এম মনির চৌধুরী রানা, চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ
বর্ষা মৌসুম যতটাই যত ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে জলাবদ্ধতা আতঙ্ক। গতবছর টানা আগস্টের শুরুতে টানা বৃষ্টিপাতে স্মরণকালের ভয়াবহ জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে নগরের বাসিন্দারা। সেই তিক্ত অভিজ্ঞতাকে সঙ্গী করেই এবার চট্টগ্রাম থেকে জলাবদ্ধতা তাড়াতে একসাথে কোমর বেঁধে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ। পাশাপাশি পাহাড় কাটাকে জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে পাহাড় কাটা রোধে জোরালো সাঁড়াশি তৎপরতা বৃদ্ধির কথা জানিয়েছেন তারা। পাশাপাশি দুই সংস্থার সমন্বয়ে গঠন করা হবে কুইক রেসপন্স টিম। নগরীর টাইগারপাস এলাকায় চসিক ভবনে সমন্বয় সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সম্প্রতি মোহাম্মদ ইউনুচ সিডিএ চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণের পর নগরের সেবা সংস্থা গুলোকে নিয়ে এটাই প্রথম সমন্বয় সভা। সভায় চসিক, সিডিএ ছাড়াও চট্টগ্রাম ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো), চট্টগ্রাম বন্দরসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। নগরের সব সংস্থাকে সমন্বয় করে একটি শক্তিশালী কুইক রেসপন্স টিম গঠন করতে বলেছেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। জলাবদ্ধতার ভোগান্তি থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দেওয়ার জন্য কুইক রেসপন্স টিমের রূপরেখা প্রস্তাব করা হয়েছে। সেখানে সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামসকে প্রধান এবং চসিকের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহীন-উল ইসলাম চৌধুরীকে সদস্য সচিব করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে চসিকের পক্ষ থেকে। তাছাড়া ওয়াসা, পাউবো, বন্দরসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো থেকে একজন করে প্রতিনিধি করে একটি দল গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। মূলত টানা বর্ষায় নগরের যেসব এলাকায় প্রকট জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে সেসব এলাকায় তড়িৎ গতিতে কাজ করবে এ দলটি। দলে সব সংস্থার প্রতিনিধিরা যুক্ত থাকার কারণে জলাবদ্ধতা ঠেকানোর কাজটি সহজ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, সিডিএ, চসিক, ওয়াসা, বন্দরসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন হবে। জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলে ভোগান্তি কমাতে তারাই তড়িৎ সিদ্ধান্ত গঠন করে কাজ করতে পারবে। বর্ষা আসন্ন,আতঙ্ক বাড়ছে, সামান্য বৃষ্টিতে মুরাদপুরসহ নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। মানুষ অসন্তোষ প্রকাশ করছে। খালের দুই পাশে গাইডওয়াল দিলেই কাজ শেষ নয়। মাটি অপসারণ করতে হবে। কিছু খালে কী পরিমাণ মাটি উত্তোলন করেছে তা জানতে হবে। পানি উঠবে, কেউ বলতে পারবে না পানি উঠবে না। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অনেক পরিবর্তন আসছে। দুবাই শহর, নিউইয়র্ক শহরে পানি উঠছে। আমাদের খাল গভীর করতে হবে। সেই মাটি উত্তোলন করা গেলে জনগণ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবে। তাছাড়া চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় কাটা নিয়ে জোরালো আলোচনা হয়েছে। নগরীতে পাহাড় কাটাকে অন্যতম কারণ উল্লেখ করে মেয়র রেজাউল বলেন, পাহাড় খেকোরা শুধু পাহাড়ই সাবাড় করছে না, সাথে তারা জলাবদ্ধতাও সৃষ্টি করছে। পাহাড় কাটার ফলে পাহাড়ের মাটি নরম হয়ে এসে নালায় পড়ছে। এতে করে নালায় পানি নিষ্কাষণ হচ্ছে না। পাহাড় কাটা বন্ধে সব সংস্থা একযোগে কাজ করতে হবে। গতবার দেখলাম লালখান বাজারের পাহাড়ের মাটি জিইসি পর্যন্ত চলে গেছে। চসিককে লাখ লাখ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে সিলট্রেপ করতে হবে। সমন্বয় সভায় জলাবদ্ধতা তাড়াতে যৌথভাবে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন সংস্থা দুটির প্রতিনিধিরা। পাশাপাশি পাহাড় কাটা রোধ, নতুন প্রকল্প গ্রহণ, পলিথিন-ককশিটের ব্যবহার কমানো, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফেরানোসহ নানা ইস্যুতে একযোগে কাজ শুরুর প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন সিডিএ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুছ। এ সময় সিডিএ চেয়ারম্যান বলেন, এখানে চসিক মেয়র এবং আমি দুজনই মুক্তিযোদ্ধা। আমাদের মধ্যে দেশপ্রেম আছে। আমাদের সঙ্গে কাউন্সিলররা আছেন তাদের মধ্যে ও দেশপ্রেম আছে। আমরা হাতে হাত মিলিয়ে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একযোগে কাজ করব। আগে দেখতাম সিডিএ-চসিক ধাক্কাধাক্কি করত। এরা বলত, আমাদের কাজ গুলো ওরা নিয়ে গেল, ওরা বলত আমাদের কাজগুলো এরা নিয়ে গেল। এগুলো এখন থেকে আর চলবে না। সিডিএ, চসিক, ওয়াসা পৃথকভাবে যে প্রকল্পই আনুক সেটা চট্টগ্রামের মানুষের জন্য। যদি আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করতে না পারি তাহলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাউকে ছাড় দেবেন না।
সভায় উপস্থিত ছিলেন, চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এফ এম ফজলুল্লাহ, চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস, কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিন, চসিক কাউন্সিলর ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি মোবারক আলী, কাউন্সিলর আবুল হাসনাত বেলালসহ বিভিন্ন সংস্থার বিভাগীয় প্রধানরা।