স্টাফ রিপোর্টার আজারুল ইসলামঃ
: আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে একই পরিবারের তিন সদস্যকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। আজ রবিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার খলিষাখালি ভূমিহীন জনপদে এ হামলার ঘটনা ঘটে। আহতদের সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল ও খুলনা ৫০০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহতরা হলেন, দেবহাটা উপজেলার খলিষাখালির চালতেতলা ঢালীপাড়ার মৃত মহফেজ ঢালীর ছেলে ছমিরউদ্দিন ঢালী (৬৫), তার ছেলে রফিকুল ঢালী (৩৪) ও আশাশুনি উপজেলার শালখালি গ্রামের এন্তাজ গাজীর ছেলে ও আহত ছমিরউদ্দিন ঢালীর ভাগ্নে ইউসুফ গাজী (২৫)।
খলিষাখালি শেখ মুজিবনগর ভূমিহীন আবাসন প্রকল্পের উপদেষ্টা চলতেতলা এলাকার গোলাপ ঢালী জানান, ২০২১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর থেকে সাপমারা খালপারের উচ্ছেদ হওয়া ভূমিহীনসহ বিভিন্ন এলাকার সাত শতাধিক ভূমিহীন পরিবার খলিষাখালি বিলে বসবাস করে আসছে।
সম্প্রতি বাবুরাবাদের রুহুল আমিনের ছেলে হত্যা, গুম, ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও অস্ত্র মামলাসহ কমপক্ষে ১০টি মামলার পলাতক আসামী আকরাম হোসেন, ইসমাইল মেম্বর কালু ডাকাতের নেতৃত্বে একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা পুলিশ ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সবুজকে ম্যানেজ করার নাম করে খলিষাখালি শেখ মুজিবনগর ভূমিহীন আবাসন প্রকল্পের সভাপতি আনারুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলামের কাছে ২০ লাখ টাকা দাবি করে। দাবির সমর্থনে তারা খলিষাখালিতে সশস্ত্র মিছিল করে। তারা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় গত ৩ অক্টোবর আনারুল ও রবিউলকে হত্যার হুমকি দিয়ে সশস্ত্র মিছিল করা হয়। প্রতিবাদ করায় খলিষাখালির চরের মুক্তিযোদ্ধা গহর গাজীর ছেলে লুৎফর গাজীকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করা হয়।
এ সময় তাদের বিরোধিতাকারি ভূমিহীন নেতা ও ভূমিহীনদের চিংড়ি ঘের দখল করে নেয় তারা। এরপর থেকে রবিউল ও আনারুলসহ তাদের কয়েকজন সমর্থক আত্মগোপন করায় আকরাম, সন্ত্রাসী গফফার ,কালু ডাকাত ও ইসমাইল মেম্বরের নেতৃত্বে তাদের সমর্থকরা ভূমিহীনদের পরিবারের একটি প্লট পিছু এক হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিল। রবিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বাবুরাবাদের আকরাম হোসেন, চালতেতলার শুরফুল ইসলাম ওরফে কালু ডাকাত, খলিষাখালির ক্যাশিয়ার আসাদুল ইসলাম, বাবলু, বেকারুল, আশাশুনির খাজরার সাবেক ইউপি সদস্য ফারহাদ, ঢেবুখালির আব্বাস ডাকাত, একই এলাকার মোজাহিদ ও তার ভাই মারুফ এবং নোড়ারচকের ইসমাইল মেম্মরসহ ১৫/১৬ জন তার বাড়িতে আসে।
এ সময় পুলিশ ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানকে ম্যানেজ করার নামে ২০ লাখ টাকার অংশ হিসেবে পাঁচ হাজার টাকা দাবি করে। দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় তাকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যেতে চাইলে ভাই ছমিরউদ্দিন ঢালী, ভাইপো রফিকুল ঢালী ও ভাগ্নে ইউসুফ বাধা দেয়। হামলাকারিরা উপরোত্ত তিনজনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করে চলে যায়। মারাত্মক জখম তিনজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় ছমিরউদ্দিন ও রফিকুলকে খুলনা ৫০০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ সোমা দাস জানান, ছমিরউদ্দিন, রফিকুল ও ইউসুফের শরীরের মাথা, গলা, হাত ও বুকসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ভারী জিনিস ও ধারালো কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় ছমিরউদ্দিন ও রফিকুলকে খুলনা ৫০০ শয্যা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
এদিকে স্থানীয় একটি দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, আকরাম হোসেন জগন্নাথপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধা সুভাষ ঘোষের জমি জবরদখল করতে যেয়ে ২০১০ সালে র্যাব এর দায়েরকৃত অস্ত্র মামলার পলাতক আসামী। এ ছাড়া এ্কই বছরে কালিগঞ্জের ইন্দ্রনগরের শওকত হত্যা ও লাশ গুম, ২০০৭ সালে কালিপুজা চলাকালিন দেবহাটার পারুলিয়ায় এক হিন্দু বাড়িতে ডাকাতি ও কালিগঞ্জে একটি হত্যা মামলায় পলাতক আসামীসহ কমপক্ষে ১০টি মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আসামী। প্রশাসনের নজর এড়াতে সে দীর্ঘদিন যশোরসহ বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করতো। তার ভাই আলমগীরও কয়েকটি মামলার পলাতক আসামী। গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর খলিষাখালিতে ভূমিহীনরা বসবাস শুরু করলে আকরাম তার স্ত্রী ও সন্তানদের সেখানে বাড়িসহ বসবসাসের ব্যবস্তা করে নিজে আত্মগোপনে থাকতো।
সম্প্রতি সে নিজের শ্যালকের স্ত্রীকে বিয়ে করে খলিষাখালিতে রেখেছে। একপর্যায়ে সবুজ নামের এক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের সঙ্গে সখ্যতা রেখে পলাতক আসামী হয়েও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে নেমে পড়েছে। ইতিমধ্যেই তার পক্ষের সশস্ত্র সন্ত্রাসী কালু ডাকাতসহ কয়েকজন চালতে তলার রফি ঢালীর পাঁচ বিঘা, নোড়ারচকের রবিউল ইসলাম ও রাসেদুলসহ কয়েকজনের ৫০ বিঘারও বেশি জমি দখল করে নিয়েছে। এ ছাড়া তাদেরকে চাঁদা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করায় রাতের আঁধারে মাছ লুট করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এমতাবস্থায় খলিষাখালিতে আবারো রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ষেখ ওবায়দুল্লাহ জানান, এ নিয়ে রবিবার বিকেল পর্যন্ত থানায় কেউ অভিযোগ দায়ের করেনি।