মোঃ রায়হান আলী নওগাঁঃ
নওগাঁর মান্দায় স্ত্রীর পরকীয়া প্রেমিকের হাতে খুন হয়েছে মনসুর রহমান। স্ত্রীর পরকীয়া প্রেমে বাধা দেওয়ায় তাকে প্রথমে পিটিয়ে এবং পরে ফাঁস দিয়ে হত্যা করা হয়। ক্লুলেস এ হত্যা মামলার মূল আসামিকে ঢাকার সাভার থেকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে এমনটাই দাবি করেছে র্যাব-৩। গ্রেপ্তার ব্যক্তির নাম মো. জাহাঙ্গীর আলম (২৯)। তার বাবার নাম মোজাহার। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কাওরানবাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ। গত ২২ ডিসেম্বর গভীর রাতে মনসুর হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তার করে।
মনসুর মান্দার বাসিন্দা এবং গ্রেপ্তার জাহাঙ্গীর তার পাশের গ্রামের বাসিন্দা। মনসুর এলাকার বিভিন্ন দোকানে চানাচুর বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তিনি দুটি বিয়ে করে দুই স্ত্রীকে নিয়ে বাড়িতে থাকতেন। প্রথম স্ত্রীর নাম হাসিনা ও দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম মেঘনা। হাসিনা বেশ কয়েকজনের সঙ্গে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়েছে। তার সর্বশেষ প্রেমিকের নামও জাহাঙ্গীর। তার বাবার নাম সাহেব আলী।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, হাসিনা সর্বশেষ পাশের গ্রামের সাহেব আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর সঙ্গে প্রেমে জড়ায় এবং স্বামীর অনুপস্থিতিতে তার সঙ্গে মেলামেশা করতে থাকে। গত ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় এই জাহাঙ্গীরসহ তার আরও কয়েকজন বন্ধু হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে বাড়ি আসে। বন্ধুদের পাশের ঘরে বসিয়ে দুজনে একান্তে সময় কাটাচ্ছিলেন। একপর্যায়ে মনসুর চলে আসলে স্ত্রীকে অপ্রীতিকর অবস্থায় দেখে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে কথাকাটাকাটি ও হাতাহাতি ঘটনা ঘটে।
আরিফ মহিউদ্দিন আরও জানান, জাহাঙ্গীরের বন্ধুরা ওই বিবাদ মীমাংসার কথা বলে মনসুরকে বাড়ির পাশের একটি বাগানে নিয়ে যায়। মনসুরের দ্বিতীয় স্ত্রী মেঘনার সামনেই তাকে বাগানে নেওয়া হয়। পরে সেখানে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তাকে হত্যা করা হয়।
র্যাব জানায়, মনসুরের বাড়িতে এসে তার স্ত্রীর সঙ্গে মেলামেশা করে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরির বিষয়টি পূর্বপরিকল্পিত। আর এই পরিকল্পনার নেপথ্যে ছিলেন মোজাহারের ছেলে জাহাঙ্গীর, অর্থাৎ হাসিনার সাবেক প্রেমিক। ঘটনার সময় এই জাহাঙ্গীর (সাবেক প্রেমিক) বাগানে অপেক্ষায় ছিলেন।
র্যাব আরও জানায়, সর্বশেষ প্রেমের আগে পরিকল্পনাকারী জাহাঙ্গীরের প্রেমটি মনসুরের জন্য ভেঙে যায়। এতে মনসুরের ওপর জাহাঙ্গীর ক্ষুব্ধ ছিল। আর হাসিনা বর্তমানে সাহেব আলীর ছেলে জাহাঙ্গীরের প্রেমে পড়লে,আর ক্ষুব্ধ হয়ে মোজাহারের ছেলে জাহাঙ্গীর এ হত্যার পরিকল্পনা করে এবং হাসিনার বর্তমান প্রেমিককে সামনে রেখে নিজেকে আড়াল করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র্যাব জানায়, গ্রেপ্তার জাহাঙ্গীর ঘটনার সময় বাগানে অপেক্ষায় ছিলেন। বাকিরা মনসুরকে বাগানে নিয়ে গেলে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী বাঁশ ও গাছের ডাল দিয়ে তাকে বেধড়ক পেটানো শুরু হয়। পেটানোর একপর্যায়ে মনসুর প্রায় অবচেতন হয়ে পড়ে।
এমন সময় গ্রেপ্তার জাহাঙ্গীর তার মুখে লাথি দিলে তিনি গোঙগাতে শুরু করেন। একপর্যায়ে অন্যদের সহযোগিতায় জাহাঙ্গীর তার মাফলার দিয়ে তাকে গলায় পেঁচিয়ে গাছের ডালের সঙ্গে ফাঁস লাগিয়ে দেয়। পরে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে ঘটনাস্থল থেকে তারা পালিয়ে যায়।
পর দিন সকালে নিহতের দ্বিতীয় স্ত্রী মেঘনা খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে বাগানে ঝুলন্ত অবস্থায় স্বামীর মরদেহ দেখে। আগের রাতে স্বামীর সঙ্গে সাহেব আলীর ছেলে জাহাঙ্গীরকে বের হতে দেখায় তিনি তাকেই মূল হত্যাকারী হিসেবে দাবি করেন।
র্যাব জানায়, ঘটনার পর জাহাঙ্গীর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করতে থাকে। পরে সাভারের হেমায়েতপুর এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে আত্মগোপনে ছিল।