বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক বা নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে নির্বাচন হলে আ’লীগ ৩০ টি আসনও পাবে না, তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে, মিডিয়ার নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করা উচিৎ।
পঞ্চগড়ের ঘটনার সাথে সরকার সরাসরি ভাবে জড়িত। তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে এ ঘটনা ঘটেছে। এর সম্পুর্ন দায় সরকারকে নিতে হবে। সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করে কখনও একটা দেশের রাজনৈতিক সমস্যা সমাধান করা যায় না।
সোমবার ১৩ মার্চ পৌর শহরের কালিবাড়িস্থ নিজ বাসভবনে তিনি সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে উপরোক্ত কথা বলেন।
পঞ্চগড়ের ঘটনায় মির্জা ফখরুল বলেন, এ ঘটনাটি পূর্ব পরিকল্পিত।
সরকারের মদদপুষ্টমহল নির্বাচনের পূর্বে গণতন্ত্রের জন্য যে আন্দোলন গড়ে তুলেছে মানুষ তখনই সরকার এ জাতীয় সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটিয়ে জনগনের দৃষ্টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে চায়। একই সঙ্গে বিএনপির ভাবমুর্তিকে ক্ষুন্ন করতে চায়। ঘটনার পরপরই কোন তদন্ত ছাড়াই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রি বলেছেন, এ ঘটনার সাথে বিএনপি জড়িত। এতে বোঝা যায় যে ব্যাপারটা পুর্ব পরিকল্পিত। এটা তাদের পুরোনো অভ্যাস। দু:খজনকভাবে ও ক্ষোভের সাথে লক্ষ্য করেছি যে, সরকার পরিকল্পিতভাবে এ প্রচারণা চালাচ্ছে। পরে যখন রেলমন্ত্রি সেখানে যান, ওই সম্প্রদায়ের লোকজনের সাথে কথা বলেন। সেখানে কিন্তু একটা পরিস্থিতি তৈরী হয়, আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকেরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন এবং তারা পরিস্কার বরে বলেন, আপনাদের পাশে যারা আছে তারাই এ ঘটনার সাথে জড়িত।
তিনি আরও বলেন, চরম অন্যায়ভাবে বিএনপির নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। ১৮০ জনকে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। পঞ্চগড়ে প্রকৃতপক্ষে ত্রাশের রাজত্ব সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা বাড়িতে থাকতে পারছে না। যেখানে সরকার ওই বিতর্কিত জলসা করার অনুমতি দিয়েছিল তাহলে তাদের সুরক্ষা দেওয়ার দরকার ছিল; সরকার কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেনি। অথচ বিএনপি ছোট খাটো কোন কর্মসূচী নিলে পুলিশের ছড়াছড়ি হয়ে যায়। সেখানে বিভিন্ন রঙের পতাকা দিয়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বাড়িঘর চিহ্নিত করা হয়। সেখানে নির্দয়, অমানুবিক, নির্মমভাবে তাদের বাড়িঘরে আক্রমন করা হয়েছে। লুটপাট চালানো হয়েছে। ২ জন প্রান দিয়েছেন। একজনকে কুপিয়ে আরেকজনকে পুলিশের গুলিতে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনার পরেও আমরা কি দেখবো যে, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ তদন্তের ব্যবস্থা করবেন তা না করে সরকার উল্টো বিএনপির উপরো দোষ চাপানোর চেষ্টায় রয়েছে। উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা তাদের এখনও রয়েছে। গতকাল তথ্যমন্ত্রির কথা শুনেছি। তিনি বুঝতে পারেন না, যে তার কথা এখন আর কেউ বিশ্বাস করে না। এ সরকার গোয়েন্দা বাহিনীকে ব্যবহার করে বিএনপির বিরুদ্ধে যত ধরনের প্রচার চালানো যায় তা করছে।
তিনি আরও বলেন, জনগনের যে গণতান্ত্রিক আন্দোলন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন, তার অধিকারের জন্য, এ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে, সেই আন্দোলনকে ভিন্নখাতে নিয়ে যেতে এই অপপ্রচার ও অপকর্ম। তথ্যমন্ত্রিকে বলবো এ জাতীয় প্রচারণা থেকে বিরত থাকুন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে তারাই হরতাল করেছিল। যখনই তারা ক্ষমতায় আসে তখন তারা তাদের স্বরূপে আবির্ভূত হয়। ৭৫ সালে তারা বাকশাল করেছিল, একই ভাবে তারা ভিন্ন চেহারায় একই শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে চায়। তারা নির্বাচন ব্যবস্থাকে ইতিমধ্যে ধ্বংস করে দিয়ে তারা আবারও ক্ষমতায় যেতে চায়। তবে এবার সেটা হবে না, জনগন জেগে উঠেছে। জনগন তাদের ভোট নিজে দিতে চায়।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, জেলা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা তৈমুর রহমান, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো: জাহিদুর রহমান জাহিদ, জেলা বিএনপির সহ সভাপতি ওবায়দুল্লাহ মাসুদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলীসহ জেলা বিএনপি, পৌর বিএনপি, থানা বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবকদল, ছাত্রদলের বিভিন্ন নেতা-কর্মী ও সমর্থকগণ।