বদরুদ্দোজা প্রধান, পঞ্চগড় প্রতিনিধিঃ
পঞ্চগড়ে পলেটেকনিক ইনস্টিটিটিউট স্থাপনের জন্য জমি অধিগ্রহণে নায্য মুল্য থেকে বঞ্চিত হয়েছেন জমির মালিকেরা। অভিযোগ উঠেছে শহরের উপকন্ঠে এবং হাইওয়ে রাস্তার পাশে এসব জমির অবস্থান হলেও মুল্য দেয়া হচ্ছে গ্রামীণ কৃষির জমির দরে। হাসপাতাল স্থাপনের ইচ্ছে থাকলেও একজন জমির মালিকের কাছ থেকে প্রায় জোর করেই জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। তবে জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা বলছে ভূমি অধিগ্রহণ আইন মেনে পলেটেকনিক ইন্সটিটিউটের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।
জমির মালিক ও ভূমি অধিগ্রহণ শাখা সূত্রে জানাগেছে, সারাদেশে ২৩ টি পলেটেকনিক ইন্সটিটিউট স্থাপন’ প্রকল্পের আওতায় পঞ্চগড় জেলার ট্রাক টার্মিনালের পাশে আরাজি শিকারপুর মৌজায় ৬ খতিয়ান ভুক্ত প্রায় ৫ একর জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় জেলা প্রশাসন। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে সংক্রান্ত চিঠিও দেয়া হয় তাদের। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি স্থাপনের জন্য স্থানীয়রা জমি প্রদানে সম্মতিও প্রদান করে। কিন্তু জমির মুল্য ও ক্ষতিপুরণের চিঠি পেয়ে তারা হতাশ হয়। তারা জানায় জমিগুলোর অবস্থান জেলা শহরের মধ্যে।ঢাকা-বাংলাবান্ধা মহাসড়কের পাশে। রাস্তার দুই পাশেই রয়েছে সরকারি বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। ওই জমিগুলোতে আখ, তেজপাতা, ধান, গম ছাড়াও নানা ধরণের ফল ফসলের আবাদ হয়। কিন্তু ওই জমিগুলোকে লাপতিত এবং ছনবাড়ি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বর্তমানে ওই এলাকার প্রতি শতক জমি আড়াই লাখ থেকে ৩ লাখ টাকা দরে বেচা কেনা চলছে। শহরের কাছে এবং হাইওয়ে সড়কের পাশে হওয়ায় নুরুল হক নামে এক জমির মালিক ও তার ছেলে ডা. কামাল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান তাদের নিজস্ব ৫ বিঘা জমিতে একটি হাসপাতাল স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। তারা তাদের হাসপাতালের জন্য বরাদ্দকৃত জমি অধিগ্রহণ না করার জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদনও করে। নুরল হক জানান, আমার ছেলে ডাক্তার। এলাকার মানুষকে চিকিৎসা সহায়তা দেয়ার জন্য আমরা আমাদের জমিতে হাসপাতাল গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু সরকার পলেটেকনিক ইন্সটিটিউট স্থাপনের জন্য আমাদের কাছে জমি চাইলে আমরা আমাদের কথা জানিয়েছি। কিন্তু তা আমলে নেয়া হয়নি। বরং পানির দরে আমাদের জমি অধিগ্রহণ করেছে। আমরা এখনো জমির মুল্য গ্রহণ করিনি। আদালতের আশ্রয় নিয়েছি। অপর জমির মালিক খোলাপাড়া এলাকার রিপন জানান, আরাজী শিকারপুর মৌজাটি অনেক বড়। তাই গ্রাম এলাকার জমির মুল্য কম। ওই জমিগুলোর বিক্রীত মুল্যের গড় হিসাবে আমাদেরকে মাত্র ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা শতক হিসেবে প্রদান করা হচ্ছে। অথচ আরাজী গাইঘাটা এখান থেকে ২ কিলোমিটার দুরে। ওই এলাকায বিসিআআইসি’র বাফার গুদাম প্রতিষ্ঠার জন্য ৪ গুণ বেশী টাকা দিয়ে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এটা অন্যায়। ২০২৩ সালে আমরা মামলা করেছি।
এদিকে জমি অধিগ্রহণ শাখা বলছে, স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল আইন ২০১৭ এর ৯ ধারা মোতাবেক জমির বাজার মুল্য নির্ধারনের ক্ষেত্রে স্থাবর সম্পত্তির পারিপার্শিক এলাকার সমশ্রেণী ও সমান সুবিধাযুক্ত ৪ ধারার অধীন নোটিশ জারী পুর্বের ১২ মাসের গড় মুল্য নির্ধারিত নিয়ম হিসাব করে জমির মুল্য নির্ধারণের বিধান রয়েছে। এই আইন অনুযায়ি জমির মুল্য নির্ধারন করা হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা এ কে এম রায়হানুর রহমান জানান, পলেটেকনিক ইন্সটিটিউট স্থাপনের জন্য জমি অধিগ্রহণ আইন মেনে অধিগ্রহণ করা হয়েছে। আমরা ১২ মাসের ৪০ টি জমি কেনা বেচার দলিল পর্যবেক্ষণ করে ওইসব জমির মুল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজার মুল্যের ২০০ গুণ বেশী দাম দেয়া হচ্ছে । জমির মালিকেরা আদালতে আরবিটেশন মামলা করেছে। আমরা আদালতের রায়ের অপেক্ষায় রয়েছি।