স্টাফ রিপোর্টারঃ গাইবান্ধা সদর উপজেলা কামারজানীর প্রান্তিক কৃষকদের কাছে সরকার নির্ধারিত মূল্য তালিকা থেকে অতিরিক্ত দামে সার বিক্রির অভিযোগ উঠেছে!
সরকারের নির্ধারিত মূল্যের চেয়েও অধিক মূল্যে বিক্রি হচ্ছে সার। এতে ক্ষুব্ধ ও হতাশ স্থানীয় কৃষকরা।অভিযোগ রয়েছে, সরকারি নির্দেশনার তোয়াক্কা না করেই মাইদুল,ও গ্যাং মিস্টার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অতিরিক্ত দামে সার বিক্রি করছে।
গত কয়েক মাসের প্রথম সপ্তাহে ইউরিয়া সারে কেজিপ্রতি ৬ টাকা বাড়িয়েছে সরকার। এরপর বাড়ানো হয়েছে জ্বালানি তেলের দাম।তেলের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কৃষিতে ব্যবহৃত অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম। খরচ বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে কৃষক।
সদর উপজেলার কামারজানী ঘাটে বিভিন্ন কালোবাজারী , বাজারে ১১০০ টাকার ইউরিয়া সার বিক্রি করছে ১২৪০ থেকে ১৩৫০ টাকায়, ৮০০ টাকার ডিএপি সারের বস্তা ১০০০ থেকে ১১০০ টাকায়।অন্যদিকে ১১০০ টাকার টিএসপি সার বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকায় এবং ৭৫০ টাকার এমওপি ১০০০ থেকে ১১০০ টাকা বস্তা দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে প্রতি বস্তা সার কেনার সময় কৃষককে অতিরিক্ত গুনতে হচ্ছে ৩০০-৪০০ টাকা।
সরকার নির্ধারিত মূল্যে এখন পর্যন্ত কোনো কৃষক সার সংগ্রহ করতে পারেননি বলে জানান অনেক কৃষক। এমনকি চলতি আমন মৌসুমে সার ও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে উৎপাদন ব্যয় উঠবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে তাদের।
সার ও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে প্রতি বিঘায় ধান উৎপাদনে বাড়তি তিন হাজার টাকা খরচ পড়বে। প্রতিবিঘা জমিতে ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা ব্যয়ে ফসল উৎপাদন করে ন্যায্যমূল্য না পেলে বড় ধরনের সঙ্কটে পড়তে হবে।
জানা গেছে, এতে সার ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের শক্ত হাত রয়েছে। সরকারি সারের ডিলারদের দেখভাল করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।
সঠিকভাবে দেখভাল না করায় বেশি দামে সার বিক্রির বিষয়টি এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে।
আর এ কারণেই ফসল উৎপাদনের অত্যাবশ্যকীয় তিনটি সার পেতে কৃষকদের গুনতে হচ্ছে প্রায় দেড়গুণ টাকা।
নির্ধারিত মূল্যের চেয়েও বেশি মূল্যে সার বিক্রি করছে খুচরা ব্যবসায়ীরা। প্রতিটি দোকানে লাল কাপড়ে সরকার নির্ধারিত মূল্য তালিকা টানানোর নির্দেশ দেওয়া থাকলেও কোথাও তা মানা হচ্ছে না।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আপনারা নিউজ করেন নজরে আসলে সার ডিলার বা ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কৃষি এ দেশের জনমানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা প্রদানের অন্যতম উৎস। আজ দেশে খাদ্য ঘাটতি নেই। কৃষি ক্ষেত্রে নানা ভর্তুকিসহ উচ্চ ফলনশীল বীজ সরবরাহ করছে সরকার। কৃষিঋণ সময়মতো কৃষকের হাতে পৌঁছে দিচ্ছে।
এভাবে পৌঁছানোর ফলে খাদ্যপণ্যের উৎপাদন বেড়েছে। আর তাই বেড়েছে খাদ্য নিরাপত্তা।দেশে কৃষিপণ্যের উৎপাদনে কৃষককে সহায়তায় সরকারের আন্তরিকতার অভাব নেই। অভিযোগ উঠেছে, সদর উপজেলা কামারজানীতে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়েও অধিক মূল্যে বিক্রি হচ্ছে সার।সংশ্লিষ্টরা সব ধরনের সারের মূল্য নির্ধারণ করে দিলেও সিন্ডিকেট, মাইদুল মজুদদারদের অতিমুনাফার লোভের কারণে নির্ধারিত মূল্যে সার পাচ্ছে না কৃষক।সার নিয়ে তৈরি হয়েছে সিন্ডিকেট। সার সঙ্কটে কৃষক যাতে ভোগান্তির শিকার না হয় সে জন্য সংশ্লিষ্টদের সচেতন ও সচেষ্ট থাকতে হবে।কোনো অজুহাত দেখিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে সার নিয়ে কোনো কারসাজি করতে না পারে সে জন্য কঠোর নজরদারি প্রয়োজন।
সংশ্লিষ্টদের উচিত সদর উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সার ডিলারদের প্রতি নজরদারি বাড়ানো।প্রয়োজনে দোষীদের জরিমানাসহ অন্য শাস্তির আওতায় আনতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, সময়মতো সরকার নির্ধারিত মূল্যে সার কৃষকের কাছে পৌঁছানো জরুরি, যাতে কৃষিপণ্যে উৎপাদনে ব্যাঘাত না ঘটে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টরা কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।