মোঃ আরিফুজ্জামান সাগর, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের অর্জনগুলো নস্যাৎ করতে দেশি ও আন্তর্জাতিক গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে। জনগণের ভাগ্য নিয়ে কেউ যেন ছিনিমিনি খেলতে না পারে, সেদিকে সবাইকে নজর দিতে হবে।
বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে শুভেচ্ছা জানাতে আসা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, খুব স্বাভাবিকভাবে যারা স্বাধীনতার বিরুদ্ধে বা যারা জাতির পিতাকে হত্যা করেছে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে একটা গভীর ষড়যন্ত্র চলতেই থাকবে। যেন আমাদের অর্জনগুলো নস্যাৎ না হয়, সেজন্য জনগণকে সজাগ থাকতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগই একমাত্র দল, যারা বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণের চিন্তা করে। বাকিগুলো লুটেরার দল। তারা এদেশের মানুষের কল্যাণের চিন্তা করে না। সে কথা মাথায় রেখে ওই সন্ত্রাসী খুনি ও যুদ্ধাপরাধীদের দল যেন আর বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে, সেদিকে সবাইকে নজর দেওয়ার অনুরোধ জানাই।
বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, যারা ছিল রীতিমত ভোট ডাকাত তারাই এখন গণতন্ত্র চায়! ভোটের অধিকারের কথা বলে। যাদের জন্মই হয়েছে অবৈধভাবে তাদের কাছে শুনতে হয় এসব কথা। এগুলো মাঠের কথা মাঠে থাকবে। আমরা জনতার সঙ্গে থাকব, জনতার পাশে থাকব।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, জনগণের আস্থাই আওয়ামী লীগের একমাত্র শক্তি। জনগণের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করে তাদের ভোটের মাধ্যমেই তো আমরা সরকারে এসেছি। তাদের বিশ্বাস-আস্থাটাই আমাদের একমাত্র শক্তি। আর কোনো শক্তি নেই। বাংলাদেশের জনগণই আওয়ামী লীগের একমাত্র বন্ধু।
আওয়ামী লীগ দেশের নির্বাচনী পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা এনেছে জানিয়ে তিনি বলেন, গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার কবে ছিল? ‘৭৫ সালের পর থেকে যেভাবে ভোট চুরি, ভোট কারচুপি আর ভোট ও মানুষের ভাগ্য নিয়ে খেলা চলছে, বরং আওয়ামী লীগেরই নানা পদক্ষেপের ফলে আজ বিভিন্ন সংস্কার করে নির্বাচন পদ্ধতি গণমুখী হয়েছে। জনগণের ভোট সম্পর্কে জনগণ সচেতন হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব’- এই স্লোগান দিয়ে মানুষকে ভোট সম্পর্কে সচেতন করা- এটা তো আওয়ামী লীগই করেছে। এটা তো আর কারো নয়। নির্বাচন কমিশন করার জন্য আইন করে দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, যেখানে ভুয়া ভোটার দিয়ে ভোটার তালিকা হতো, সেখানে ছবিসহ ভোটার তালিকা ও আইডি কার্ড করা হয়েছে। নির্বাচনী পদ্ধতিকে সংস্কার করে নিয়ে আসা বা মানুষের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন- এগুলোও তো আওয়ামী লীগেরই করে দেওয়া। স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স সবই করে দিয়েছি আমরা। তারপরও কেউ কেউ আমাদের গণতন্ত্র ও নির্বাচনের ছবক দিতে আসে।
দলকে সাংগঠনিকভাবে আরও শক্তিশালী করার নির্দেশনা দিয়ে নেতাকর্মীদের আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, সংগঠনগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে, মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। পাশাপাশি উন্নয়নের গতি যাতে ত্বরান্বিত হয় সে ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের সংগঠন, জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাবে। এটাই আমাদের একমাত্র প্রতিজ্ঞা। কাজেই জাতির পিতার যে স্বপ্ন- দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো, সে লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি আমরা। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা ইনশাল্লাহ আমরা গড়ে তুলবো।
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যের কথা পুনরুল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে শুধু উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ নয়, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়ে সেটাও আমরা কার্যকর করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, সততা থাকলে ও উদ্দেশ্য সৎ হলে যেকোনো ক্ষেত্রে সাফল্য আনা যায়- এই কথাটা সবসময় মনে রাখি। লক্ষ্য একটাই- দেশের মানুষের জীবনটা উন্নত করে দেওয়া, তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করে দেওয়া। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব চেয়েছিলেন দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে। সেই হাসি ফোটানোই আমাদের একমাত্র কর্তব্য। সেটা আমরা করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এটাকে ধরে রেখে বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এই প্রতিজ্ঞা নিয়ে চলতে হবে। মনে রাখতে হবে, ধনসম্পদ কারো চিরদিন থাকে না। আর মরলেও মাটির নিচে কেউ কিছু সঙ্গে নিয়ে যেতে পারে না। কিন্তু বেশি করলে বদনামটা নিয়ে যেতে হয়।
মানুষের কল্যাণে কাজ করার তৃপ্তির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আজকে যখন একজন ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষকে ঘর দেই, তাদের মুখের হাসি আর চোখের পানি যখন একাকার হয়ে যায়- আমি মনে করি এর চেয়ে বড় পাওয়া এবং স্বার্থকতা আর কিছু নেই।
১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসার দিনের কথা স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, যেদিন ফিরে এসেছিলাম, পেয়েছিলাম এদেশের জনগণকে আর আমার আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মীকে। সেদিন থেকে আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশের জনগণ তারাই তো আমার পরিবার।
এর আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। পরে দলের সহযোগী-ভাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারাও ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান তাঁকে।