মাসুমা জাহান,বরিশাল ব্যুরোঃ
ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ,একেক ঋতুর আগমনে প্রকৃতিতে নিয়ে আসে নতুন সাজ।বসন্তের বিদায়ে প্রকৃতিতে এখন গ্রীষ্মের আভাস।প্রখর রৌদ্রতাপ গ্রীষ্মেরই জানান দিচ্ছে।গ্রীষ্ম শুধু খরতাপই দেয় না বাহারি ফুলে ফুলে সাজিয়ে প্রকৃতিকে দেয় নতুন রূপ।গ্রীষ্মের দৃষ্টিনন্দন ফুলে ফুলে সেজেছে প্রকৃতি। গ্রীষ্মের বাহারি সব ফুলের সাজ থেকে বাদ যায়নি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ও (ববি)।ঈদের ছুটিতে শূন্য ক্যাম্পাসে গ্রীষ্মের ফুল জারুল,কৃষ্ণচূড়া আর সোনালুতে আপন মনে সেজেছে।
ফাগুনের শেষে গ্রীষ্মের প্রখর তাপে বিশ্ববিদ্যালয়ে আগুন ঝরাচ্ছে কৃষ্ণাচূড়ার লাল ফুল,বেগুনি জারুল আর সোনালু তাঁর সোনালি আভা ছড়িয়ে আপন মনে বর্ণিল সাজে সাজিয়েছে ৫০ একরের শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের এই প্রাঙ্গণকে।
সরেজমিনে দেখা যায়,বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রাঙ্গণ নববধূবেশে সেজেছে।বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হলরোড, শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলরোড,শিক্ষক ডরমেটরি,এগার চত্বর,প্রীতিলতা চত্বর,কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার,হতাশা চত্বর, কাপল রোডে জারুল-সোনালু আর কৃষ্ণচূড়ার রাজত্ব।
সোনালু ফুল গুলো দুলছে যেন প্রেমিকার কানের দুল হয়ে তারই পাশে বেগুনি শোভা ছড়াচ্ছে জারুল।শেখ হাসিনা হল রোডের দু’ধারে পাশাপাশি জারুল আর সোনালু নিজেদের সৌন্দর্য প্রকাশের প্রতিযোগিতায় মেতেছে।সৌন্দর্যের মোহে সৌন্দর্য প্রেমিকেরা ছুটে আসছে।কেউ কেউ জারুল,সোনালু ফুলের ছবি তুলে কাব্যিক ক্যাপশনে পোস্ট করছেন ফেসবুকে।
অর্থনীতি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের হাসান ইকবাল মাহমুদ ফেসবুকে জারুল শিমুলের ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে লিখেছেন, ঈদের ছুটিতে শুন্য ক্যাম্পাস আপন মনেই সেজেছে বর্ণিল রুপে,যেন খোঁপায় সোনালু,বসনে জারুল শাড়ি,আর কৃষ্ণচূড়া আলতায়।
আরেকটু সামনে এগিয়ে শিক্ষক ডরমেটরি গ্রীষ্মের চির যৌবনা জারুল তার বেগুনি সৌন্দর্যে সাজিয়েছে ডরমেটরি ভবন দুটিকে।হতাশা চত্বরের সামনে বরাবর শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল রোডকে সোনালি আভায় সেজেছে মনে হবে গাঢ় সোনালি রঙের বন্যা বইছে।কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারকে সুশোভিত করে তুলেছে কৃষ্ণচূড়া।শহীদ মিনারের পাশেই ফুটেছে গ্রীষ্মের কমনীয় রূপের রাণী কৃষ্ণচূড়া।হলুদ রঙের সোনালু,কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম আভা,জারুলের বেগুনি পাপড়ির নমনীয় কোমলতা আর দৃষ্টিনন্দন বর্ণচ্ছটা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছে।
কেন্দ্রীয় মাঠের পূর্বদিকের রাস্তার ধারে সোনালু ফুল অন্ধকারে যেন আলোর দ্যুতি ছড়াচ্ছে।এইখানে এগার চত্বর, প্রীতিলতা চত্বর গুলোতে জারুল সোনালুর নিচে গভীর রাত পর্যন্ত চলতে থাকে বন্ধুদের গানের আড্ডা কেউবা হতাশা চত্বরে জারুলের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে আবিষ্কার করে মনের মানুষের রূপ সৌন্দর্য।
বঙ্গবন্ধু হলের ৪০০৩ নম্বর রুমের আবাসিক শিক্ষার্থী নয়ন হোসেন বলেন,“বৈশাখের অগ্নি ঝরা রোদের মাঝেও কৃষ্ণচূড়া, জারুল,সোনালু ফুল গুলো যেন এক স্বর্গীয় রুপে সাজিয়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পথ গুলো।যেটা দেখে রোদে ঝলসানো চোখটাও যেন শীতল হয়ে যায়।
নজর কাড়া এসব বাহারি ফুলের সৌন্দর্যে ঘুরতে আসছে দলে দলে শিক্ষক শিক্ষার্থী বন্ধু-বান্ধব আর প্রেমিক-প্রেমিকারা। খুশি হয়ে বন্ধুকে উপহার দিচ্ছে ফুল, স্মৃতির সাক্ষী হয়ে থাকতে জারুল সোনালুর সাথে ছবিও তুলে রাখছেন।প্রেমিকেরা জারুল সোনালু গুজে দিচ্ছেন প্রেমিকার খোঁপায়।বিকেল হতেই শেখ হাসিনা হল ও শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলরোডে ভিড় জমতে থাকে।
ইংরেজি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শুভঙ্কর দাস শুভ বলেন,“গ্রীষ্মের এই তপ্ত রোদের মাঝে জারুল যেন শীতলতার ছোয়া।প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর আমাদের ক্যাম্পাসে ভিন্ন ভিন্ন মৌসুমে ভিন্ন ভিন্ন ফুল ফুটলেও জারুল আমার কাছে সব থেকে সুন্দর মনে হয়।ফুল গুলো যেন কিছু বলতে চায়। সারাদিন ক্লাস,টিউশন শেষে সন্ধ্যার সোনালি আলোতে জারুল ভুলিয়ে দেয় সব ক্লান্তি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার সহযোগী অধ্যাপক সুপ্রভাত হালদার বলেন, ক্যাম্পাসের নতুন প্রাকৃতিক এই স্নিগ্ধ সাজে আমরা সবাই মুগ্ধ এমন নির্মল প্রকৃতি আমাদের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মেধা-মননে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আমি আশাবাদী|