মাসুমা জাহান,বরিশাল ব্যুরো:
ঝালকাঠিতে নাগরদোলা থেকে ছিটকে পড়ে নারী ও শিশুসহ তিনজন গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনায় মেলা কর্তৃপক্ষের গাফিলতিকে দায়ী করছেন স্থানীয় লোকজন।এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে কেউ কেউ ফেসবুকেও পোস্ট দিয়েছেন।গতকাল শনিবার রাতে ঝালকাঠি শহরের শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে ঘটনাটি ঘটে।
স্থানীয় লোকজন জানান,মেলায় দর্শনার্থীদের জন্য ডিজেলচালিত শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে দুটি নৌকা ও একটি নাগরদোলা চালানো হচ্ছিল,যা ছিল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।মেলা কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণেই এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার দুলাল সাহা বলেন,মেলায় আকর্ষণ বাড়াতে এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ রাইড চালু করেছে মেলা কর্তৃপক্ষ।সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় নাগরদোলাটি অস্বাভাবিকভাবে গতি বেড়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে।এখানে নাগরদোলা কর্তৃপক্ষের গাফিলতি আছে। বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত হোক।
জেলা নাগরিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর বলেন,পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা না রেখেই মেলা কর্তৃপক্ষ এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ নাগরদোলার ব্যবস্থা করেছে,যা ঠিক হয়নি।
জীবনানন্দ দাশের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ঝালকাঠি শহরের শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে পক্ষকাল ব্যাপী রূপসী বাংলা মেলা।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়,মেলায় হরেক রকম পণ্যের দোকানের পাশাপাশি নাগরদোলা রয়েছে। ডিজেলচালিত শ্যালো ইঞ্জিনের সাহায্যে নাগরদোলা চলছিল। এতে চড়ার জন্য শিশুদের পাশাপাশি নারী-পুরুষও ভিড় জমান।গতকাল রাত পৌনে ১০টার দিকে নাগরদোলাটি হঠাৎ দ্রুতগতিতে ঘুরতে শুরু করে।তখন যাত্রীরা চিৎকার শুরু করেন।একপর্যায়ে উঁচু থেকে শিশুসহ তিনজন পড়ে গুরুতর আহত হন।আহত ব্যক্তিরা হলেন সদর উপজেলার বাউকাঠি গ্রামের মো. শুক্কুরের স্ত্রী পুতুল বেগম (৩৫) ও রাজাপুরের মীরেরহাট বাজারের ইউনুস আলী হাওলাদারের ছেলে মো. ইদ্রিস (৫০)।তবে নাঈম (১০) নামের আহত শিশুটির বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি।পরে তাঁদের উদ্ধার করে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়।অবস্থার অবনতি হলে পুতুল ও ইদ্রিসকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতেই বরিশালের শের–ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শেবাচিম) পাঠানো হয়েছে।
ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক নবীন কুণ্ডু বলেন,তিনজনের অবস্থাই গুরুতর।ছোট শিশুটির মুখমণ্ডলের নিচের অংশ থেকে রক্ত ঝরেছে।আহত নারী যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন।আর ইদ্রিসের হাত-পা ভেঙে গেছে।উন্নত চিকিৎসার জন্য দুজনকে দ্রুত বরিশালে পাঠানো হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী মাইনুল ইসলাম বলেন,মেলার মাঠের পশ্চিম দিকে চলতে থাকা নাগরদোলাটির গতি হঠাৎ বেড়ে যায়।আর তখনই ছয়টি বক্সের দুটি বক্স একটির সঙ্গে আরেকটি লেগে যায়। এতে প্রায় ৩০ ফুট ওপর থেকে ছিটকে মাটিতে পড়ে রক্তাক্ত আহত হন তিনজন।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ফারাহ গুল বলেন,এমন দুর্ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত।বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।আহত ব্যক্তিদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।
স্থানীয় স্কুলশিক্ষক জহির সুমন বলেন,রাইডের ছয়টি বক্সের মধ্যে দুটি বক্সে যাত্রী তোলায় নাগরদোলাটি ভারসাম্য রাখতে পারেনি।এ কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটে। কারও গাফিলতির কারণে এ ঘটনা ঘটেছে কি না, তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।