মোঃ রায়হান আলী নওগাঁ প্রতিনিধিঃ
নওগাঁর মহাদেবপুরে কাজ না করেই অস্তিত্বহীন প্রকল্প দেখিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে মহাদেবপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এর বিরুদ্ধে। গত জুনে কাগজে-কলমে প্রকল্পটি শতভাগ সম্পন্ন বলে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, ভূয়া মাস্টার রোলের মাধ্যমে বরাদ্দের অর্থও পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু সরেজমিনে এ প্রকল্পের কোনোই অস্তিত্ব মেলেনি। স্থানীয়দের অভিযোগ- সংশ্লিষ্টদের যোগসাজশে প্রকাশ্যে দুর্নীতি করে এই অর্থ আত্মসাত করেছে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। আবার অনেকেই বলছেন, কাজির গরু কেতাবে আছে, গোয়ালে নেই। এটিকে সরকারি অর্থ অপচয় ও অনিয়ম-দুর্নীতির বহুল প্রচলিত কৌশল হিসেবেই দেখছেন স্থানীয় সচেতন মহল। তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তাদের। সম্প্রতি তথ্য অধিকার আইনে আবেদনের প্রেক্ষিতে মহাদেবপুর সদর ইউপি কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) প্রকল্পের আওতায় ‘মহাদেবপুর ইউপি কার্যালয় চত্বরে সেবাপ্রার্থীর জন্য বসার স্থান নির্মাণ’ নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দের এই প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ওই ইউপি চেয়ারম্যান সাঈদ হাসান তরফদার শকিল ও সাধারণ সম্পাদক ইউপি সদস্য দিলরুবা খানম মুক্তা। কাগজে-কলমে প্রকল্পটি শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু সরেজমিন গিয়ে এর কোনো অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যায়নি। সেখানে উপস্থিত ৫-৭ জন স্থানীয় বাসিন্দার কাছে জানতে চাইলে তারা জানান, বর্তমান চেয়ারম্যানের আমলে এমন কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে তারা দেখেননি। তবে কয়েক বছর আগে ইউপি কার্যালয়ের সামনে সেবাপ্রার্থীদের বসার স্থান নির্মাণ করেন ওই ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান ধলু। তিনি জানান, ২০২০-২০২১ অথবা ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে সরকারি প্রকল্পের অর্থ দিয়ে সেবাপ্রার্থীদের বসার স্থান নির্মাণ প্রকল্প তিনি বাস্তবায়ন করেছেন। সেই প্রকল্পের মূল নকশা বিকৃত করে কয়েক মাস আগে টিনের ছাউনির সামনের অংশের ২-১ ফিট কেটে ফেলা হয়েছে। শুধুমাত্র টিন কেটেই হয়তো বরাদ্দের অর্থ আত্মসাত করা হয়েছে। বর্তমান চেয়ারম্যান এ পর্যন্ত এমন কোনো প্রকল্পই বাস্তবায়ন করেননি বলেও জানান তিনি।
মুঠোফোনে প্রকল্পের বিষয়ে তেমন কিছুই জানাতে পারেননি ইউপি সদস্য ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক দিলরুবা খানম মুক্তা। ‘মাস্টার রোলে স্বাক্ষর করেছেন কিনা’ প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, সচিব তার কাছ থেকে বেশকিছু কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছে। চেয়ারম্যান ও সচিবের সাথে তার লেনদেনের হিসাব ক্লিলিয়ার বলে দাবি করেন তিনি। বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ইউপি সচিব গোলাম রাব্বানী মল্লিক। বরাদ্দকৃত অর্থের বিষয়ে প্রতিবেদককে তিনি কিছুই জানাতে পারেননি। তবে তারা প্রকল্পটি শুধু উপজেলায় দাখিল করেছেন বলে দাবি করেন এই ইউপি সচিব। ভূয়া প্রকল্প দেখিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করে মহাদেবপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি সাঈদ হাসান তরফদার শাকিল জানান, ইউনিয়ন পরিষদের পিছনে একটি সেড নির্মাণ করবেন কিন্তু সেসময় তা নির্মাণ করতে গেলে সড়ক ও জনপদ এখানে কতটা জমি নিবে এজন্য কাজটি আটকে আছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন না করেই ভূয়া মাস্টার রোল দাখিলের মাধ্যমে বরাদ্দের অর্থ উত্তোলনের বিষয়ে সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসান সোহাগ। এ ব্যাপারে মুঠোফোনে জানতে চাইলে নওগাঁর স্থানীয় সরকার উপপরিচালক (উপসচিব) সালাহ্উদ্দিন আহমেদ জানান, অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
মোঃ রায়হান আলী নওগাঁ।