মধ্যনগর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি:
মরা শব্দটি শুনলেই আমরা শিহরিত হয়ে উঠি। মরা মানে যার কোনো প্রাণ নেই। মৃত প্রাণহীন ব্যক্তিকেই মরা বলা হয়। আর এই মরা বা মৃত ব্যক্তিদের ভূতুড়ে নাম দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে ‘মরা সমবায় সমিতি’। এমন ঘটনাটি ঘটিয়েছেন সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের মধ্যস্বত্বভোগী একটি চক্র।
স্থানীয় কয়েক গ্রামের গ্রাহকেরা এই সমিতির খপ্পরে পড়ে অতিরিক্ত সুদ দিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন। এই সমিতির খপ্পরে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষেরা। এই সমিতির পরিচালনা করছে একটি মধ্যস্বত্বভোগী চক্র। এ যেন আসলেই মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে কম সুদে সরকারি ঋণ পেতে হলে জামানতের প্রয়োজন হওয়ায় যাদের জামানত দেওয়ার মতো কিছু নেই তারাই এসব সমবায় সমিতির কাছ চক্রবৃদ্ধি সুদে ঋণ গ্রহণ করছেন।গত ৪ জুলাই সমিতির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে ,সরকারি অনুমোদন ছাড়াই ২০/২৫ বছর আগে অসহায় ও দরিদ্র কোনো মানুষ মারা গেলে দাফন কাফনে সহায়তা করা ও সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন করার নামে উপজেলার বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামে ৫৯ জন সদস্য নিয়ে গঠন করা হয় ‘ ‘মরা সমবায় সমিতি’। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে প্রতি সদস্যদের কাছ থেকে এককালীন ২০ টাকা করে চাঁদা নেওয়া হয়।সেই টাকা একত্রিত করে মোট ১১,৮০ টাকা হয়। বছরে এ টাকা ৫০%-৬০% সুদে গ্রাহকদের ঋণ বিতরণ করা হয়। প্রতি বছর ২০ আষাঢ় এই সমিতির টাকা উত্তোলনের জন্য সভা অনুষ্ঠিত হয়। গত ২০ বছরে সুদের চক্রবৃদ্ধি হারে সেই টাকা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ লক্ষাধিক টাকার মতো। এসব অনুমোদনবিহীন সমিতি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রাহক জানান,’ এই সমিতির কাছ থেকে আমি ৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ছিলাম। কোনো গ্রাহকে কে ঋণ দিলে সেই টাকা পরিশোধ করতে বিলম্ব হলে গ্রাহকদের কে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও মারধরের ঘটনাও ঘটিয়ে থাকে। এদের সমিতির চক্রবৃদ্ধি সুদের কারনে অনেক মানুষ এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে।তবে সরকারি ঋণ যদি সহজভাবে পাওয়ার ব্যবস্থা থাকতো আমরা এসব সমবায় সমিতির কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করতাম না।
ওই ইউনিয়ন সমিতির কোষাধ্যক্ষ সাবেক ইউপি সদস্য মো: মরম আলী বলেন, ‘গরীব অসহায় কোনো মানুষ মারা গেলে তার দাফন কাফনে সহায়তার জন্য এই মরা সমিতি গঠন করা হয়েছিল।প্রতি বছর এই সমিতির লাভের অংশ থেকে আমরা এসব সহযোগিতা করে আসছি।তবে আমাদের এই সমিতির সরকারি কোনো অনুমোদন নেই।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক মধনগর শাখার ব্যাবস্থাপক বিশ্বজিত চক্রবর্তী বলেন,’ আমরা প্রান্তিক শ্রেণির কৃষকদের উৎসাহিত করি যাতে তারা কম সুদে সরকারি ঋণ করে। কিন্তু অনেক কৃষক আছেন যারা সরকারি ঋণ গ্রহণ না করে চক্রবৃদ্ধি সুদে সমবায় সমিতির ঋণ গ্রহণ করছেন।
উপজেলায় অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সমবায় কর্মকর্তা শরীফ আহমদ বলেন ,’সরকারি অনুমোদন ছাড়া কোনো সমিতি গঠন করে ঋণ বিতরণ করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমোদন ছাড়া কোনো সমিতি গঠন করে ঋণ বিতরণ করা যাবে না।
অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শীতেষ চন্দ্র সরকার জানান ,’ যারা এভাবে মৃত ব্যক্তিদের নাম দিয়ে এই ধরনের কাজ করছে তাদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।