গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ
দেশের সকল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের অপসারণে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার বক্তব্যের প্রতিবাদে গাইবান্ধায় বিক্ষোভ করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান, সদস্য (মেম্বার) ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্যরা।
আজ (মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর) দুপুর ১২টার দিকে জেলা শহরের ডিবি রোডে এই বিক্ষোভ পালন করেন তারা।
বিক্ষোভ মিছিলে গাইবান্ধা সাত উপজেলার ৮১টি ইউনিয়নের ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্যসহ সহস্রাধিক জনসাধারণ অংশ নেন। এতে পুরো শহর জুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
এর আগে শহরের আসাদুজ্জামান মার্কেটের সামনে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন তারা। এসময় কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন সদর উপজেলার খোলাহাটী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুম হক্কানি,লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খোরশেদ আলী খুশু, ফুলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজহারুল হান্নান,সাঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন সুইটসহ অন্যরা।
এসময় বক্তারা অবিলম্বে স্থানীয় সরকারের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার ও মহিলা সদস্যদের অপসারণের বক্তব্য প্রত্যাহার করে নেওয়ার দাবি জানান। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারিও উচ্চারণ করেন আন্দোলনকারীরা। পরে মানববন্ধন শেষে তারা আবারও বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে গাইবান্ধার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর একটি স্মারকলিপি দেন।
স্মারকলিপি উল্লেখ করা হয়, ইউনিয়ন পরিষদ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের একটি সবচেয়ে জনপ্রিয় ও শক্তিশালী কাঠামো। স্বাধীনতার পরবর্তীতে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এবং মেম্বারদের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে। দেশের এ প্রাচীন প্রতিষ্ঠানটি সাধারণ জনগণের আশা ও ভরসার আশ্রয়স্থল। এই প্রতিষ্ঠানটি প্রত্যন্ত অঞ্চলের সকল জনগণকে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সেবা দিয়ে থাকে। জন্ম/মৃত্যু নিবন্ধন, নাগরিকত্ব সনদ, প্রত্যয়নপত্র, আদালত কর্তৃক প্রেরিত মোকদ্দমা তদন্ত, বিরোধ নিষ্পত্তিকরণ, ব্যবসায়িক ট্রেড লাইসেন্স প্রদান, স্থানীয়ভাবে সালিশ বৈঠকের মাধ্যমে মামলা মোকদ্দমা নিষ্পত্তিকরণ, বিভিন্ন প্রকার ট্যাক্স আদায়, সরকারি সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণসহ ৩৯ প্রকারের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে থাকেন।
এছাড়া সরকারের বিভিন্ন সময় জারিকৃত সামাজিক, সাংস্কৃতিক, আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখাসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড দায়িত্বশীলতার সাথে পালন করে থাকেন। উপজেলা পরিষদকে কার্যকর রাখতেও ইউনিয়ন পরিষদ সক্রিয় ভূমিকা পালন করে বলেও উল্লেখ করা হয়।
এছাড়া আরও উল্লেখ করা হয়, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতনের পর আপনি অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। দায়িত্বভার গ্রহণের পর স্থানীয় সরকার বিভাগ ১৯ আগস্ট ইউনিয়ন পরিষদ সচল রাখা সংক্রান্ত একখানা পরিপত্র জারি করা হয়। স্থানীয় সরকার আইন ও উক্ত পরিপত্রের আলোকে আমরা খুব ভালোভাবে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে আসছি। কিন্তু সম্প্রতি স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বেসরকারি একটি টিভি চ্যানেলে ইউনিয়ন পরিষদসমূহ মেয়াদের পূর্বেই ভেঙ্গে দেয়ার ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেছেন। তাহার এমন বক্তব্যে আমরা ব্যথিত এবং ও অনিশ্চয়তায় ভুগছি। স্মারকলিপি স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা জনাব এ এফ হাসান আরিফ এর বক্তব্য প্রত্যাহার করে মেয়াদের পূর্বে ইউনিয়ন পরিষদ যেন ভেঙ্গে দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়।