারণ, হস্তান্তর ও ফেলে দেওয়া যাবে না। ফলে দিন দিন বেড়েই চলছে বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা। রাষ্ট্রের দায়িত্ব তার নাগরিকদের নিরাপত্তা দেওয়া। তাই রাষ্ট্রকেই কুকুর নিয়ন্ত্রণে নতুন কিছু ভাবতে হবে।
কুড়িগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মনজুর-এ-মুর্শেদ বলেন, জলাতঙ্ক প্রতিষেধক টিকার চাহিদা পাঠানো হয়েছে। সরবরাহ পেলে হাসপাতালগুলোতে পাঠানো হবে। অন্যদিকে আইনি কারণে কুকুর নিধন না করে বন্ধ্যা করণের বিষয়ে ভাবছে কর্তৃপক্ষ।
কুড়িগ্রাম পৌরসভার মেয়র মো. কাজিউল ইসলাম বলেন, হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী কুকুর নিধন বন্ধ থাকায় আমরা কুকুর নিয়ন্ত্রণে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছি না। কিন্তু কুকুরের কারণে কুড়িগ্রামে সব বয়সী মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছে। কুকুর নিয়ে জনদুর্ভোগ কমাতে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সরকারিভাবে কোনো সিদ্ধান্ত পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দাইয়ানুর রহমান (সম্পাদক) তাপস কুমার ঘোষ (প্রকাশক) শিমুল হোসেন, (নির্বাহী সম্পাদক) আজহারুল ইসলাম-বাবলু হোসেন ( নির্বাহী সম্পাদক)
অফিসঃ পশ্চিম শেওড়াপাড়া- ইকবল রোড বাসা নং- ৪১৬/৪ মিরপুর ঢাকা-১২১৬,
Email: Info@sumoyersonlap.com, taposhg588@gmail.com,shimul00252@gmail.com
01715522822, 01728.855627, 01710118632, 01709255325
https://www.sumoyersonlap.com
কপি করা নিষিদ্ধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ।