বুধবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:০৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
মুন্সীগঞ্জে হারিয়ে যাচ্ছে ২০০ বছরের মৃৎ শিল্পের ঐতিহ্য মুন্সিগঞ্জে সচিবের বাড়িতে ডাকাতির অভিযোগ মুন্সীগঞ্জে ঘনকুয়াশায় নৌযান ৮ ঘন্টা আটকা, হাজার মানুষের চরম দূর্ভোগ মুন্সীগঞ্জে শহীদ জিয়া পরিষদের সদর থানার সভাপতি আলী আজগর পলাশ,সম্পাদক আরিয়ান রাজ ( রউফ) উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী সাতক্ষীরা জেলা সংসদের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত বোয়ালখালীতে আগুনে পুড়ল দোতলা ঘর ফুলবাড়ীতে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী শিক্ষা শিবির অনুষ্ঠিত বিগত বছরে ৬৩৫৯ সড়ক দুর্ঘটনায় ৮৫৪৩ জন নিহত – যাত্রী কল্যাণ সমিতি বোয়ালখালীতে বিএনপির কর্মী সমাবেশ অনুষ্ঠিত জাগৃতি কার্যকরী সংসদ নির্বাচন ২০২৫-২০২৬ শপথ গ্রহণ ও কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে

ঝালকাঠিতে কমছে খেজুর গাছের সংখ্যা,সহজে মিলছে না সুস্বাদু রস

রিপোর্টার নামঃ
  • আপডেট সময় বুধবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০২৩
  • ১৩৬ বার পঠিত

মাসুমা জাহান,বরিশাল ব্যুরো:

শীতের সকালে মিষ্টি রোদে বসে সুস্বাদু খেজুর রসের পিঠা পায়েস খাওয়ার মজাই আলাদা।কিন্তু সেই গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী সুস্বাদু খেজুর রস এখন আর তেমন দেখা যায় না।

সময়ের পরিক্রমায় আধুনিক নগরায়ন ও অবাধে বৃক্ষ নিধনের ফলে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ জনপদের খেজুর গাছ এবং রস। এতে করে কমেছে গাছির সংখ্যাও।

কয়েক বছর আগেও হেমন্তের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে গাছ কাটার প্রাথমিক কাজ গুলো করার হিড়িক পড়ত।গ্রামের পথে-ঘাটে,নদী বা পুকুরপাড়ে,বড় রাস্তার দু’পাশে বা ক্ষেতের সীমানা ঘেঁষে শত শত গাছের মাথার নরমাংশ বিশেষ ভাবে কাটতেন গাছিরা।১৫-১৬টি পাতা রেখে গাছের উপরিভাগের বাকলসহ অপ্রয়োজনীয় অংশ পরিষ্কার করা হয়।আড়াআড়ি ভাবে বাঁধা বাঁশের খণ্ডে দাঁড়িয়ে কোমরে ও গাছে রশি বেঁধে ধারালো দা দিয়ে গাছিদের গাছ কাটার দৃশ্য ছিল দেখার মতো। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে সেই দৃশ্য এখন তেমন চোখে পড়ে না।

ঝালকাঠি সদর উপজেলার বিষখালী নদী তীরবর্তী সাচিলাপুর বেড়িবাঁধে ছিল সারি সারি খেজুর গাছ।সেখান থেকে প্রতিদিন কয়েক মণ রস পেতেন গাছিরা।নির্বিচারে বৃক্ষ নিধনের ফলে গাছের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমেই যাচ্ছে।এছাড়া ভাটায় ইট পোড়ানোর কাজে খেজুর গাছ ব্যবহারও থেমে নেই।

সাচিলাপুর এলাকার শাহাদাত হোসেন জানান,তিনি সেই ছোটবেলা থেকেই তার বাবাকে রস সংগ্রহ করতে দেখেছেন। তখন প্রচুর রস আসত বাড়িতে।খেজুরের গুড়ের মৌ মৌ গন্ধে মাতোয়ারা হতো পুরো বাড়ি।কিন্তু বর্তমানে গাছের সংখ্যা একেবারেই কমে গেছে।একসময় তারা কয়েকশ খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতেন।কিন্তু চলতি বছর মাত্র ২০-২৫টি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করছেন।প্রতিটি গাছ থেকে দৈনিক এক হাড়ি (চার-পাঁচ কেজি) রস হয়,যা ৪০-৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন।

প্রায় ৪০-৪৫ বছর ধরে রস সংগ্রহ করছেন কিস্তাকাঠি গ্রামের ষাটোর্ধ্ব খবির উদ্দিন।তিনি জানান,সাধারণত একটি খেজুর গাছ রস দেওয়ার উপযুক্ত হতে ৫-১০ বছর সময় লেগে যায়। আর একটি গাছ থেকে রস পাওয়া যায় ২০-২৫ বছর পর্যন্ত। তবে প্রতিটি গাছে কী পরিমাণ রস পাওয়া যাবে,তা নির্ভর করে গাছির দক্ষতা এবং গাছের ওপর।

স্থানীয়রা জানান,আগে শীত এলে সহজেই মিলতো খেজুরের রস।কিন্তু এখন কোথাও খেজুরের গাছ বা গাছির তেমন সন্ধান পাওয়া যায় না।খুঁজতে খুঁজতে তিন/চার গ্রাম ছাড়িয়ে হয়তো একজন গাছির সন্ধান পাওয়া যায়। তবে খেজুর রসের চাহিদা প্রচুর।সিরিয়াল দিয়ে আগে অর্ডার করে রাখতে হয়।প্রতি হাড়ি (চার/পাঁচ কেজি) বিক্রি হয় দেড়শত টাকায়।তাও রস পেতে প্রতিযোগিতায় জয়ী হওয়ার মতো তৎপরতা চালাতে হয়।

ঝালকাঠি জেলা বন কর্মকর্তা জিয়া বাকলাই বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নে খেজুর গাছ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।খেজুর গাছের পাতা ও রস দিয়ে বিভিন্ন ধরনের শিল্প গড়ে তোলা সম্ভব।একটি পূর্ণবয়স্ক খেজুর গাছ দিনে দুই থেকে চার লিটার রস দিতে পারে।সপ্তাহে দুই-তিনদিন বিরতি দিয়ে এভাবে শীত মৌসুমে প্রায় দুমাস রস পাওয়া যায়।

তিনি বলেন,খেজুর গাছ কমে যাওয়ার একটি কারণ হলো, অনেকেই বেশ চড়া দামে ইটভাটার মালিকদের কাছে গাছ বিক্রি করে দেন এবং তারপর নতুন করে আর কেউ খেজুর গাছ লাগান না।তাছাড়া গ্রামীণ সড়কের সংস্কার কাজের কারণেও অনেক স্থানে খেজুর গাছ উজাড় হয়ে গেছে।

এছাড়া রস সংগ্রহের জন্য গাছিদের সংখ্যা কমে যাওয়ায় অনেকে খেজুর গাছ কেটে অন্য ফলের গাছ লাগাচ্ছেন। এভাবেই খেজুর গাছের সংখ্যা দিনদিন কমে যাচ্ছে বলেও জানান এ বন কর্মকর্তা।

সাংবাদ পড়ুন ও শেয়ার করুন

আরো জনপ্রিয় সংবাদ

© All rights reserved © 2022 Sumoyersonlap.com

Design & Development BY Hostitbd.Com

কপি করা নিষিদ্ধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ।