বদরুদ্দোজা প্রধান, পঞ্চগড় প্রতিনিধিঃ
উত্তরের হিমালয় কন্যা খ্যাত শীত প্রধান জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় এবারও ফুটতে শুরু করেছে টিউলিপ। নানা রঙ্গের এই ফুল আর টিউলিপ বাগান দেখতে ছুটছে হাজারো মানুষ। এই ফুল চাষ করছেন স্থানীয় নারী টিউলিপ চাষিরা। ফুল বিশেষজ্ঞরা বলছেন গত তিন বছর ধরে টিউলিপ ফুটিয়ে বাংলাদেশে পর্যটনের নতুন মাত্রা যোগ করেছে টিউলিপ নারীরা। পরিবার পরিজন নিয়ে টিউলিপের মনোরম সৌন্দর্য্য উপভোগ করে ভ্রমণ পিপাসুরা বলছেন উপভোগ্য আবহাওয়া আর টিউলিপের বাহারী রঙ্গে চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে তাদের। তেঁতুলিয়ায় নানা অনুসঙ্গের সাথে টিউলিপ বাগান ভ্রমণ আনন্দকে আরও আকর্ষনীয় ও মুগ্ধকর করে তুলেছে।
উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের সীমান্ত উপজেলা তেঁতুলিয়ার দর্জীপাড়া গ্রামে তৃতীয়বারের মতো এই টিউলিপ ফুল ফুটতে শুরু করেছে। তেঁতুলিয়ার এই গ্রামে ২০২২ সালে ৪০ হাজার টিউলিপের বাল্ব পরীক্ষা মুলক রোপন করে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে টিউলিপ চাষের উদ্যোগ নেয় বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ইএসডিও। নারীদেরকে স্বাবলম্বি গড়ে তোলার জন্য স্থানীয় ২০ জন নারীকে টিউলিপ চাষের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। গত তিন বছর ধরে এই নারীরাই টিউলিপ চাষ করে সফল হয়েছে। এই এলাকার ১৬ জন নারী এবার চাষ করছেন টিউলিপ ফুল। গত তিন বছর ধরে টিউলিপ চাষ করে সফলতা অর্জন করেছেন তারা। এবারে ২৫টি ভিন্ন ভিন্ন রঙ্গের টিউলিপ চাষ করেছেন এই উদ্যোক্তারা। অনেকেই বদলে যাওয়া বাংলাদেশের উন্নয়নের সাথে এই নারীদের অবদান রয়েছে বলেও মন্তব্য করছেন। টিউলিপ চাষি মনোয়ারা বেগম জানান, গত তিনবছর ধরে টিউলিপ চাষ করছি। লাভ হচ্ছে। ফুল চাষ করে আয় করতে পেরে ভালো লাগছে।
দেখতে অনন্য সুন্দর আর প্রায় দেড় শতাধিক প্রজাতির টিউলিপ ফুল সাধারনত পৃথিবীর শীত প্রধান দেশগুলোতে দেখতে পাওয়া যায়। নুন্যতম ১৩ ডিগ্রী তাপমাত্রায় এই ফুল ওই দেশগুলোতে উৎপাদন হয় বাণিজ্যিক আকারে। টিউলিপের বাগান দেখতে ভির করে দেশ বিদেশের হাজারো পর্যটক। শীতকালে বাংলাদেশে এই ফুলের চাষের সম্ভাবনার কথা আগে জানা গেলেও পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় শুরু হয় ২০২২ সালে। টিউলিপ চাষের এই প্রকল্পটিতে আর্থিক সহায়তা প্রদান করছে পল্লি কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশান। ইএসডিওর পরিচালক (প্রশাসন) ড. সেলিমা আকতার জানান, নারীদের স্বাবলম্বি করার জন্যই মুলত: এই উদ্যোগ। নারীরা ফুল চাষ করে পর্যটন শিল্পকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। এবছর ১৯ প্রজাতির টিউলিপ ১৯ রঙ্গে রাঙিয়েছে দর্জিপাড়া গ্রাম। জন প্রতি ৫০ টাকা এবং শিশুরা বিনামূল্যে টিকেট কেটে ঢুকছেন টিউলিপ বাগানে।
টিউলিপ বাগানকে কে কেন্দ্র করে তেঁতুলিয়ায় পর্যটনের নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। স্থানীয় ও দেশের নানা প্রান্ত থেকে হাজারো পর্যটক ছুটে আসছেন। পযর্টকদের জন্য টিউলিপ বাগানের পাশেই নতুন করে গড়ে উঠেছে দোকান পাট, খাবারের দোকান, ফুলের দোকান সহ নানা ধরনের পর্যটক আকর্ষনীয় অনুসঙ্গ। এসব উপভোগ করে আনন্দিত পর্যটকরা। টিউলিপ পর্যটন কে কেন্দ্র করে তেঁতুলিয়ায় নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। আয় বেড়েছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ি সহ হোটেল ব্যবসায়িদের। আবাসিক দোয়েল হোটেলের কর্ণধার মনিরুজ্জামান তুষার জানান, তেঁতুলিয়ায় আগে কাঞ্চনজংঘা, সমতলের চা বাগান আর নদনদীই ছিলো পর্যটনের আকর্ষণ। এখন টিউলিপ নতুন সংযোগ হয়েছে। টিউলিপ দেখতে অসংখ্য মানুষ আসছে। এতে কর্মসংস্থান সহ মানুষের আয় রোজগার বেড়ে গেছে।
টিউলিপের পাশাপাশি তেঁতুলিয়ায় ইকোট্যুরিজমের গড়ে তোলার উদ্যোগের কথা জানালেন ইকোস্যোসাল ডেভলেপমেন্ট অর্গানাইজেশনের নির্বাহী পরিচালক ড, শহীদু- উজ- জামান। তিনি জানান তেঁতুলিয়ার মাটি অত্যন্ত উর্বর। এখানে সবধরনের ফল, ফুল, ফসল চাষ করা যায়। শুধু শীতকালীন ফুল নয় সারা বছর ফোটে এমন ফুল এবং নানা ধরনের ফলের চাষের উদ্যোগ নিয়েছি আমরা।
বদরুদ্দোজা প্রধান
পঞ্চগড়।