মুন্নি আক্তার,নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন, বাধ্য করে কোনো কিছু আদায় করা যায় না। ট্যাক্সের ক্ষেত্রেও এই কথা প্রযোজ্য। একদিক দিয়ে বাধ্য করবেন, আরেক দিক দিয়ে ফাঁকি দিবে। আমরা দেখেছি, দেশে যত ব্যবসায়ী আছে তার মধ্যে শতকরা ৭০ জন ফাঁকি দিচ্ছে। গতকাল বুধবার সকালে নগরীর আগ্রাবাদের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু হলে সেরা করদাতাদের হাতে সম্মাননা স্মারক ও সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, এক থেকে দেড় কোটি ব্যবসায়ী আছে। আমি ধরে নিচ্ছি এক কোটি ব্যবসায়ী ট্যাক্স দেয়ার সামর্থ্য রাখে। তাই দেশের সমৃদ্ধির জন্য করের আওতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। আরেকটি বিষয় খেয়াল করছি, আমাদের ট্রেড লাইসেন্সের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। নগরীর অলিগলির ক্ষুদ্র মুদি দোকানির কাছে যখন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ইন্সপেক্টর যান এবং ট্রেড লাইসেন্স দেখতে চায়, তখন তারা ট্রেড লাইসেন্স দিতে পারে না। দোকানিকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়, ট্রেড লাইসেন্স নাই কেন? তখন উত্তর আসে ৩০০ টকার ট্রেড লাইসেন্সের জন্য ৩ হাজার টাকা ইনকাম ট্যাঙ দিতে হয়। ৩০০ টাকা ট্রেড লাইসেন্স করতে আমার কষ্ট হয়, সেখানে আমি ৩ হাজার টাকার ট্যাঙ আমি কোত্থেকে দিবো। এতে আমি মনে করি, একদিকে সিটি কর্পোরেশন ৩০০ টাকার ট্রেড লাইসেন্সের ফিও হারাচ্ছে, আবার কর অঞ্চলগুলো ৩ হাজার টাকার ট্যাঙও হারাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে একটু ভাবতে হবে।
কর আপীলাত ট্রাইব্যুনালের সদস্য মকবুল হোসেন পাইক বলেন, দেশের কর ব্যবস্থাকে আরো সহজ ও আধুনিকীকরণ করা হচ্ছে। আমাদের দেশে অনেক উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান আছে, যেগুলোর গর্বিত অংশীদার করদাতারা। রাষ্ট্রীয় কোষাগার সমৃদ্ধ করতে করদাতারা যেমন কর দিচ্ছেন, তেমনি কর কর্মকর্তা এবং কর আইনজীবীরা নিরলসভাবে কাজ করছেন।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ স্মার্ট দেশ হবে। ২০৩৭ সালের মধ্যে বিশ্বের ২০ তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে। এটা কোনো ম্যাজিক না। প্রধানমন্ত্রীর সাহসী নেতৃত্ব, সব শ্রেণির কর্মকর্তা ও কর্মচারীর অক্লান্ত পরিশ্রমেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এসব কাজের জন্য ভ্যাট ও ট্যাঙ দিতেই হবে। কর দিতে হবে। ভ্যাট দিতে হবে। এসব না দিলে উন্নয়ন সম্ভব না। দেশ এগিয়ে যাবে না।
তিনি আরো বলেন, অটোমেশন হলে ভ্যাট ও ট্যাঙ আদায় বাড়াতে হবে। শুধু ভ্যাট বা ট্যাঙ দেয়– শুধু তাদের উপরই ছুরি চলে। ব্যবসায়ী কোটির উপরে। ভ্যাট ও ট্যাঙ দিচ্ছেন ১০–১৫ লাখ। গ্রামেও ভ্যাট ও ট্যাঙের জন্য যেতে হবে। তাদেরকেও নেটের মধ্যে আনতে হবে। সেখানেও সচেতনতা বাড়াতে হবে। ট্যাঙ ও ভ্যাট দেওয়ার পলিসি যত সহজ হবে– তত আদায় বাড়বে। চট্টগ্রামের মানুষ ভ্যাট ও ট্যাঙ দিতে রেডি। কিন্তু তাদের যেনো হয়রানি করা না হয়।
স্বাগত বক্তব্যে চট্টগ্রাম কর অঞ্চল–১ এর কমিশনার ইকবাল বাহার বলেন, বিশাল জনগোষ্ঠীর মধ্যে কর দেওয়ার সক্ষমতা রাখেন অনেকে। কিন্তু সবাই কর দেন না। তারপরেও আগে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ১০০ কোটি ছিল, এরপর হাজার কোটি টাকা হয়েছে– এখন লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এই লক্ষ্য পূরণে আমরা কাজ করছি। কখনো পুরোপুরি সফল হয়েছি। কখনো কিছুটা পিছিয়ে ছিলাম। তবে আমরা কাজ করে গেছি।
তিনি বলেন, করদাতারা কর দিয়ে নাগরিক দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে অবদান রাখছেন। তাদের এই অবদানকে সম্মান জানাতে সেরা করদাতাদের সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে। সারাদেশে ৫২৫ জন আর চট্টগ্রামে ৪২ জন এই পুরস্কার পাচ্ছেন। তাদের সবাইকে শুভেচ্ছা জানাই।
চট্টগ্রাম কর অঞ্চল ২ এর কমিশনার সামিয়া আখতার বলেন, এই যে আমি মাটির উপর দাঁড়িয়ে আছি– এই মাটির জন্য আমরা ট্যাঙ দেবো। রোহিঙ্গারা শত কোটি টাকা দিলেও আমরা কর নেবো না। কর দিতে পারা স্বাধীন নাগরিক হিসেবে আমার জন্য গর্বের। এই জন্য কর দেবো। কর বিভাগ, কাস্টস এবং চেম্বার মিলে চট্টগ্রাম বেইজড বিনিয়োগ বাড়াতে কাজ করা যায়। অর্থনৈতিক মন্দায় গৃহীত প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপ বাস্তবায়নে এটা সহায়ক হবে।
চট্টগ্রাম কর অঞ্চল ৩ এর কমিশনার শাহাদাৎ হোসেন শিকদার বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে। চট্টগ্রাম, কঙবাজার, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দবান এবং সিটি কর্পোরেশনের ৭ জন করে ৪২ জন করদাতাদের সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে। করদাতারা সারা বছর ধরে কষ্টার্জিত আয়ের নির্দিষ্ট অংশ কর দিয়ে সরকারি কোষাগার সমৃদ্ধ করেছেন। এজন্য আপনাদের কৃতজ্ঞতা জানাই।
চট্টগ্রাম কর অঞ্চল ৪ এর কমিশনার সাবিনা ইয়াছমিন বলেন, উন্নয়নের চালিকা সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট। এ জন্য বিপুল রাজস্ব দরকার। সভ্যতা ও উন্নয়নের জন্য আপনারা যারা কর দিয়ে সম্মানিত হয়েছেন তাদের অভিনন্দন। আপনারা উন্নয়নের গর্বিত অংশীদার। আপনারা আমাদের ব্রান্ড অ্যাম্বেসেডর।
কাস্টমস এঙাইজ ও ভ্যাট ট্রেনিং একাডেমির মহাপরিচালক মো. মাহবুবুজ্জামান বলেন, কর জনগণের প্রতি রাষ্ট্রের হক। এই হক আদায় করতে হবে। এটা ফরজ কাজের মধ্যেই পড়ে। সিটিজেন চার্টারের মাধ্যমে কর কর্মকর্তারাও নিজেদের প্রস্তুত করছেন। এন্ট্রি লেভেলে কিছু সমস্যা এখনো হচ্ছে। কিন্তু সিনিয়র লেভেলে এটি সমাধানে আন্তরিকভাবে কাজ করা হয়। আগের ভীতিকর পরিবেশ এখন নেই। সেবা আধুনিকায়ন হচ্ছে।
দাইয়ানুর রহমান (সম্পাদক) তাপস কুমার ঘোষ (প্রকাশক) শিমুল হোসেন, (নির্বাহী সম্পাদক) আজহারুল ইসলাম-বাবলু হোসেন ( নির্বাহী সম্পাদক)
অফিসঃ পশ্চিম শেওড়াপাড়া- ইকবল রোড বাসা নং- ৪১৬/৪ মিরপুর ঢাকা-১২১৬,
Email: Info@sumoyersonlap.com, taposhg588@gmail.com,shimul00252@gmail.com
01715522822, 01728.855627, 01710118632, 01709255325
https://www.sumoyersonlap.com
কপি করা নিষিদ্ধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ।