মুন্সীগঞ্জ জেলার নাট্যাঙ্গনে বিশেষ অবদানের জন্য হিরণ কিরণ থিয়েটারের সম্মাননা পেয়েছেন নাট্যশিল্পী, শিক্ষক ও সাংবাদিক জিতু রায়। শনিবার সন্ধ্যায় জেলা শিল্পকলা একাডেমির মঞ্চে হিরণ কিরণ থিয়েটারের ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ৪ দিনব্যাপী জাতীয় নাট্যােৎসের তৃতীয় দিন তাকে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়। একই সাথে প্রবীন নাট্যশিল্পী আতাউর রহমান, মুকুল রানী দাস, এস এম সুমন, এইচ এম মোহনকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মুন্সিগঞ্জ ২ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি শিল্পীদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন। হিরণ কিরণ থিয়েটারেরর প্রতিষ্ঠাতা নাট্যকার, নির্দেশক ও অভিনয় শিল্পী জাহাঙ্গীর আলম ঢালীর সঞ্চালনায় এবং দলটির সভাপতি দেলোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে অনান্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের সদস্য মোরশেদা বেগম লিপি, পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম প্রকৌশলী মো. এনামুল হক, দৈনিক সভ্যতার আলোর সম্পাদক মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জল, দৈনিক রজতরেখা পত্রিকার সম্পাদক এড. শাহিন মোহম্মদ আমানুল্লাহ, প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড.ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল এন্ড কলেজের সহকারী অধ্যাপক ফারহানা মির্জা, সম্মিলত সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম স্বপন, বিক্রমপুর থিয়েটারে সভাপতি হুমায়ূন ফরিদ, অনিয়মিত সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাবেক সভাপতি আরিফ মোড়ল,আওয়ামী শিল্পী গোষ্ঠীর সাধারন সম্পাদক তামান্না সরকার মনি, সঙ্গীত শিল্পী গোলাম মোস্তফা।
প্রসঙ্গত সাংস্কৃতিক কর্মী জিতু রায় শৈশবে মাত্র ১২ বছর বয়সে থিয়েটার সার্কেলের ’সত্যের সন্ধানে’ নামক পথনাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক চর্চা শুরু করেন। সেই থেকে এখন পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে অভিনয়, নির্দেশনা, আবৃত্তি, উপস্থাপনা ও লেখালেখির মাধ্যমে সাংস্কৃতিক চর্চা করে আসছেন। সংস্কৃতির বিভিন্ন শাখায় ২২ বছরের এই পথচলায় সমৃদ্ধ হয়েছেন নিজে সমৃদ্ধ করেছেন প্রাচীন ইতিহাস ঐতিহ্যের পূণ্যভূমি বিক্রমপুর তথা মুন্সীগঞ্জকে।
একাধারে তিনি, মঞ্চ নাটক, পথনাটক, মূকাভিনয়, জনসচেতনতামূলক গণনাটকে অভিনয়, নাটক রচনা, ও নির্দেশনা দিয়ে আসছেন। তার অভিনীত নাটকের সংখ্যা ৫৭ টি। এরমধ্যে মঞ্চ নাটক ১৮ টি, পথনাটক ১৫ টি, গণনাটক ১০ টি, মূকাভিনয় প্রযোজনা ১০ টি। এসব নাটকের প্রদর্শনী সংখ্যা প্রায় বারো শো। তার অভিনীত নাটকগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ডাকঘর, কাজী নজরুল ইসলামের রাক্ষুসী, পল্লী কবি জসীমউদ্দিনের নকশী কাঁথার মাঠ, মীর মোশারফ হোসেনের জমিদার দর্পন অন্যতম।
পাশাপাশি কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর মাগো ওরা বলে কবিতা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধ সহ বাঙালীর সকল সংগ্রামের উপর লেখা বাংলা কবিতার অবলম্বনে রচনা করেছেন নিরিক্ষাধর্মী নাটক মাগো ওরা বলে।
দীর্ঘসময় অভিনয়ের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তিনি ২টি মঞ্চনাটক এবং দুইটি পথনাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন। তার মধ্যে রেলগাড়ি নাটকটি বাংলাদেশ টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হয়েছে।
অভিনয়, নাটক রচনা ও নির্দেশনা ছাড়াও তিনি একাধারে একজন আবৃত্তিশিল্পী ও উপস্থাপক। চারটি আবৃত্তি প্রযোজনায় অংশগ্রহণ করেছেন। ২০১২ সাল থেকে জেলা প্রশাসন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট এবং বিভিন্নি সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন কর্তৃক আয়েজিত একুশে ফেব্রুয়ারী, স্বাধীনতা দিবস, বুদ্ধিজীবি দিবস, হানাদার মুক্ত দিবস সহ বিভিন্ন জাতীয় দিবস ও অনান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করছেন।
তিনি তার সাংস্কৃতিক কার্যক্রমকে ছড়িয়ে দিয়েছেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে। তিনি ৭বার জাতীয় শিশু- কিশোর নাট্যেৎসবে, ১১ বার জাতীয় পথ নাট্যেৎসবে, ৩ বার ঢাকা বিভাগীয় নাট্য উৎসবে এবং ২০১১ সালে ভারতের নয়াদিল্লীতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক নাট্যেৎসবে অংশগ্রহন করেন।
নাটকের পাশাপাশি করেছেন সাহিত্য চর্চা। ছাত্র জীবনেই করেছেন ষান্মাষিক সাহিত্য পত্রিকা প্রণয়ের সম্পাদনা। এছাড়াও করেছেন প্রত্ননগরী মুন্সীগঞ্জের ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও প্রত্নতত্ব নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র বিউটিফুল মুন্সীগঞ্জের গবেষনা ও পান্ডুলিপি রচনা। একই সাথে জেলা প্রশাসনের উন্নয়নের চিত্রের উপর পাঁচটি প্রামাণ্যচিত্রের গবেষণা ও পাণ্ডুলিপি রচনা করেছেন তিনি। এসব প্রামান্যচিত্র প্রদর্শনির মাধ্যমে জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মুন্সীগঞ্জ জেলার প্রতিনিধিত্ব করে।
পেশাগত জীবনে তিনি প্রথম শ্রেণিতে সমাজকর্ম বিষয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে বর্তমানে শিক্ষকতা করছেন জেলার স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল এন্ড কলেজে। পাশাপাশি দায়িত্ব পালন করছেন, দেশের শীর্ষ স্থানীয় সংবাদ ভিত্তিক টেলিভিশন ইনডিপেনডেন্ট টিভিতে, কিশোর কিশোরী ক্লাবের আবৃত্তি শিক্ষক হিসেবে। এছাড়াও তিনি মুন্সীগঞ্জের জনপ্রিয় অনলাইন টেলিভিশন নিউজ সেভেন্টি ওয়ান ডট টিভির নির্বাহী সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরচিালক এবং রেডিও বিক্রমপুর ৯৯.২ এফ এম এর সাবেক প্রধান প্রযোজকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি থিয়েটার সার্কেল, উচ্চারন আবৃত্তি চক্র, সংগঠনের সাধারন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং ও ছিলেন।
সমাজকর্ম বিষয়ে অধ্যয়নকালীন সময় থেকেই সমাজকল্যান, নারী উন্নয়ন, পরিবেশ উন্নয়ন, স্বাস্থ্য সেবা প্রভৃতির উন্নয়নের ক্ষেত্রে একজন সক্রিয় সমাজকর্মির ভূমিকা পালন করছেন তিনি।পাশাপাশি গণমাধ্যম কর্মি হিসেবে সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে সমাজের সামনে তুলে এনেছেন বহু স্বেচ্ছাসেবক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে।
তার এই ধারাবাহিক পথযাত্রার মূল্যায়ন করেছেন বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন। পেয়েছেন কাজের স্বীকৃতি। অর্জন করেছেন বাংলাদেশ পিপলস থিয়েটার এসোসিয়েশনের মঞ্চ কুড়ি পদক, চেতনায় একাত্তর অ্যাওয়ার্ড, আলোর প্রতিমা সম্মাননা, মানব সেবা রক্তদান সংস্থা স্বেচ্ছাসেবী সম্মাননা, বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি সম্মুখ সারির যোদ্ধা সম্মাননা, ইউনিটি দ্যা ফ্রেন্ডশিপ গ্রুপ সম্মুখ সারির যোদ্ধা সম্মাননা, দ্যা হেলমেট বিশেষ সম্মাননা, হিরণ কিরণ থিয়েটার গুণীজন সম্মাননা