হাফিজুর রহমান কালিগঞ্জ থেকেঃ
জাতির জনক স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। সেই ভাষণে স্বাধীনতার দাবিতে মুক্তিযুদ্ধের ডাক দেন। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশের দামাল ছেলেরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে এ দেশ স্বাধীনতা লাভ করে।
মুক্তিযুদ্ধ সময় কালীন ৯ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজার অব: জলিলের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ২০ নভেম্বর কালীগঞ্জ অঞ্চলকে হানাদার মুক্ত করে প্রথম ডাকবাংলা চত্বরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। সেই থেকে ২০ নভেম্বর কালিগঞ্জ মুক্ত দিবস পালিত হয়ে আসছে।
দিবসটি পালনের জন্য কালীগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের আয়োজনে রবিবার ২০ নভেম্বর দিনব্যাপী নানান কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালিত হয়। দিনের কর্মসূচির মধ্যে ছিল সকাল সাড়ে ৭টার সময় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সামনে বঙ্গবন্ধু ভাস্কার্যে পুষ্প মাল্য অর্পণ। সকাল সাড়ে ৮টার সময় মহৎপুর গোরস্থানে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ইউনুস আলীর কবর জিয়ারত ও দোয়া অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
সকাল ১০টার সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রহিমা সুলতানা বুশরার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডিউটি কমান্ডার ও মথুরেসপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাকিমের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে সংসদ সদস্য এস এম জগলুল হায়দার উপস্থিত থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিজয়স্তম্ভতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। এ সময় থানার অফিসার ইনচার্জ হালিমুর রহমান বাবু সহ বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ এবং তাদের সন্তান কমান্ডের নেতৃবৃন্দ সুধী সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
ওই সময় এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে প্রধান অতিথি এস এম জগলুল হায়দার বলেন বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধারা যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে দেশ স্বাধীন করেছিল তারই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমান দেশ পরিচালনা করছে। দেশ থেকে মৌলবাদী সন্ত্রাস উৎখাত করে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য আবারো আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিয়ে তাকে ক্ষমতায় এনে দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।
আর যাতে করে ২০১৩ সালের জামাত-বিএনপির সহিংস জ্বালাও পোড়াও ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটাতে পারে সে লক্ষ্যে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করতে হবে। সকাল সাড়ে ১০টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পতাকা উত্তোলন করা হয়। পতাকা উত্তোলন শেষে একটি বিজয় শোভাযাত্রা উপজেলার প্রধান সড়ক পরিদক্ষন করে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ভবনে এসে শেষ হয়। শোভা যাত্রা শেষে বেলা ১১ টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হারিয়ে যাওয়া দেশের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা অনুষ্ঠিত হয়। বেলা সাড়ে ১১টায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ভবন মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠানে সংসদের সাবেক ডিপুটি কমান্ডার আব্দুল হাকিমের সভাপতিত্বে বীর মুক্তিযোদ্ধারা ১৯৭১ সালের ২০ নভেম্বর স্মৃতিচারণ করে হামদান মুক্ত ঘটনা তুলে ধরে বক্তব্য দেন। বেলা ১টার সময় থানা জামে মসজিদে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত ও দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করে দোয়া অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়
বেলা দুইটার সময় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সন্তানদের জন্য প্রীতিভোজের ব্যবস্থা করা। হয় বিকাল ৪ টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খেলাধুলা এবং সন্ধ্যা ৭টায় এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিবসটির সমাপ্তি ঘটে।