সাতক্ষীরা প্রতিনিধিঃ
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, দেশের জনগণ ১৫ টি বছর ধরে হত্যা, খুন, গুম সহ চরম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আহত হয়েছেন, চোখ হারিয়েছেন, পা হারিয়েছেন, পঙ্গু হয়েছেন, ব্যবসা হারিয়েছেন , সম্পদ হারিয়েছেন । আমরা যেটি দীর্ঘদিন যাবৎ করতে পারিনি, তা ছাত্রজনতার আন্দোলন মাধ্যমে দেখিয়েছেন। তাই নির্বাচন নিয়ে কোন ব্যস্ততা নয়। দেশি-বিদেশি সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে বর্তমান সরকার সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। তাদেরকে সহযোগী করা আমারে প্রত্যেকের নৈতিক দায়িত্ব। শনিবার সকাল ১০টায় সাতক্ষীরা শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শাহাদাত বরণকারী ৪ শহীদ পরিবারের সম্মানে আয়োজিত দোয়া ও নগদ অর্থ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে মিয়া গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, কোন অনুষ্ঠান করতে গেলে পুলিশ বাধা দিতো, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতনের পর সেই পুলিশ ফোন করে খোঁজ খবর নিচ্ছে। এর জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করতে হবে। তিনি আরো বলেন, পতনের ৪ দিন আগে হাসিনা জামায়াতকে নিষিদ্ধ করেছিল। হাসিনা ভেবেছিল জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ করে বাঁচতে পারবে। কিন্তু সে বাঁচতে পারেনাই বরং তাকেই দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে। শেখ হাসিনা তুমি জামায়াত নিষিদ্ধ করেছো, অন্য দিকে বাংলাদেশের মানুষ তোমাকে নিষিদ্ধ করেছে। জামায়াতকে সম্মান দিয়েছে দেশের জনগন।
মিয়া গোলাম পরওয়ার সাতক্ষীরার গণমানুষের তাগের কথা স্বীকার করে বলেন, ১৫ বছরের আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবিরের প্রায় অর্ধশতাধিক ভাইকে শহীদ করা হয়েছে, আহত করা হয়েছে দেড় শতাধিক। ২৫৬ টি বাড়ি ঘরে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট করে ছাত্রলীগ যুবলীগের সন্ত্রাসীরা।
সাতক্ষীরা জামায়তে ইসলামীর প্রাণপুরুষ কাজী শামসুর রহমান সাহেবের কথা স্মরণ করেন। এছাড়া সাবেক এমপি আব্দুল খালেক মন্ডল এর কথা স্মরণ করে বলেন, জেলখানায় থাকাকালিন তিনি কুরআনের হাফেজ হয়েছেন এবং সেখানেই তাকে তিলে তিলে হত্যা করা হয়েছেন। তাঁর এ ত্যাগ সাতক্ষীরাবাসি স্মরণ রাখবে।
গোলাম পরওয়ার আরো বলেন, শেখ হাসিনার পেটুয়া বাহিনীর হাতে ১০০০ ছাত্র জনতা শহীদ হয়েছেন। কয়েক হাজার আহত হয়েছেন। আহতরা হাত হারিয়ে পা হারিয়ে চোখ হারিয়ে বিছানায় চোখের পানি ফেলছে তাদের চোখের পানি এখনো শুকায়নি। এখন ভোটের জন্য আপনারা ব্যন্ত হবেন না। কারণ আওয়ামী ষড়যন্ত্রকারীরা সক্রিয় না থাকলেও বিদেশে বসে তারা ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখে তারা দুই দুইবার পাল্টা অভ্যুত্থানের চেষ্টা করেছিল। দেশের জনগণ তা প্রতিহত করেছে।
শহীদ পরিবারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন আপনি সন্তান হারিয়েছেন, স্বামী হারিয়েছেন, স্বজন হারিয়েছেন মন খারাপ করবেন না, আপনি সারা বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের কাছে গর্বিত ও সম্মানিত । দেশ ও জাতির স্বার্থে আপনার সন্তান প্রিয়জন শাহাদাত বরণ করেছেন তারা আল্লাহর কাছে অবশ্যই শহীদের মর্যাদা পাবেন। বাংলাদেশ আপনার স্বজনদের রক্তের বিনিময়ে পূরনায় স্বাধীন হয়েছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি আপনাদের পাশে ছিল আছে এবং থাকবে ইনশাল্লাহ। শহিদ পরিবারের অভাব অভিযোগ অবশ্যই দূর হবে।
এরপর সেক্রেটারি জেনারেল সাতক্ষীরায় কোটা আন্দোলনে শহীদ চারজন ভাইয়ের রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করেন। দোয়া মোনাজাতে তিনি বন্যার্তদের জন্য আল্লাহর কাছে সহযোগিতা কামনা করেন। মোনাজাতে প্রতিবেশী দেশের সৃষ্ট বন্যা থেকে আল্লাহর সহযোগিতা কামনা করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারী ও খুলনা অঞ্চল পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক বলেন, শেখ হাসিনা পালাই না কিন্তু এ কথা বলার পরদিনই দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। জামাতে ইসলামী পালাই না জামাতের নেতারা হাসি মুখে ফাঁশির রশিকে চুম্বন করেছে। এদেশের জনগণ তাদেরকে আর কোন ষড়যন্ত্র করতে দেবে না। তিনি শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, যেখানের মাল সেখানে চলে গেছে। ছাত্র আন্দোলনে আহতদের স্মরণে তিনি বলেন এই জীবন্ত শহীদদের রক্তে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি এখনো তাদের শরীর থেকে বুলেট বের করা সম্ভব হয়নি। তিনি জনশক্তিকে উদ্দেশ্য করে বলেন আমীরে জামাত বলেছেন আমরা প্রতশোধ নেবে না তবে যারা সন্তান হারিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, সে সব ভিকটিমরা মামলা করতে চাইলে আমরা অবশ্যই তাদেরকে সহযোগিতা করব । আইন হাতে তুলে নেবেন না পুলিশকে সহযোগিতা করুন, পুলিশের উপর চড়াও হবেন না। আপনারা যেভাবে হিন্দুদের মন্দির পাহারা দিয়েছেন আগামীতে তাদের বড় উৎসব এই উৎসবের দিনগুলোতে তাদের মন্দির এবং তাদের নিরাপত্তা দায়িত্বে আপনাদেরকে পালন করতে হবে। আইন হাতে তুলে নেবেন না। আপনাদের সমস্যা থাকলে দেশের গর্বিত সন্তান সেনাবাহিনী দায়িত্ব আছেন তাদেরকে বলুন। ডিসি সাহেব কে বলুন। এসপি সাহেবকে বলুন । আমরা তাদের মাধ্যমে আপনাদের সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করব।
মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী তার বক্তব্যে কুরআনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, স্বৈরাচার সরকার চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র করেছিলো আল্লাহ তাদের সকল চক্রান্ত ষড়যন্ত্রে তাদেরকেই গ্রাস করেছে।
কেন্দ্রয়ি কর্মপরিষদ মাওলানা আবুল কালাম আজাদ তার বক্তব্যে বলেন, আল্লাহর কাছে দুটি জিনিস সবচাইতে প্রিয় শহীদের এক ফোটা রক্ত এবং মুত্তাকির এক ফোটা চোখের পানি। স্কুল-কলেজের কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের অশ্রুসিক্ত চোখ নিয়ে বলেছিল এই সরকার স্বৈরাচার সরকারকে আমরা চাই না আল্লাহ তাদের এই দোয়াকে কবুল করেছেন।
অনুষ্ঠানের সভাপতি মুহাদ্দিস রবিউল বাশার বলেন, বাংলাদেশ নতুনভাবে স্বাধীন হয়েছে। এই স্বাধীনতা রক্ষা করার। জন্য আমরা অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করব। দেশের শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবো।
অনুষ্ঠানে শহর জামাতের আমির জাহিদুল ইসলাম তার বক্তব্য বলেন, মুগ্ধের মত রক্ত দিয়ে হলেও আবু সাঈদের মত বুক পেতে দিয়ে হলেও আগামীর যে সকল ষড়যন্ত্র রুখে দেবো ইনশাআল্লাহ।
সদর উপজেলা জামাতের আমির মাওলানা শাহাদাত হোসেন বলেন, ভোট ও ভাতের অধিকারের জন্য আমরা ৭১ সালে স্বাধীন হয়ে ছিলাম। শেখ হাসিনা সেটাকে ধ্বংস করেছে। আমাদেরকে উপহার দিয়েছে আয়না ঘর।
সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের আমীর মুহাদ্দিস রবিউর বাশারের সভাপতিত্বে এবং জেলা সেক্রেটারী মাওলানা আজিজুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারী ও খুলনা অঞ্চল পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ও মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী।
এছাড়া অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর উপাধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম মুকুল, সাবেক এমপি গাজী নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশ মসজিদ মিশনের জেলা সভাপতি মাওলানা আব্দুল বারী, শহর ছাত্র শিবিরের সভাপতি আল মামুন, জেলা শিবিরের সভাপতি ইমামুল ইসলাম, শহর জামায়াতের আমীর মোঃ জাহিদুল ইসলাম, সদর উপজেলা জামায়াতের আমীর মাও. শাহাদাৎ হুসাইন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমস্বয়ক রিফাত হোসেন, নাজমুল ইসলাম রনি, নাহিদ হাসান এবং ছাত্র আন্দোলনে শহীদ আসিফ হুসাইনের গবিৃত পিতা মাহবুবুল আলম।
এসময় শহীদ আলম সরদার, হাফেজ আনাছ বিল্লাহ এবং আদম আলীর পরিবার উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে জেলা নায়েবে আমীর শেখ নুরুল হুদা রহমান, সহকারী সেক্রেটারী মাহবুবুল আলম, অধ্যাপক গাজী সুজায়াত আলী, প্রভাষক ওমর ফারুক, কর্মপরিষদ জামশেদ আলম, রুহুল আমিন, এড আব্দুস সুবহান মুকুল, মাওলানা ওসমান গণি, সমন্বয়ক সুহাইল মাহদীন সাদি, সদর উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারী মাও. মোশাররফ হুসাইন, শহর জামায়াতের সেক্রেটারী খোরশেদ আলম, কলারোয়া উপজেলা জামায়াতের আমীর মাও. কামরুজ্জামান, আশাশুনি উপজেলা জামায়াতের তারিকুজ্জামান তুষার, সেক্রেটারী মাও. মোশাররফ হুসাইন, দেবহাটা উপজেলা জামায়াতের আমীর মাও. ওলিউল ইসলাম, সেক্রেটারী হাফেজ এমদাদুল হক, কালিগঞ্জ উপজেলা জামায়াতে আমীর মাও. আব্দুল ওহাব সিদ্দিকী, শ্যামনগর উপজেলা জামায়াতের আমীর মাও. আব্দুর রহমান, সেক্রেটারী মাও. গোলাম মোস্তফা, শহর নায়েবে আমীর মাওলানা মুস্তাফিজুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারী হাবিবুর রহমান, এড. আবু তালেব, মাষ্টার বদিউজ্জামান, আনিছুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
দাইয়ানুর রহমান (সম্পাদক) তাপস কুমার ঘোষ (প্রকাশক) শিমুল হোসেন, (নির্বাহী সম্পাদক) আজহারুল ইসলাম-বাবলু হোসেন ( নির্বাহী সম্পাদক)
অফিসঃ পশ্চিম শেওড়াপাড়া- ইকবল রোড বাসা নং- ৪১৬/৪ মিরপুর ঢাকা-১২১৬,
Email: Info@sumoyersonlap.com, taposhg588@gmail.com,shimul00252@gmail.com
01715522822, 01728.855627, 01710118632, 01709255325
https://www.sumoyersonlap.com
কপি করা নিষিদ্ধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ।