মাসুমা জাহান,বরিশাল ব্যুরো:
দৃঢ় সংকল্প থাকলে অসাধ্যও কাজ ও সহজ হয়ে যায়।এমনকি শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকেও জয় করে সামনে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।প্রয়োজন কেবল আকাশছোঁয়া স্বপ্ন আর লক্ষ্যের পিছে লেগে থাকা।তাহলে সে স্বপ্ন একদিন ধরা দেয় হাতের মুঠোয়।অদম্য ইচ্ছায় ভর করে ঠিক এমনটাই করে দেখিয়েছেন ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার পশ্চিম ছিটকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. তুহিন হোসেন।যিনি হার মানেননি শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কাছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়,৯ বছর বয়সে পলিও আক্রান্ত হয়ে সবকিছু তছনছ হয়ে যায় তুহিনের।বন্ধ হয় ইচ্ছে মতো চলাফেরা।চিকিৎসার পরে একটু একটু চলাফেরা করতে পারলেও স্কুল ছিল বেশ দূরে।তাই পড়ালেখার বিষয়ে তেমন পাত্তা দেয়নি পরিবার।কিন্তু শত বাধা বিপত্তি পেরিয়ে স্বপ্ন জয়ে অবিচল ছিলেন তুহিন।
বাড়ির পাশেই পূর্ব ছিটকি দারুসসুন্নাত দাখিল মাদরাসায় পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হন।১৯৯৪ সালে সেখান থেকে দাখিল পাশ করেন।উত্তর তালগাছিয়া ফাজিল মাদরাসা থেকে আলিম ও ফাজিল শেষ করেন।সেখান থেকে নলছিটির মোল্লারহাট জেড এ ভুট্টো ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০০৮ সালে জেনারেল ডিগ্রি (পাসকোর্স) উত্তীর্ণ হন। এরপর শিক্ষক হওয়ার দৃঢ় স্বপ্ন লালন করতে থাকেন।
তুহিন বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিয়োগ পরীক্ষায় পর পর তিনবার অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হই।২০১০ সালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ পেলে স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হয়।চলাফেরার সমস্যাকে তোয়াক্কা না করে শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য স্কুলে যাই সবার আগেই।শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় আগ্রহী করতে বাড়ি বাড়ি যাই।অভিভাবকদের সঙ্গে আলাপ করে কোনো শিক্ষার্থী পিছিয়ে থাকলে তাদের অগ্রগামী করার পরামর্শ দেই।কোনো শিক্ষার্থী দু-তিন দিন স্কুলে অনুপস্থিত থাকলে তাদের বাড়িতেও যাই।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীরা যাতে পড়াশোনায় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে এজন্য তাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতার চেষ্টা করি।তাদের নিয়েই আমি বাকিটা জীবন কাটাতে চাই।
বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়,‘তিনি আমাদের যত্ন নিয়ে পড়ান।আমাদের সঙ্গে খেলাধুলাও করেন।তাকে আমাদের খুব ভালো লাগে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাইনুদ্দিন নিউটন বলেন,তুহিন বিদ্যালয়ে আসতে কখনো দেরি করেননি।আমার বাড়ি অনেক দূরে, কাঁঠালিয়া থেকে আসতে হয়। মাঝে মধ্যে অফিসের কাজে কাঁঠালিয়ায় থাকলে তুহিন স্কুলের দায়িত্ব পালন করেন।