বদরুদ্দোজা প্রধান, পঞ্চগড় প্রতিনিধিঃ
থিয়েটারের দর্শন, চর্চা ও উপভোগের আনন্দ প্রান্তিক মানুষের ঘরে ঘরে পৌছে দেয়ার লক্ষ্যে গ্রামে গ্রামে থিয়েটার শির্ষক কর্মসূচী হাতে নিয়েছে পঞ্চগড়ের নাট্যদল ভূমিজ। এই কর্মসূচীতে দেশ বিদেশের বিভিন্ন নাট্যদল বিভিন্ন গ্রামে মঞ্চনাটক প্রদর্শন করবে। ভূমিজ কতৃপক্ষ জানায় থিয়েটার বা মঞ্চনাটক শুধুমাত্র নগরকেন্দ্রীক হয়ে উঠেছে। আয়োজন এবং উদ্যোগের অভাবে গ্রামের মানুষ মঞ্চনাটকের স্বাদ আস্বাদন করতে পারেনা। দেশের জনগণের বিশাল একটি অংশ নাটকের আনন্দ উপভোগ থেকে বঞ্চিত। এর ফলে মানুষ ঝুকে পড়ছে মোবাইল কেন্দ্রীক বিনোদনে। এই বিনোদনের খারাপ প্রভাবও রয়েছে। তাই থিয়েটারের নির্মল বিনোদন উপভোগ করতে চায় গ্রামের মানুষ। গ্রামে গ্রামে থিয়েটার কর্মসূচীর মাধ্যমে একদিকে যেমন মঞ্চনাটকের দর্শক বৃদ্ধি পাবে অপরদিকে থিয়েটারের নির্মল বিনোদন উপভোগ করে মানুষ হয়ে উঠবে সৃজনশীল। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিশাল ভূমিকা রাখবে নাটক। এই কর্মসূচী সফল হলে নাট্যকর্মীদের পেশাদারিত্ব সৃষ্টি হওয়ার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পেশার মানুষের আয় রোজগারও বাড়বে। গত শনিবার সন্ধ্যায় তেঁতুলিয়া উপজেলার গিতালগছ দ্বি—মুখী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে
কর্মসূচীর শুভ উদ্বোধন করেন পঞ্চগড় ১ আসনের সংসদ সদস্য নাঈমুজ্জামান ভুইয়াঁ মুক্তা। গীতালগজ গ্রামের তরুণ সমাজ এই প্রদর্শনী নিবেদন করে। উদ্বোধনী উনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সাংস্কৃতিক ও শিক্ষা ব্যক্তিত্ব ভজনপুর ডিগ্রী কলেজের উপাধক্ষ্য আব্দুল খালেক, ভূমিজের সভাপতি, নাট্যকার নির্দেশক সরকার হায়দার, স্থানীয় তরুণ সমাজসেবি জিয়াউল হক প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আহসান হাবিব। বিকেলে উম্মুক্ত মঞ্চে ‘ অত:পর স্মার্ট বাংলাদেশ’ নামে একটি পথনাটক মঞ্চস্থ হয়। প্রায় সহস্রাধিক মানুষ নাটকটি উপভোগ করেন। নাটকটির রচনা ও নির্দেশনায় ছিলেন মোস্তাক আহমেদ। অভিনয় করেন ইভেন, বাঁধন, তানভির, সন্তোষ ও মনি। সন্ধ্যায় স্কুলের হলরুমে মঞ্চস্থ হয় দিনাজপুরের শতবর্ষী নাট্যদলের প্রযোজনা প্লেটোর দ্য ট্রায়াল এন্ড ডেথ অব সক্রেটেস’ অবলম্বনে মনোড্রামা ‘ হেমলক’। নাটকটি রচনা, নির্দেশনা এবং অভিনয় করেছেন সম্বিত সাহা। এই নাটকটি প্রায় দুই শতাধিক সুধী সমাজ টিকেট কেটে উপভোগ করেন। আয়োজক নাট্যদল ভূমিজের সভাপতি সরকার হায়দার বলেন, জ্ঞানভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে নাটককে সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌছে দিতে হবে। এই কর্মসূচীতে নাট্য শিল্পীদের পেশাদারিত্বও গড়ে উঠবে। সমাজ পরিবর্তন, মানবিক হয়ে ওঠা এবং অভিনয় শিল্পীদের পেশাদারিত্ব সৃষ্টিতে মঞ্চনাটকের বিরাট শক্তি রয়েছে। কিন্তু শিল্পের অভূতপূর্ব এই মাধ্যম শুধুমাত্র নগরকেন্দ্রীক হয়ে ওঠায় শিল্পের রস,দর্শন এবং উপভোগ্য আনন্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশের গ্রামীণ মানুষ। স্মার্ট বাংলাদেশে শহর এবং গ্রামের মানুষ একই সুবিধা উপভোগের প্রেক্ষাপটটি বিবেচনা করেই ভূমিজের এই উদ্যোগ। নাটকের শৈল্পিক শক্তিকে বাংলাদেশের আনাচে কানাচে পৌছে দেয়ার জন্য নাট্যদল ভূমিজ গ্রামে গ্রামে থিয়েটার কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। এই কর্মসূচীতে পঞ্চগড় জেলা ও বাংলাদেশের বিভিন্ন গ্রামে মঞ্চনাটক আয়োজন করবে। দেশ বিদেশের বিভিন্ন নাট্যদল নাটক পরিবেশন করবে। ভজনপুর ডিগ্রী কলেজের উপাধক্ষ্য আব্দুল খালেক জানান, এটা একটি অভূতপূর্ব উদ্যোগ। আমার গ্রামে এই কর্মসূচীর উদ্বোধন হচ্ছে এটা সত্যি বিস্ময়কর। আমার এই গ্রামে আগে অনেক নাটক হতো। সেগুলো ছিলো যাত্রাপালা। তারপর সেগুলোও বন্ধ হয়ে যায়। আমরা চাই মানুষ আবার মঞ্চনাটকের আনন্দ উপভোগ করুক। তাই এই এলাকার তরুণদের সহযোগিতায় আমরা গ্রামে মঞ্চনাটকের প্রদর্শনী আয়োজন করেছি।