কামরুজ্জামান শিমুল,বাগেরহাট বিশেষ প্রতিনিধিঃ
ইতিহাস ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ তৎকালীন খলিফাতাবাদ আজকের বাগেরহাটে জন্ম নিয়ে কর্মজীবন শুরু সেনা কর্মকর্তার দায়িত্ব থেকে। অবসরের পর এদেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি । দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন। বাগেরহাট -২ সংসদীয় আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন কয়েকবার। গোটা দেশ সহ পুরো বাগেরহাট এলাকার উন্নয়নে রয়েছে তার অসামান্য অবদান। আজ তার ২৬ তম মৃত্যু বার্ষিকী। আবু সালেহ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান যিনি আ স ম মোস্তাফিজুর রহমান নামেই গোটা বিশ্বে পরিচিত। ১৯৩৪ সালের ৮ জানুয়ারি বাগেরহাটের রনবিজয়পুর গ্রামে জন্ম তার। তিনি পাকিস্তানের পেশোয়ার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে সেনাবাহিনীতে কর্মজীবন শুরু করেন। তৎকালীন ইন্টার সার্ভিস গোয়েন্দা শাখায় কাজ করেন ও স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং ১৯৭৩ সালে তিনি লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে পদোন্নতি পান।
চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালে তাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিযুক্ত করেন। এরপর তিনি বেশ কয়েকবার এদেশের পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৫ সালে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭৯, ১৯৯১এবং ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ সালের নির্বাচনেও তিনি বাগেরহাট -২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি গুলশান রোটারি ক্লাব, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ও ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাবের চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৯৩ সালে তিনি দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের কাছ থেকে গাওয়ানঘওয়া পদক লাভ করেন।
সাবেক ছাত্রনেতা ও আ স ম মোস্তাফিজুর রহমানের স্নেহভাজন শেখ মঈন উদ্দিন আহমেদ মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে আবেগ আপ্লুত কণ্ঠে তার কর্মময় জীবন সম্পর্কে বলেন, খানজাহান আলী বিমান বন্দর ও রূপসা সেতুর স্বপ্ন দ্রষ্টা তিনি, তাছাড়া ডেমার ব্রিজ, বাগেরহাট শহর রক্ষা বাঁধ, বাগেরহাট পৌরসভাকে ১ম শ্রেণীতে রূপান্তর, বাগেরহাট ফাউন্ডেশন, শারীরিক শিক্ষা কলেজ, খানজাহান আলী কলেজ, যুব পল্লীসহ অসংখ্য রাস্তাঘাট ব্রিজ কালভার্ট ও প্রতিষ্ঠান নির্মাণের উদ্যোক্তা ও বাস্তবায়নকারী ছিলেন তিনি। তিনি একজন সাদা মনের মানুষ। সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষ তাকে পছন্দ করতেন ও ভালোবাসতেন। তিনি ছিলেন নিরহংকার। তার মৃত্যুতে বাগেরহাটবাসীর অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে যা বিগত ২৬ বছরেও কেউ পূরণ করতে সক্ষম হয়নি।
আ স ম মোস্তাফিজুর রহমান ৩০ নভেম্বর ১৯৯৬ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেন। তার মরদেহ বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। তার আমেরিকা প্রবাসী এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। স্ত্রী সুফিয়া রহমান রুবি ২০১৫সালে অসুস্থ অবস্থায় মৃত্যু বরন করেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান আজ মরহুমের কর্মময় জীবনের উপর আলোচনা ও আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া অনুষ্ঠান পালন করছে।