বদরুদ্দোজা প্রধান, পঞ্চগড় প্রতিনিধিঃ
পঞ্চগড় রেল স্টেসনের দেয়াল ঘেষে একটা বড় কদম গাছ। বর্ষাকালে হাজারো কদম ফুলে সুশোভিত হয়ে ওঠে গাছটি। গাছটির নিচেই পুরোনো টিনের জোড়া লাগানো একটা ঝুপড়ি ঘর। এই ঘরেই ৩০ বছর ধরে বসবাস করে আসছেন কুলসুম বেগম। বয়স তার ৫০ বছর। লোকাল ট্রেন ঝাড়া মোছা আর প্লাস্টিকের বোতল কুড়িয়েই চলছে তার জীবন।
সদর উপজেলার হাড়িভাষা এলাকার কুলসুম বেগম বাবা মাকে হারিয়েছেন ছোট বেলাতেই। একমাত্র কন্যা সন্তানও মৃত্যু বরণ করে তার। স্বামী তাকে তালাক দিয়ে দেয় ৩০ বছর আগে। তারপর তিনি হয়ে যান ঠিকানাহীন। আশ্রয় নেন পঞ্চগড় রেল স্টেসনে। প্রথমদিকে প্লাটফরমেই কাটতো রাত দিন। একসময় স্টেসনের পাশেই নিজেই তৈরী করেন একটা ঝুপড়ি ঘর। স্টেসন হওয়ার কারণে এখান থেকে ওখানে করে বেশ কয়েকবার ঘর সরাতে হয় তাকে। ঘরের ভেতর প্লাস্টিকের বোতলের স্তুপ, নানা ধরনের জিনিষপত্র, পাশেই ছোট্ট রান্নাঘর। কুপি জালিয়েই রাত কাটাতে হয় তাকে। কুড়ে ঘরের বাড়িতেই চুরি হয় বেশ কয়েকবার। দুবৃত্তরা তার এনআইডি কার্ডও চুরি করে নিয়ে যায়। কুলসুম বেগম লোকাল ট্রেনে ঝাড়ু দেয়ার কাজ করে মাসে পান ৪ হাজার টাকা। নিদারুণ কষ্টে একা একাই জীবন চলছে তার। পাহাড়বাড়ি গ্রামের মৃত: তমরুদ্দিনের মেয়ে কুলসুম বেগম বলেন ১১ বছর বয়সে মা মরে গেলেন। বাবাও চলে গেলো। একমাত্র ভাইও মারা গেলো ওষুখে। বিয়ের পরে এক মেয়ের মা হয়েছিলাম। সেও জন্মের ৮/১০ দিনের মাথায় মরে গেলো। স্বামী আমাকে তালাক দিয়ে আরেকজনকে বিয়ে করে নতুন সংসার পাতলো। হয়ে গেলাম একা। আমার আর যাবার যায়গা থাকলোনা। একটা বোন আছে। কষ্ট করে চলে। মাঝে মাঝে গ্রামে যাই। ঘুরে টুরে আসি। বোনটার বাড়ি যাই। ঝুপড়ি ঘরে কয়েকবার চুরি হয়। ভোটার আইডি কার্ডটাও নিয়ে গেছে চোর। যাক। ভোটার হয়ে কি করবো। কেউ কোন খোঁজ নেয়না। রাতে লকাল ট্রেনটা আসে। ঝাড়– দিতে দিতে রাত ১ টা বেজে যায়। তারপর ঝুপড়িতে ফিরে এসে চারটা খাই। সকালেই সারাদিনের রান্না করে নেই।
স্টেসন এলাকার নুরুজ্জামান জানান, অনেক দিন থেকেই এখানে খুব কষ্ট করে জীবন যাপন করছেন কুলসুম বেগম। ঝুপড়ি ঘর আছে কিন্তু একটা পুরোনো চৌকিতে থাকেন তিনি। ঘরের ভেতর পোকা মাকড় ঘুড়ে। বর্ষা কালে পানি ঢুকে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) পঞ্চগড় জেলা শাখার সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম খায়ের জানান, স্টেসনে এলেই কুলসুম বেগমের সাথে দেখা হয়। এখানে ওখানে ঘুরে। তার থাকার অবস্থা সত্যিই শোচনীয়। সরকার বা বিত্তশালীরা তার জন্য উদ্যেগ নিতে পারে।
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাকির হোসেন জানান, খোঁজ নিয়ে সহযোগিতার উদ্যোগ নেয়া হবে।