আমি একজন রাজনীতিবিদ। রাজনীতি করি কার স্বার্থে? খুব সাদামাটা উত্তর দেশের স্বার্থে। যদি দেশের স্বার্থে রাজনীতি করে থাকি, তাহলে অবশ্যই দেশের কোনো অমঙ্গল হয়- এ ধরনের কোনো কর্মকাণ্ড একেবারেই করা যাবে না। কিন্তু বাস্তবতা হলো আমরা কি দেশের স্বার্থের রাজনীতি করছি? দেশের স্বার্থে যারা রাজনীতি করেছেন, তারা দেশপ্রেমের দায়বদ্ধতা থেকে নিজের তাজা রক্ত দিয়ে দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন। আজকে আমরা কী দেখি, দেশের চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে ব্যক্তি- না ভুল বললাম! ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলে সে দেশ বড়।
দুটো রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রকে দুভাগে বিভক্ত করে কেউ দীর্ঘদিন ক্ষমতায় আছে। কেউ ক্ষমতার জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা করছে। যারা ক্ষমতায় আছে, তাদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতা যারা ক্ষমতা নেই, তাদের চেয়ে অনেক বেশি। এ জন্য তাদের রাজনৈতিক কৌশলের কারণে যারা ক্ষমতায় নেই, তারা ক্ষমতায় আসতে পারছে না। এটা দীর্ঘদিন থেকে চলছে। এর ফলে দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার ওপর একধরনের মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। রাজনীতি হয়ে গেছে একপক্ষীয়। কারণ, একপক্ষ তাদের রাজনৈতিক কৌশল প্রয়োগ করে যেভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ধরে রেখেছে, তাতে অপর পক্ষ কুপোকাত। কিন্তু রাষ্ট্র হলো সর্ব অবস্থায় জনগণের সব ধরনের কল্যাণের একমাত্র প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানকে অস্থিতিশীল করে দেওয়ার জন্য যারা রাজনৈতিক করেন, তারা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের কৌশলের কাছে হেরে গেছেন। সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কারণে দেশের অর্থনীতি-সামাজিক অবস্থা সর্বোপরি জনগণের জীবনমানের সমস্যা দেখা দিয়েছে। রাষ্ট্রের জনগণ দুভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এখানে পরিষ্কারভাবে বলতে হয়, একপক্ষ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অনুসারী, অপর পক্ষ দীর্ঘদিন ক্ষমতা থেকে দূরে থাকা বিএনপির পক্ষে। এখানে রাজনৈতিক আদর্শের কিছুই নেই। দেখা যাচ্ছে, ক্ষমতায় থাকা এবং ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য উভয়পক্ষ মরিয়া হয়ে উঠছে। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বিরোধী পক্ষ আর্থ-সামাজিক সামাজিক অবস্থা চরমভাবে অস্থিতিশীল করে ফেলেছে। তাদের একমাত্র লক্ষ্য ক্ষমতায় যেতেই হবে! এদিকে তাদের যথেষ্ট সমর্থক আছে, কিন্তু নেতা ও সংগঠক নেই। ফলে রাজনীতির মাঠে তাদের যে অবস্থান নেওয়ার কথা, তারা নিতে পারছে না। এখানেই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের কাছে তারা বারবার মার খাচ্ছে। অপর দিকে বিরোধীপক্ষের মূল নেতৃত্ব যিনি দিচ্ছেন, তিনি দেশে অবস্থান করছেন না। এর ফলে তার ফরমায়েশি নেতৃত্বের কারণে দেশে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তারা সঠিকভাবে নেতৃত্ব পরিচালনা করতে পারছেন না। এখানে আরেকটি কথা বলার প্রয়োজন, বিদেশ থেকে যিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন, দলের ক্ষুদ্র একটি অংশ হলেও তার নেতৃত্ব মানতে নারাজ! অপর দিকে তার নেতৃত্ব দেওয়ার যে যোগ্যতা, তা নিয়েও তারা প্রশ্ন তুলছেন! তারা দু-দুবার ক্ষমতায় ছিলেন এবং ক্ষমতা উপভোগ করেছেন। এখন তিনি দীর্ঘদিন রাষ্ট্রের বাইরে অবস্থান করেছেন। রাষ্ট্রের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতা সরাসরি উপলব্ধি করতে পারছেন না। এর ফলে দেশের বর্তমান বাস্তবতা উপলব্ধি করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। এখন তিনি বাইর থেকে ক্ষমতাসীন দলকে সরানোর যে কৌশলগুলো অবলম্বন করতে দেশে আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তোলার কৌশল প্রয়োগ করছেন, তাতে দেশের জনগণের জীবনযাত্রার মান কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠছি। সবেমাত্র বিশ্ব তথা দেশ কোভিড মহামারি থেকে মুক্ত হলো। এরপর শুরু হলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। তারপর ফিলিস্তিনের ওপর দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর নির্মম বর্বরতা। যা বিশ্ব ইতিহাসে জঘন্যতম ঘটনা। এখানে আমাদের দেশের মতো উদীয়মান অর্থনৈতিক দেশের প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। বর্তমানে বিরোধী দলের হরতাল-অবরোধের কারণে তা মারাত্মক হুমকির মুখে। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম। এ থেকে বেরিয়ে আসতে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের মধ্যে প্রয়োজন সমঝোতা। এর লক্ষণ নেই বললেই চলে। আমরা এক কঠিন বাস্তবতার দিকে যাচ্ছি। আমাদের প্রয়োজন পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য দেশ তথা পৃথিবী। যেখানে ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়।