সরকারের নানা উদ্যোগের পরও বেশির ভাগ পণ্যের মূল্য কমছে না। এতে উচ্চ মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তুলছে। এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি সচিব সভা ডাকা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে তাঁর কার্যালয়ে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে বাজার পরিস্থিতি, খাদ্য, অর্থনীতি, জ্বালানি, কৃষি ও নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নসহ অন্তত ১০ এজেন্ডা রয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের কর্মপরিকল্পনার বিষয়েও আলোচনা করা হবে।
এদিকে চাল, ভোজ্য তেল, চিনি ও খেজুর—এই চার নিত্যপণ্যের ওপর শুল্ক কমাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শুল্ক কমানোর এই নির্দেশ দেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান গতকাল মঙ্গলবার রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, অর্থ, বাণিজ্য, কৃষি, খাদ্য, শিল্প, এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ বাজার ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সচিবরা বর্তমান পরিস্থিতি ও মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম সম্পর্কে সচিব সভায় প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন। অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবরাও সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী অন্য কোনো মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সম্পর্কে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট সচিব তাঁর মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করবেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী সার্বিক বিষয়ে বেশ কিছু নির্দেশনা দেবেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী অনেক দূরদর্শী এবং দেশের সব বিষয়ে অবগত। সব কিছুই উনার চোখের সামনে ভাসে। তাই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবরা কাজের পরিকল্পনা করবেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সব সচিবের কাছে এসংক্রান্ত এক চিঠি পাঠানো হয়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবরা বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন এখন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠাবেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় অনুবিভাগ প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিবেদনগুলো সমন্বয় করছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিবেদনগুলো উপস্থাপন করা হবে বৈঠকে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক উপসচিব নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সচিব সভা অনুষ্ঠিত হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জ্যেষ্ঠ সচিব কালের কণ্ঠকে বলেন, নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। সে অনুযায়ী মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।
গুরুত্ব পাবে চলমান পরিস্থিতি ও নির্বাচনী ইশতেহার
মন্ত্রিসভা বিভাগ সূত্র জানায়, এবার সচিব সভায় প্রধানমন্ত্রী সশরীরে উপস্থিত থাকার সম্মতি দিয়েছেন এবং প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে। তাই এবারের সভার গুরুত্ব অনেক বেশি। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে অনেকে উদ্বিগ্ন। এমন পরিস্থিতিতে সব সচিব প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একসঙ্গে আলোচনার সুযোগ পেলে পরিস্থিতি মোকাবেলায় সহজ হবে।
একাধিক সাবেক সচিব কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে দেশের সার্বিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা করা হয়। এর মধ্যে খাদ্য নিরাপত্তা, দুর্যোগ, স্বাস্থ্য পরিস্থিতিসহ জনসম্পৃক্ত বিষয়গুলো সর্বোচ্চ গুরুত্ব পায়। এবারের সভায়ও তেমনটাই হতে পারে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দেশের অবস্থার সঙ্গে প্রশাসনিক অনেক বিষয়ও আলোচনায় আসে। সচিবরা নিজেদের কিছু দাবিদাওয়াও এই সুযোগে সরকারপ্রধানের কাছে করে থাকেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সর্বশেষ সচিব সভা হয়েছিল ২০২২ সালের ২৭ নভেম্বর। ওই বৈঠকে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে দেশের অর্থনীতিকে সুসংহত রাখা, জ্বালানি নিরাপত্তা, প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা, কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সারের জোগান নিশ্চিত করা এবং পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় আনা, সরকারি কাজে আর্থিক বিধি-বিধান অনুসরণ, সরকারি সেবা প্রদানে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার বিষয়ক পরিকল্পনা এবং ভূমিকম্প, অগ্নিকাণ্ড, বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি, পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিস্থিতি, সুশাসন ও শুদ্ধাচার এবং বিবিধ প্রশাসনিক বিষয়ে আলোচনা করা হয়।