মাসুমা জাহান,বরিশাল ব্যুরোঃ
ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিখোঁজ যাত্রীদের স্বজনদের ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে গত এক বছরে বরগুনার ১৪টি লাশের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে।অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে দাফন হওয়া ২৩ জনের মধ্যে পরিচয় পাওয়া ওই ১৪ জনের কবরও রয়েছে।বরগুনা জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে গত বুধবার ওই ১৪টি লাশের পরিচয় শনাক্ত করার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে ঝালকাঠি সদর উপজেলার সুগন্ধা নদীতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী ওই লঞ্চে আগুন লাগে।এ সময় লঞ্চটিতে প্রায় ৮০০ যাত্রী ছিলেন। তাঁদের মধ্যে আগুনে পুড়ে ৪৯ জনের মৃত্যু হয়।
বরগুনা জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে ১৪টি লাশের পরিচয় মিলেছে।এর মধ্যে বরগুনা সদর উপজেলার ১০ জন।তাঁরা হলেন হনুফা আক্তার (১৯), মোতাচ্ছিম (১১), ইদ্রিস খান (৫২), হাকিম শরীফ (৪৫), মোসা. পাখি (৪৫), মো. নসরুল্লাহ (১ বছর ৩ মাস), মো. মহিন (৩৭), মোসা. সুমাইয়া আক্তার (১৫), আবদুল্লাহ (৪) ও আছিয়া (১ বছর)। এ ছাড়া বেতাগী উপজেলার মো. আরিফুর রহমান (৩৬), তাহসিনা আকতার (৪), রিনা বেগম (৩২) ও রুশ্মি আক্তার (১২) রয়েছেন।
নিহত মহিনের স্ত্রী মোসা:লিপি বেগম (২৩) বলেন, ‘ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে আমার স্বামীর লাশ শনাক্ত করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা পরিচয়ে দাফন করা লাশের মধ্যে ১৯ নম্বর কবরটি আমার স্বামীর।সরকারের কাছে আমার স্বামীর কবর নিজেদের বাড়িতে আনার জন্য আবেদন করব।এক বছরে এখন পর্যন্ত আমরা সরকারি ভাবে কোনো অনুদান পাইনি। ইউপি চেয়ারম্যান বা মেম্বারদের কাছ থেকেও না।ধার-দেনা করে আমাদের সংসার চলছে।সামনের দিন গুলো সন্তান-শ্বশুর-শাশুড়ি নিয়ে কীভাবে চলব, তা নিয়ে চিন্তায় আছি।যাদের কারণে আমাদের একমাত্র আয়ের লোক হারিয়ে গেছে, সেই লঞ্চ কর্তৃপক্ষ আমাদের কোনো ক্ষতিপূরণ দেয়নি।
নিহত হাকিম শরীফের মা আহাজারি করে বলেন, ‘ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে নিখোঁজ থাকা ছেলে,ছেলের বউ ও নাতির লাশ শনাক্ত করা হয়েছে।ঘটনার সময় ২৩ জনের পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় তাঁদের বরগুনা সদরের পোটকাখালী গ্রামে গণকবরে দাফন করা হয়।আমি সেখানে গিয়ে তাঁদের কবর দিয়ে এসেছি।বিগত এক বছর ধরে মানুষের সহায়তায় আমাদের পরিবারের ভরণপোষণ চলছে।বর্তমানে আমাদের পরিবারের অবস্থা খুবই খারাপ।আমার ছেলের তিনটি মেয়ে পড়াশোনা করে। ওদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হয় আমাদের।স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আমাদের দুই বস্তা চাল দিয়েছিলেন, তাতে কোনোমতে চলছে।
জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে নিখোঁজ যাত্রীদের মধ্যে ১৪ জনকে শনাক্ত করতে পেরেছি।ওই ১৪ পরিবারকে আর্থিক সহায়তার জন্য আমরা নৌ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি। তাদের আর্থিক সহায়তা প্রস্তুত করা হয়েছে।যেকোনো দিন তারা এসে এই ১৪ পরিবারকে সহায়তা দেবে।যদি কোনো স্বজন শনাক্ত কবরের অংশবিশেষ নিতে চান, তাহলে ধর্মীয় রীতিনীতি পালন করে কবর হস্তান্তর করা হবে।